মাশরুম (Mushroom) ছত্রাকজাতীয় পরজীবী উদ্ভিদ যা দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো। তবে, এই মাশরুম ছত্রাক হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু এবং এর বাজার চাহিদাও ব্যাপক |মাশরুম চাষে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবতন হয় এবং বহু বেকার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থানের সুবিধা হয় | কারণ, এই মাশরুম সহজেই চাষ করা সম্ভব | বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ওষুধিগুণসম্পন্ন একটি উৎকৃষ্ট সবজি।
মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক কেননা মাশরুম চাষ (Mushroom Farming) করতে আবাদি কোন জমির প্রয়োজন হয় না। মাশরুমে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, সি, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস ও স্বল্প মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও লৌহ জাতীয় পদার্থ রয়েছে। লৌহ কম থাকলেও সহজলভ্য অবস্থায় থাকে বলে মাশরুম রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।
চাষযোগ্য মাশরুমের জাত(Varieties):
প্রকৃতিতে মাশরুমের কয়েক হাজার জাত রয়েছে যার মধ্যে ৮-১০টি জাতের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। এদেশের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আদ্রতা মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এদেশে, চাষপযোগী মাশরুমের জাতগুলো হলো-
১) ঝিনুক মাশরুম (Oyster mushroom)
২) দুধ মাশরুম (Milky mushroom)
৩) কান মাশরুম (Wood ear mushroom)
আরও পড়ুন - Mixed Fish farming: জেনে নিন পুকুরে একইসাথে মলা ও তেলাপিয়া মাছের চাষ পদ্ধতি
৪) বোতাম মাশরুম(Button mushroom)
৫) তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম(Heat tolerate button mushroom)
৬) শিতাকে মাশরুম(Shitake mushroom)
৭ ) খড় মাশরুম(Paddy straw mushroom)
খাবার উপযোগী মাশরুম:
স্ট্র মাশরুম:
ধানের খড়, শিমুল তুলা, ছোলার বেসন ও চালের কুড়া ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে সাধারণত স্ট্র মাশরুম চাষ করা হয়ে থাকে। এ জাতের মাশরুম মূলত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা হয়।
অয়েস্টার মাশরুম:
এই জাতের মাশরুম সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে। সারাবছরই এই মাশরুম চাষ করা যায় তবে শীত ও বর্ষাকালে এর ভালো ফলন হয়ে থাকে। অয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম খুব অল্প জায়গার সহজেই চাষ করা যায়।
ইয়ার মাশরুম:
সাধারণত বর্ষাকালে প্রাকৃতিকভাবে আম গাছে ইয়ার মাশরুম পাওয়া যায়। ইয়ার মাশরুম দেখতে অনেকটা কালচে রঙের। এই মাশরুম সারাবছর চাষ করা গেলেও মূলত বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়ে থাকে।
বাটন মাশরুম:
বর্তমানে এই মাশরুমের চাষ শুরু হয়েছে। সাধারণ মাশরুম উদ্যোক্তা ও মাশরুম চাষিরা প্রতি শীতে অর্থাৎ নভেম্বর থাকে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচুর বাটন মাশরুম উৎপাদন করতে পারবে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতির কিছু টিপস(Important Tips):
পরিমাণমত শুকনো পরিষ্কার ধানের খড় সংগ্রহ করে জলভর্তি ড্রামের মধ্যে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে ভিজিয়ে নিন।
ভেজানো খড়গুলো একটা ঝুড়িতে রেখে অতিরিক্ত জল বের হতে দিন।
এবার ভেজা খড়গুলো একটা কাগজের ওপর স্তূপ করে রেখে তার ওপর আরেকটি কাগজ দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন।
পরিমাণমত শিমুল তুলা কিংবা মিলের পরিত্যক্ত তুলা একটি পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন।
যে ঘরে বা স্থানে মাশরুম চাষ করা হবে সে জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মেঝেতে পলিথিন বিছিয়ে দিন।
১ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া এবং ৩০ সি.মি. উঁচু তলাবিহীন কাঠের বাক্সটি পলিথিন বিছানো কাগজের ওপর রাখুন।
এখন কাঠের বাক্সর মধ্যে সমানভাবে ভেজা খড় একটু চাপ দিয়ে সাজাতে থাকুন যেন বিছানো খড়ের স্তর ৮-১০ সে.মি. পুরু বা উঁচু হয়।
চারদিকে খড়ের স্তূপের কিনার থেকে ৫ সে.মি. ছেড়ে ১ সে.মি. পুরু ও ৫ সে.মি. চওড়া করে ভেজা তুলা ঠিকমত বিছিয়ে দিন।
বীজ ছিটানোর পর একই নিয়মে আবার ৮-১০ সে.মি. করে খড় বিছিয়ে ২য় স্তর তৈরি করে একইভাবে তুলো বিছিয়ে তাতে মাশরুম বীজ ছড়িয়ে দিন।
এরপর একইভাবে ৩য় স্তর তৈরি হলে বেডের উপরের সব অংশে তুলা ছড়িয়ে তার ওপর মাশরুম বীজ বুনে আবার হালকাভাবে সামান্য খড় ছিটানোর পর বাক্সটি ভরে গেলে সাবধানে তুলে নিন।
একই নিয়মে পাশাপাশি ১০ সে.মি. ফাঁকে ফাঁকে একটির পর একটি বেড প্রয়োজনমত বসাতে থাকুন।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাজানো শেষ হলে বেডগুলো পলিথিন কাগজ অথবা চট দিয়ে ঢেকে দিন।
রোগ ও প্রতিকার(Disease management system):
মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা দেয় | এজন্য ম্যালাথিয়ন (০.১%) স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া ফর্মালিডিহাইডে (৪%) তুলা ভিজিয়ে সানস্ট্রেটে ঘসে দিলে সবুজ বাদামী বা নীল মোল্ড দূর হবে।
আরও পড়ুন - Flower Farming: ফুল চাষে এই বিষয়গুলি না মানলে, লাভের বদলে হবে ক্ষতি
Share your comments