অর্কিড (Orchid) ফুলের পরিচিতি ও খ্যাতি বিশ্বজোড়া | রঙিন এই ফুল প্রত্যেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয় | উদ্ভিদ জগতে অর্কিড একটি বিশাল পরিবার যার প্রায় ৩০,০০০ এরও অধিক প্রজাতি রয়েছে | শুধুমাত্র অর্কিড বিক্রি করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন থাইল্যান্ডের কৃষকরা | যা রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এবং এই ফুলের চাহিদাও বেশি | বর্তমানে, এ রাজ্যেও অর্কিড চাষ হচ্ছে এবং এই চাষে কৃষকরা লাভবান হবে বিপুলভাবে | শুধুমাত্র অর্কিড চাষ করে মাসে ২০ হাজার টাকারও বেশি আয় করা সম্ভব |
মাটি ও জলবায়ু(Soil and climate):
প্রধানত, ছায়াযুক্ত সুনিষ্কাশিত কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে চাষ করা যায় অর্কিড | প্রখর সূর্যালোকে এই ফুল ভালোভাবে জন্মাতে পারেনা | বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য সেডনেট দিয়ে ছায়ার বাবাঅস্থা করতে হবে | তাহলে, ৪০-৬০% সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারবে | টবে চাষের ক্ষেত্রে বড় গাছের নিচে এ ফুলের চাষ করা যেতে পারে | এ রাজ্যে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে একাধিক নার্সারিতে অর্কিড চাষ করা হয়েছে | প্রায় ৩০০ অর্কিড গাছ থেকে প্রচুর ফুল মিলেছে চাষীভাইদের| এই বাণিজ্যিক লাভ দেখেই অনেকেই অর্কিড চাষে যুক্ত হয়েছে
চারা উৎপাদন:
সাধারণত, গাছের ফুল বা ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে সাকার বের হয় | এই সাকারগুলি গাছে লাগানো অবস্থায় যখন শেকড় বের হয়, তখনি এগুলি গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো হয় | এছাড়াও, বিশেষ প্রযুক্তির ব্যাবহারে কেটে ফেলা ফ্লাওয়ার স্টিকের ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন -Green Malta Farming: গ্রিন মাল্টা চাষ করে ৬ লাখ টাকার ওপরে আয় কৃষক আব্দুর রহমানের
জমি তৈরী:
বিভাজন প্রক্রিয়ায় গাছ থেকে সাকার সংগ্রহ করে বা টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চারা তৈরি করে জমিতে লাগাতে হয়। এই ধরণের চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটি প্রয়োজনীয় | ধানের তুষ, নারকেল ছোবড়া এবং পচা গোবর বা কম্পোস্ট মাটির সাথে মিশিয়ে জমি তৈরী করতে হবে |
রোপণ(Planting):
সাকার লাগানোর সময় সারি থেকে সারি ৩০-৪০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয় | সাকার লাগানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, শেকড়গুলো পুরোপুরো যেন মাটির নিচে থাকে |
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি- র ২০:২০:২০ মিশ্রণ সারের জন্য উত্তম | এই মিশ্রণ জলের মধ্যে গুলিয়ে সপ্তাহে একদিন বা ২ দিন গাছে স্প্রে করতে হবে | স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, গাছের পাতা যেন ভালোভাবে ভিজে যায় |
সেচ:
মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমানে রস থাকাকালীন হালকা সেচ দিতে হবে | তাহলে সাকারগুলো মাটিতে লেগে থাকবে | এর পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা অনুযায়ী সেচ দিতে হবে | এছাড়াও, ফুল চাষের জন্য বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ ডিগ্রি বজায় রাখতে হয় | এই জন্য, স্প্রিংকলার দিয়ে মাঝে মাঝে জল স্প্রে করতে হবে | অর্কিড চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হলেও জমিতে জল জমা এ ফসলের জন্য খুবই ক্ষতিকর |
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
সাধারণত, ফুলটিতে কোনো পোকা বা রোগের আক্রমণ দেখা যায়না | তবে, ভাইরাস আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে | ফুলের কুঁড়ির পোকা দমনের জন্য যেকোনো সিস্টেমিক কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা যেতে পারে | তবে, রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহারও বেশ ফলদায়ক |
ফুল কাটার নিয়ম:
সাকার থেকে গাছ লাগানোর একবছরের মধ্যেই ফুল আসতে থাকে | মূলত ফুল আসার সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস। অপরদিকে টিস্যু কালচার থেকে পাওয়া চারা থেকে ফুল পেতে কমপক্ষে আঠারো মাস সময় লাগে। বাণিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে স্টিকের এক বা দুটি ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কাটতে হবে | বাগানে বা টবে সৌখিন চাষের ক্ষেত্রে ফুল কাটার প্রয়োজন থাকেনা, এ ক্ষেত্রে গাছে প্রায় ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত ফুল টিকে থাকে।
আরও পড়ুন - Green House Farming: গ্রিন হাউজ চাষ পদ্ধতির বিশেষত্ব ও সুবিধা
Share your comments