পুষ্টি ও স্বাদের দিক থেকে কচু একটি অন্যতম জনপ্রিয় সবজি | বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর সাথে সাথে প্রচুর লৌহ যোগান দিয়ে থাকে কচু। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই পানি কচু চাষ করা যায়। এ কচু দাঁড়ানো জল সহ্য করতে পারে বলে একে পানি কচু বলে। বাংলাদেশে বিভিন্ন নাম রয়েছে পানিকচুর যেমন- জাতকচু, বাঁশকচু, নারিকেলকচু ইত্যাদি। আধুনিক পদ্ধতিতে পানি কচু চাষ (Pani Kachu farming) করে আর্থিক লাভবান হওয়া যায় । দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা পানি কচুর চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন |
মাটি(Soil):
কচু চাষের জন্য মাঝারি নিচু জমি থেকে উচু জমি ভাল। যেখানে জল জমে থাকে অথবা বৃষ্টির জল ধরে রাখা যায় এমন জমি পানি কচু চাষের জন্য ভাল। এঁটেল মাটি ও পলি দো-আঁশ মাটি পানি কচু চাষের জন্য উত্তম।
জাত:
পানি কচুর কিছু উল্লেখযোগ্য চাষের জাতসমূহ হলো, বারি পানি কচু-১ (লতিরাজ), বারি পানি কচু-২, বারি পানি কচু-৩, লতিরাজ (উফশী) ও জয়পুরহাঠের স্থানীয় জাত। বারি কচুর জাতগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে সে গুলো হলো লতি গোলাকার, অপেক্ষাকৃত মোটা ও গাড় সবুজ রঙের হয়। এ জাত গুলোর কচুতে গলা চুলকায় না সিদ্ধ করলে সমানভাবে সিদ্ধ হয়।
পরিমান:
প্রতি শতক কচুর রোপনের জন্য ১৫০ টি লতা দরকার হয়।
আরও পড়ুন -How to grow spinach at home: বাড়ির টবে সহজেই চাষ করুন পালং শাক
চারা রোপণের দুরত্ব:
সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২ ফুট (৬০সেমি) এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ১.৫ ফুট (৪৫ সেমি)।
রোপন পদ্ধতি:
সাধারণত, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কচু গাছের গোড়া থেকে ছোট ছোট চারা বের হয়। এসব চারার মধ্যে থেকে সতেজ চারা পানি কচু চাষের জন্য বীজ চারা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। পানিকচুর চারা যত কম বয়সের হবে তত ভাল হবে। যে চারার ৪-৬ টি পাতা আছে, সেগুলিকে বীজ চারা হিসাবে নির্বাচিত করতে হবে। চারার উপরের ১/২টি পাতা বাদ দিয়ে বাকি পাতা ও পুরোনো শিকড় ছেঁটে ফেলে দিয়ে চারা রোপণ করতে হবে। চারা তোলার পর রোপণ করতে দেরি হলে চারা ছায়াযুক্ত স্থানে ভেজামাটিতে রেখে দিতে হবে। নির্ধারিত দুরত্বে ৫-৬ সেমি. গভীরে চারা রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
চারা রোপণের সময় জমিতে গোবর ২৫ কেজি, এমওপি ৭৫০ গ্রাম, ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৫০০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম সার প্রতি শতাংশে প্রয়োগ করতে হবে। তবে এলাকা ও মাটির চাহিদা অনুসারে দস্তা ও বোরণ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে । ইউরিয়া সার ২-৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারা রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করা ভাল।
সেচ ও আগাছা দমন:
পানি কচুর গোড়ায় সব সময় পানি ধরে রাখতে হবে এবং দাঁড়ানো পানি মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। চারা বড় হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি দিতে হবে। লতিরাজ কচুর জন্য দাঁড়ানো পানির গভিরতা ৮-১০ সেমি. হতে হবে। জমিতে দেওয়া পানি যদি ৩-৪ বার হয় তাহলে পানি কচুর ফালগুটি সঠিকভাবে মোটা ও লম্বা হয়। জমিতে নিয়মিত আগাছা পরিস্কার করতে হবে। কচুর কাণ্ডের গোড়ায় যে চারা গুলো হবে সেগুলো তুলে ফেলতে হবে। চারা হিসাবে ব্যবহারের জন্য কচুর মাটির নিচের অংশ থেকে যে সকল বের হবে তা থেকে ২/৩ টি চারা রেখে বাকি চারা ছাঁটাই করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
কচু পাতার মোড়ক রোগ দেখা যায় | এ রোগ হলে পাতার উপর বাদামী বা বেগুনি রঙের গোলাকার দাগ দেখা যায়। এসব দাগ পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে বড় আকার ধারণ করে পাতা ঝলসে যায়। পরে কন্দে ও কচুতে বিস্তার লাভ করে। এ রোগ উচ্চ তাপমাত্রা, আর্দ্র আবহাওয়া ও পরপর ৩-৪ দিন বৃষ্টি থাকলে খুব বেড়ে যায়।
ফসল সংগ্রহ:
বিঘা প্রতি পানি কচু ৩-৫ টন ও লতি ১.৫-২ টন উৎপাদন হয়ে থাকে। পানি কচুর চারা রোপনের ৫০-৭৫ দিনের মধ্যে প্রথম কচুর লতি তোলা হয়। লতি ১০-১৫ দিন পরপর সংগ্রহ করা যায়। ৭ মাস পর্যন্ত লতি সংগ্রহ করা যায়। চারা রোপণের ১৪০-১৮০ দিনের মধ্যে পানি কচু বাজার জাত করা যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Pudina Farming: ছাদ বাগানে পুদিনা পাতার সহজ চাষ পদ্ধতি
Share your comments