দেশের সর্বত্রই এ সবজিকে আমরা দেখতে পাই। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তার ধারে এবং বসত বাড়ির আঙ্গিনায় যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে এ বৃক্ষটি। সজিনা গাছের কাঠ অত্যন্ত নরম, বাকল আঠাযুক্ত ও কর্কি। সজিনা তিন ধরনের নীল, শ্বেত ও রক্ত সজিনা। ড্রামস্টিক, মরিঙ্গাসহ দেশ-বিদেশে সজিনার বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয় যা মূলত সজনে ডাঁটা নামে পরিচিত।
সংগ্রহ ও ফলন (Harvesting and yield) -
শাখা কলম থেকে প্রাপ্ত গাছ ১ বছর পরেই সজিনা দেয়া শুরু করে। সজিনা যখন কচি অবস্থা থেকে কিছু শক্ত হতে শুরু করে তখন থেকে সজিনা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। প্রথম ২ বছর সাধারণত ফলন কিছুটা কম হয় (৮০-৯০ টি সজিনা/গাছ/বছর)। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সজিনার পরিমাণও বাড়তে থাকে। একটি বয়স্ক গাছ (৪-৫ বছর) থেকে বছরে ৫০০-৬০০টি সজিনা পাওয়া যায়। সাধারণত ২০টি ডাঁটায় ১ কেজি হয়। বড় ও মাঝারি ধরনের একটি গাছে তিন থেকে চার মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। সজনে সাধারণত মার্চ-মে এর মধ্যে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু নাজনে সারা বছরই গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং গাছ লাগানোর ৬ মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। সজিনা গাছ থেকে ২-৩ মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায় এবং প্রজাতিভেদে প্রত্যেক গাছে ২৫০-৪০০ টি সজিনা পাওয়া যায়।
কীটপতঙ্গ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ (Pest and disease control) -
সজনে গাছ তুলনামূলক কীটপতঙ্গ ও রোগ সহনশীলভাবে বেড়ে ওঠে। তবে মাঝে মাঝে রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়। যেমন জলাবদ্ধ মাটিতে শিকড় পচা রোগ দেখা দিতে পারে এর কারণ ডিপ্লোডিয়া। কীট পতঙ্গ শুষ্ক ও ঠান্ডায় বেশি আক্রমণ করে। কীট পতঙ্গ দ্বারা গাছে হলুদ রোগ দেখা যায়। কীটপতঙ্গের মধ্যে শুঁয়োপোকার প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা যায়, সজনে গাছে যা পাতা খেয়ে ফেলে এবং গাছের ছাল -এরও ক্ষতি করে। এই শুঁয়োপোকা দমনের জন্য ২ গ্রাম কারবারাইল ৫০ ডাবলু.পি ১ লিটার জলে গুলে প্রয়োগ করতে হবে।
পুষ্টি ও ঔষধী গুণ বিবেচনায় এই গাছকে বাড়ির আঙ্গিনায় একটি মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ বলা চলে। স্বাদে ও গুনে ভরপুর এ সবজিটির প্রতি আমদের সকলের আগ্রহ থাকলেও এর চাষাবাদের প্রতি আমদের অনাগ্রহের কথা অস্বীকার করা যায়না। তবে এ সবজি চাষে যদি আমরা একটু মনোযোগী হই ,অর্থাৎ এর বানিজ্যিক উৎপাদন সন্বদ্ধে চিন্তা করি তবে অন্যান্য যে কোনো সবজি উৎপাদনের থেকে এটি লাভজনক। কারণ অন্যান্য সবজির মত এর উৎপাদনে তেমন ঝুঁকি নেই ও খরচও কম। গরমে সজনের ডাঁটা দিয়ে পাতলা ঝোল বা শুক্ত শরীরের পক্ষে উপকারী। কিন্তু বাজারে সজনের ডাঁটার দাম চড়া। তাই কেনাকেনির মধ্যে না গিয়ে নিজের বাড়ির চৌহদ্দিতেই লাগিয়ে ফেলুন সজনে গাছ।
আরও পড়ুন - বহুবিধ গুণসম্পন্ন সজিনা, পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব, জেনে নিন সজিনার উপকারিতা সম্পর্কে
বৃক্ষ জাতীয় এই গাছ লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনও জমির দরকার হয় না। বাড়ির আনাচে-কানাচে, জলাশয়ের ধারে, রাস্তার দু’পাশে উর্বর হোক বা অনুর্বর—একটু জায়গাতেই পুরনো গাছের ডাল কেটে লাগিয়ে দিন। বিশেষ যত্নও নিতে হবে না। গাছের গোড়ায় জল দেওয়া, ছাগল বা গবাদি পশু চারা খেয়ে গেল কি না, সেদিকে নজর রাখা শুধু এই সামান্য পরিচর্যার প্রয়োজন। অনুকূল আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন পাওয়া যায়, যা বাড়ির প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করলে কৃষক বন্ধুরা অত্যন্ত লাভবান হবেন।
আরও পড়ুন - সজিনার চাষ - উন্নত জাত, রোপণ, সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা পদ্ধতি
Share your comments