আনারস একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anarus comosus. | পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থানেই আনারস চাষ (Pineapple cultivation) করা হয়। আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আনারস বারো মাস ধরেই লাগানো যায়। যদিও উত্তরবঙ্গে আশ্বিন-কার্তিক মাসে লাগালে ভাল। দক্ষিণবঙ্গে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। অনেকে পৌষ-মাঘ মাসেও আনারস লাগায়। ফল আসে, কী তেউড় থেকে চারা লাগিয়েছেন, তার ভিত্তিতে।
মাটি (Soil):
দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
তেউড় নির্বাচন:
আনারসের বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা ১ সপ্তাহের বেশি থাকে না। তাই অঙ্গজ জনন প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়িক ভাবে আনারস চাষ করা হয়। তেউড় ফলের উপরিভাগ থেকে (ক্রাউন সাকার) হলে গাছ লাগানোর ২০-২২ মাস পরে ফল মেলে। এই তেউড়ে ফল ছোট হয়। শিকড়ের কাছাকাছি থাকা তেউড় (গ্রাউন্ড সাকার) থেকে ফল ভাল হয় না। ফল কাটার ১ মাস পর পড়ে থাকা কাণ্ড থেকে যে তেউড় (স্টেম সাকার) সংগ্রহ হয়, সেটিতে ১৫ মাস পর তুলনায় বড় ও ওজনের ফল পাওয়া যায়। তবে, সবচেয়ে ভাল হয় ফলের বোঁটা থেকে সংগ্রহ করলে (স্লিপস)। এটি রোপণের ১৮-২০ মাস পর উৎকৃষ্ট গুণমানের, বড় ফল পাওয়া যায়।
চারা তৈরি:
বিভিন্ন তেউড় থেকে বিভিন্ন সময়ে ফল পাওয়া যায়। তাই বাণিজ্যিক ভাবে আনারস চাষের সময় একই ধরনের তেউড় থেকে চারা রোপণ করতে হবে। স্লিপস থেকে করতে চাইলে, ফলটা কেটে নিয়ে গাছ এক মাস রেখে দিন জমিতে। বৃন্ত থেকে যে তেউড়গুলো বেরোবে, সেগুলি কেটে নিয়ে শোধন করতে হবে। এতে গোড়াপচা রোগ কম হয়। প্রতি লিটার জলে কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% ডব্লিউপি (ব্লাইটক্স/ ব্লু কপার) চার গ্রাম গুলে ২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর কার্বেন্ডাজিম (১ গ্রাম প্রতি লিটার) দ্রবণে খড় ভিজিয়ে তার উপর চারাগুলো রেখে দিতে হবে সপ্তাহ দুয়েক। শিকড় সুগঠিত হলে রোপণ করুন জমিতে।
জমি তৈরী:
জমিতে জৈব পদার্থ কম থাকলে প্রতি একরে চার থেকে ৬ টন জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরির পর ‘বেড’ তৈরি করে সারিতে চারা লাগাতে হবে |
রোপণ (Plantation):
উত্তরবঙ্গের জমিতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ২৫ সেমি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বেশি বৃষ্টি হয় এমন জায়গায় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সেমি ও চারা থেকে চারা ৩০ সেমি দূরত্বে লাগালে ভাল। বেড থেকে বেডের দূরত্ব ৯০ সেমি। আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য উচ্চ ঘনত্বে (২৫x৩৫x৯০ সেমি) চারা রোপণ করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
গাছ প্রতি ১৬ গ্রাম নাইট্রোজেন, ৪ গ্রাম ফসফরাস, ১৬ গ্রাম পটাশ অর্থাৎ একর প্রতি নাইট্রোজেন ৩২০ কেজি, ফসফরাস ৮০ কেজি, পটাশ ৩২০ কেজি প্রয়োগ করে (এন:পি:কে অনুপাত ৪:১:৪) বেশি ফলন পাওয়া যায়। ২:১:২ অনুপাতে ফলন কম হয়। গাছে ফুল আসার কমপক্ষে দু’মাস আগে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। বেশি নাইট্রোজেন গাছের ‘ভেজিটেটিভ’ বৃদ্ধি ঘটায়, ফুল ও ফল কম হয়। গরমে ৪-৯%, বর্ষায় ১০% ইউরিয়া স্প্রে করলে ফলন বাড়ে।
জলসেচ:
আনারস জমা জল সহ্য করতে পারে না। তাই হালকা জলসেচ দিতে হবে। সাধারণত ২০-২৫ দিন অন্তর জলসেচ দিলেই যথেষ্ট। ফল আসার সময় (ফাল্গুন- বৈশাখ) ৭-১০ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া উচিত।
আগাছা দমন:
আগাছা হলে শুকনো খড় বা পলিথিন দিয়ে মালচিং করতে পারেন। আগাছা খুব বেশি হলে ডাইইউরন ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন দেখে দুপুরবেলা গ্লাইফসেট ৪১% এসএল ৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে অবাঞ্চিত ঘাসের গুটি নষ্ট হয়ে যায় |
আরও পড়ুন - Onion Farming: স্বল্প ব্যয়ে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
ফল সংগ্রহ:
সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস পাকে। পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Orchid Farming: জেনে নিন অর্কিড ফুল চাষ পদ্ধতি ও রোগদমন ব্যবস্থা
Share your comments