আলুর জলদি ধ্বসা ও ছত্রাক জনিত, ব্যাকটিরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ এবং তার প্রতিকার (Potato fungal, bacterial disease and its cure)

(Potato fungal, bacterial disease and its cure) আলটারনেরিয়া সোলানি নামক ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। আক্রমণের প্রথম অবস্থায় পাতায় ছোপ ছোপ ছড়ানো ছিটান বাদামী দাগ দেখা যায়। সাধারণতঃ গাছের নীচের পাতাতে এই দাগ বেশী দেখা যায় এবং উপরের পাতাতে এই রোগের লক্ষণ কম দেখা যায়।

KJ Staff
KJ Staff
Potato bacterial disease (Image Credit - Google)

অর্থকরী ফসল আলুর চাষে নাবিধ্বসা রোগের কারণে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় প্রতি বছরই আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন অনেক চাষি। এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আর্থিক ক্ষেত্রে অনেকটাই লাভ করবেন চাষিভাইরা।

ঘন কুয়াশা বা হাল্কা বৃষ্টির ফলে বাতাসে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এবং আবহাওয়া স্যাতস্যাতে হলে আলুর জমিতে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। এই রোগ কিভাবে প্রতিকার করবেন, সেই সম্পর্কে আজ আমরা আপনাকে তথ্য দেব।

জলদি ধ্বসা -

আলটারনেরিয়া সোলানি নামক ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। আক্রমণের প্রথম অবস্থায় পাতায় ছোপ  ছোপ ছড়ানো ছিটান বাদামী দাগ দেখা যায়। সাধারণতঃ গাছের নীচের পাতাতে এই দাগ বেশী দেখা যায় এবং উপরের পাতাতে এই রোগের লক্ষণ কম দেখা যায়।

পাতার বাদামী দাগ সূর্যালোকের দিকে রেখে দেখলে গোলাকার রিং দেখা যায়। বাদামী দাগগুলি একে অন্যর সঙ্গে মিশে পাতা ঝলসানো লক্ষণ দেখা যায়।

প্রতিকার -

গাছে রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ম্যানকোজেব ২.৫ গ্রাম বা ক্লোরোথ্যালনিল ২ গ্রাম বা কার্বেন্ডাজিম + ম্যানকোজেব ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

ছত্রাক জনিত ঢলে পড়া রোগ -

প্রথম দিকে গাছের উপরের কিছু পাতাতে সামান্য ঢলে পড়া বা নেতিয়ে পড়া লক্ষণ দেখা যায়। দু একদিনের মধ্যেই পুর গাছটি নেতিয়ে বা ঢলে পড়ে। এই রোগ শুরু হয় বীজ আলু থেকেই এবং আলুর শাসালো অংশ কুঁচকে যায় এবং পচে যায়। এই রোগে মাটির উপরের স্তরে গাছের কান্ডে বাদামী কালো রঙের পচন দেখা যায়।

প্রতিকার -

এই রোগ দমনের জন্য রোগমুক্ত ও সুস্থ বীজ আলু লাগাতে হবে। জমিতে রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ক্লোরোথ্যালোনিল ২ গ্রাম + থায়ফ্যানেট মিথাইল ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

ব্যাকটিরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ -

ব্যাকটিরিয়ার কারণেও গাছের উপরের দিকে পাতা ঢলে পড়ে। আক্রান্ত গাছের কান্ড বা গোড়ার পচন ধরে পাতার জাইলেম কলা বাদামী হয়ে যায়। আক্রান্ত গাছের কান্ড বা শিকড়ের কিছুটা অংশ টুকরো করে কেটে একটি কাচের পাত্রে পরিষ্কার জল নিয়ে তার মধ্যে ফেললে কিছুক্ষণের মধ্যে জলের ভেতর সাদা ধোঁয়ার মত রস নির্গত হয়।

প্রতিকার -

গ্রীষ্মকালে গভীর ভাবে চাষ দিতে হবে। একই গোত্রীয় শস্য যেমন টম্যাটো, বেগুন, লঙ্কা প্রভৃতির সঙ্গে শস্য পর্যায় অবলম্বন করা চলবে না। মাটিতে এই রোগ দেখা মাত্র গাছের গোড়া শুদ্ধ তুলে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হবে। আলু বসানোর পূর্বে বিঘা প্রতি ৩-৪ কেজি ব্লিচিং পাউডার শেষ চাষের আগে মাটিতে মেশাতে হবে। রোগের আক্রমণ হলে স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন ১.৫ গ্রাম ১০ লিটার জলে গুলে  স্প্ৰে করতে হবে।

দেদো রোগ বা স্ক্যাব -

স্ট্রেপ্টোমাইসিস স্কোবিস নামক জীবাণুর জন্য এই রোগ হয়। আক্রান্ত আলু বীজ ও মাটির কারণে মূলতঃ এই সমস্যা হয়। আলুর গায়ে গোলাকার বাদামী খসখসে দাগ পড়ে ফলে বাজার দর কমে যায়। অম্ল মাটিতে এই রোগ বেশী দেখা যায়।

প্রতিকার -

সুস্থ, নীরোগ বীজ লাগাতে হবে। আলু বীজ ট্রাইকোডারমা ভিরিডি দিয়ে শোধন করে লাগাতে হবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৫ গ্রাম হারে। প্রচুর পরিমাণে জৈবসার ও জীবাণুসার প্রয়োগ করতে হবে। মাটির অম্লত্ব কমানোর জন্য জমিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

ব্ল্যাক স্কার্ফ বা কালো খুসকি -

রাইজোকটনিয়া সোলানি নামক ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। এই রোগটি বীজবাহিত।  আক্রান্ত গাছের আলুর গায়ে খুসকির মত কালো অংশ দেখা যায়। আক্রান্ত আলু থেকে বের হওয়া কলের মাথা কালো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মাঠে গাছের সংখ্যা অত্যন্ত কমে যায় এবং ফলন মার খায়।

প্রতিকার -

নীরোগ বীজ ভালোভাবে শোধন করে লাগাতে হবে। প্রতি কুইন্ট্যাল বীজ শোধনের জন্য ৫০ লিটার জলে ম্যানকোজেব ২৫০ গ্রাম বা ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৫০০ গ্রাম বা কর্বোক্সিন + থাইরাস ২০০ গ্রাম মিশিয়ে ২-৩ বারে ঐ বীজ শোধন করে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জমিতে লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন - পশ্চিমবঙ্গে নগদ ফসল আলু চাষে সেচ প্রদান, অন্তবর্তী পরিচর্যা এবং আগাছা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Weed Control Methods For Cash Crop Potato)

মোজাইক বা কুঁটে রোগ -

আক্রান্ত গাছের ডগার দিকের পাতার শিরার অন্তবর্তী স্থানে সবুজ এবং হালকা হলুদ রঙের  সংমিশ্রণে তৈরী ছিটছিটে দাগ দেখা যায়। আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায়। তাছাড়া, আক্রান্ত গাছ সুস্থ গাছের তুলনায় অনেক ছোট হয়ে যায়।

প্রতিকার -

ভাইরাস আক্রান্ত গাছ দেখামাত্রই তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।তাছাড়া জাবপোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরপ্রিড ৫ মিলি প্রতি ১৫ লিটার জলে বা এসিফেট ০.৭৫ মিলি বা অ্যাসিটামিপ্রিড ১ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন - বাড়িতে স্ট্রবেরি ফল চাষ করতে চান? রইল সম্পূর্ণ নির্দেশিকা (Grow Strawberry Fruit At Home)

Published On: 20 December 2020, 06:08 PM English Summary: Potato blight and fungal, bacterial blight and its cure

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters