লাল শাক একটি অতি পরিচিত শাক। শাকের রঙ গাঢ় লাল হয় বলে এর নাম লাল শাক। এটি খুবই পুষ্টিকর শাক। পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ হওয়ার কারনে ছোট বড় সবাই এটি খুব পছন্দ করে থাকে। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকে। এই নিবন্ধে লাল শাক চাষ নিয়ে সম্পূর্ণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো,
মাটি ও জলবায়ু(Soil & climate):
লাল শাক সাধারনত শীত কালে ভালে হয়। তবে উপযুক্ত সুবিধা থাকলে সারা বছরই এর চাষ করা যায়।প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এটি ভালো জন্মে। তবে দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি লাল শাক চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মাটি একটু উচু হতে হবে। মাটিতে যেন জল না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রোপনের সময়:
প্রায় সারা বছরই লাল শাক চাষ করা যায়। তবে শীতের শুরুতে লাল শাকের ফলন ভালো হয় । ভাদ্র মাস থেকে পেীষ মাস পর্যন্ত লাল শাকের চাষ ভালো হয়।
জমি তৈরি:
লাল শাক চাষের জন্য জমি তৈরি করে নিতে হবে। জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।
বীজ বপন:
বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায় আবার সারিতে ও বপন করা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করলে ভালো হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব হবে ২০ সেমি। বীজ বোনার সময় একটি কাঠি দিয়ে ১৫-২০ সেমি গভীর লাইন টানতে হবে | তারপর সারির মধ্যে বীজ বপন করে মাটি সমান করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন -Alu Bukhara Farming: জেনে নিন আলু বোখারা ফল চাষের পদ্ধতি
সার প্রয়োগ:
গুনগত মান সম্পন্ন ও ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে বেশি জৈব সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়। সার প্রয়োগ করার আগে মাটির ধরন বুঝে নিতে হবে। মাটির ধরন অনুযায়ী সার প্রয়োগ করলে তা ফসলের জন্য ভালো হয়। জৈব সার ব্যবহার করলে তা মাটির গুনাগুন ও পরিবেশ দুইটার জন্যই ভালো হবে। গোবর সার ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া আবজর্না পচা সার ও ব্যবহার করা যেতে পারে তাহলে ও ফলন ভালো হয়। বাড়ির আশে পাশে গর্ত তৈরি করে তাতে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে সার তৈরি করতে হবে।
সারের পরিমান:
গোবর সার প্রতি শতকে ৪০ কেজি ও প্রতি হেক্টরে ১০ টন,ইউরিয়া প্রতি শতকে ৫০০ গ্রাম, প্রতি হেক্টরে ১২৫ কেজি, টিএসপি প্রতি শতকে ৩০০ গ্রাম ও প্রতি হেক্টরে ৭৫ কেজি, এমওপি প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম ও প্রতি হেক্টরে ১০০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরি করার সময় গোবর, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম সম্পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে। এবং ইউরিয়া সার অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া দুই কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে বীজ বপন করার ১০-১৮ দিন পর পর।
সেচ:
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর দরকার হলে জল সেচ দিতে হবে।গাছের গোড়ায় যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থাপনা:
লাল শাকে সাধারনত শুয়া পোকার আক্রমন হয়ে থাকে। এ পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে। এ পোকা দমনে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি বা ইকালাক্স ২৫ ইসি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করে দিতে হবে। লাল শাক গাছে মরিচা রোগ দেখা দেয়। এ রোগ গাছের শিকড় ছাড়া সব জায়গাতেই আক্রমন করে থাকে। এ রোগ আক্রমন করলে পাতার নিচে সাদা বা হলুদ দাগ দেখা যায়। এ রোগ দমন করার জন্য প্রতি লিটার জলের সাথে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম ৪৫ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া, বিভিন্ন রোগ আক্রমন করলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক ও বালাই নাশক স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
সাধারনত লাল শাকের বীজ বপন করার ৩০- ৪০ দিনের মধ্যে লাল শাক খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়। প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি এবং প্রতি হেক্টরে ৫-৬ টন লাল শাক পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন -Wood Apple Farming Method: এই পদ্ধতিতে বেল চাষ করে আপনিও হয়ে উঠুন লাভবান
Share your comments