রাবার গাছের চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ | রাবার গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ficus elastica।বাগান ও ঘর সাজানোর গাছ হিসেবেও রাবার সুপরিচিত। বায়ু শোধন করে পরিবেশকে নির্মল রাখার ক্ষেত্রে রাবার গাছের উপকারিতা দুর্দান্ত | প্রাকৃতিক পরিবেশে রবার গাছ ৫০ ফুটেরও বেশি উঁচু হতে পারে | এটি আসলে বৃক্ষ জাতীয় গাছ, অল্প যত্ন পেলেই এই গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে |
তবে, জেনে নিন রাবার চাষের সহজ পদ্ধতি -
উপযোগী ভূমি, আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত (Climate and soil):
জলবায়ু, আবহাওয়া ও মাটির গঠনের উপর রাবার চাষের সফলতা নির্ভরশীল। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১০০-২০০ মিটার উচ্চতার ভূমি প্রাকৃতিক রাবার চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। মাটির গঠন ৩৫% কাদা ও ৩০% বালি অর্থাৎ বেলে দোঁয়াশ মাটি এই চাষের জন্য উপযুক্ত | মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাংগানিজ ইত্যাদি পদার্থ কম বেশি থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া ভূপৃষ্ট থেকে নীচে অন্ততঃ ১০০সেঃমিঃ পর্যন্ত পাথর স্তর মুক্ত ও জলের স্তর ১০০-১৫০ সেঃমিঃ থাকা উচিত। সারা বছরে গড় বৃষ্টিপাত ২০০-২৫০ সেঃমিঃ এবং গড় তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রী সেঃ হওয়া বাঞ্চনীয়। মাটির পি এইচ রেঞ্জ ৪-৫.৫ এর মধ্যে থাকতে হবে। রাবার চাষ এলাকায় জল জমে থাকতে পারবে না এবং জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
আগাছা দমন (Weed management) :
রাবার চাষের জমি থেকে আগাছা খুব ভালভাবে কেটে পরিষ্কার করতে হবে। আগাছা কাটার কিছুদিন পর আগাছা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এ কাজটি কমপক্ষে দু’বার পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে। আগাছা কাটা ও পোড়ানোর পর অবশিষ্ট ষ্ট্যাম্প ও আগাছা ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। কমপক্ষে ৩ বার গ্লাইফোসেট প্রয়োগ করতে হবে।
বীজতলা তৈরী:
সমতল জমিতে বীজতলা তৈরী করতে হয়। বেডে ২˝- ৩˝ ইঞ্চি পুরু নদীর বালি ব্যবহার করা বেশ ভালো । নদীর বালি না পাওয়ার কারণে মাটি ব্যবহার করা হলে ৬˝ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত সুন্দরভাবে কর্ষন করতে হবে। বীজতলার উপর ২´- ৬˝ হতে ৩´- ০˝ উচ্চতার ছাউনি (শেড) দিতে হবে। বীজের চ্যাপটা পাশ নিচের দিকে ৩/৪ অংশ পাশাপাশি এমনভাবে বেডে (বালিতে) বসাতে হবে যাতে করে বীজের উপরের অংশ দৃশ্যমান থাকে। তাজা/টাটকা বীজ বালিতে বপন করলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে অংকুরিত হয়। মাটিতে বপন করলে ১০-১৪ দিন সময় লাগে। ১৪ দিনের মধ্যে যে সমস্ত বীজ অংকুরিত হয় না, তা পরিত্যাগ করতে হবে। বীজ থেকে যখন ভ্রুনমূল বেরোতে আরম্ভ করবে তখন খুব সতর্কতার সাথে পলিব্যাগ স্থানান্তর করতে হবে। স্থানান্তরের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে অংকুরিত বীজে যেন কোনক্রমেই সূর্যের আলো না লাগে এবং শুক্ষতা না আসে।
সেচ:
রাবার গাছে জল দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা দরকার। বেশি জলে রাবার গাছের শিকড় বা গোড়া পচে যেতে পারে। আবার টবের মাটি একেবারে শুকিয়ে গেলেও এ গাছের ক্ষতি হয়।
আরও পড়ুন - Zinia flower farming: জেনে নিন আকর্ষণীয় জিনিয়া ফুলের চাষ ও পরিচর্যা
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
রাবার গাছের রোগ খুব কমই দেখা যায়। কদাচিত অ্যাফিড, মিলি বাগ, মাইটস, স্কেল ইত্যাদি পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে গাছের আক্রান্ত অংশটা যত্ন সহকারে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে বা রাবিং অ্যালকোহল (আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল)-এ তুলো ভিজিয়ে মুছে ফেলতে হবে। এধরনের পরিস্থিতিতে রাবার গাছে নিম তেল স্প্রে করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Oil Seed Farming: ধানের পর জমিতে তৈলবীজ চাষে বিপুল লাভের সম্ভাবনা
Share your comments