চাষ আবাদে নতুন দিশা দেখাচ্ছে ‘শস্য শ্যামলা’ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র

কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন শস্য বিজ্ঞান, উদ্যানপালন, বীজ উতপাদন, উদ্ভিদ প্রজনন, শস্য সুরক্ষা, মৎস্য চাষ, পশু চিকিৎসা ও পশু পালন ইত্যাদি বিষয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি কৃষকের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার জন্য, ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রকের অধীন ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল জেলা স্তরে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের স্থাপনা। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের ধারণা বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) -এর প্রশংসা পেয়েছে এবং বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলিতে কেভিকে মডেল চালু করার জন্যে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের (আই.সি.এ.আর) সঙ্গে চুক্তি (MOU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার আয়তনের কথা মাথায় রেখে এই জেলায় রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘শস্য শ্যামলা’ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পূর্ণদ্যোমে কাজ শুরু করেছে। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সোনারপুর ব্লকের আড়াপাঁচে অবস্থিত নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ফার্মে।

KJ Staff
KJ Staff

কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন শস্য বিজ্ঞান, উদ্যানপালন, বীজ উতপাদন, উদ্ভিদ প্রজনন, শস্য সুরক্ষা, মৎস্য চাষ, পশু চিকিৎসা ও পশু পালন ইত্যাদি বিষয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি কৃষকের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার জন্য, ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রকের অধীন ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল জেলা স্তরে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের স্থাপনা। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের ধারণা বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) -এর প্রশংসা পেয়েছে এবং বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলিতে কেভিকে মডেল চালু করার জন্যে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের (আই.সি.এ.আর) সঙ্গে চুক্তি (MOU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার আয়তনের কথা মাথায় রেখে এই জেলায় রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘শস্য শ্যামলা’ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পূর্ণদ্যোমে কাজ শুরু করেছে। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সোনারপুর ব্লকের আড়াপাঁচে অবস্থিত নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ফার্মে।

যে সকল প্রযুক্তি বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জোর দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল –

  • ‘শ্রী’ ও ড্রামসিডার পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তির ধান চাষ, তৈল বীজের মধ্যে সরিষা, সূর্যমুখী ও বাদামের উন্নত জাতের চাষ, মুসুর, মাসকলাই ও অন্যান্য ডালশস্যের উন্নত প্রথার চাষের প্রদর্শন ।
  • ফসলের সুসংহত রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
  • মাটি-টায়ার প্রথায় একই জায়গায় মাটিতে ও ওপরে দুটি মাচায় তিনটি সবজির চাষ।
  • উচ্চ মূল্য ক্যাপসিকাম, ব্রকোলি, ফ্রেঞ্চ বিন, লেটুস ও অন্যান্য সবজির চাষ।
  • উচ্চ আয় যুক্ত বাও (BAU) কুল ও আপেল কূলেড় চাষ।
  • ধান, সরিষা ও মাসকলাই-এর উন্নত জাতের সংশিত বীজ উৎপাদন, ওল, হলুদ, রজনীগন্ধা ও সবজির উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড প্রজাতির বীজ উপকরণ (Planting Materials) ও চারাগাছ তৈরী।
  • রুই, কাতলা, মৃগেল, মাগুর ও রঙিন মাছের ডিম পোনা/ আঙুল পোনা এবং হাঁস, মুরগীর উন্নত প্রজাতির ডিম ও শাবক উৎপাদন।
  • গলদা চিংড়ি ও কাঁকড়ার চাষে যুবক-যুবতীদের কর্মোদ্যোগ সৃষ্টি।
  • পুকুরভিত্তিক মাছ-সবজি-ফল-পশুপাখির একসঙ্গে সুসংহত চাষ ব্যবস্থার উন্নত প্রযুক্তি।
  • রঙিন পাখির চাষ, হাঁস, মুরগীর উন্নত প্রজাতি পালন, সংকরায়ন পদ্ধতিতে দেশীয় প্রজাতির উন্নতি সাধন।
  • সবুজ গোখাদ্যের চাষ ও বীজ উৎপাদন।
  • জৈব চাষ প্রযুক্তি।

জেলার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত ক্ষেত্র-

  • বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত প্রজাতি, পশুপাখির উন্নত প্রজাতি এবং সুসংহত খামার ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সম্প্রসারণ।
  • মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা এবং লবণাক্ত মাটির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত প্রযুক্তির প্রসার।
  • বন্যাপ্রবণ এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত ক্ষয়ক্ষতি রোধ এবং প্রতিকারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্প্রসারণ।
  • কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উচ্চ মূল্য সবজি এবং চাষ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ।
  • বিভিন্ন ফসলের উচ্চ মানের উচ্চ ফলনশীল বীজ ও চারাগাছ ইত্যাদি উৎপাদন, মাছের চারাপোনা এবং পশুপাখির শাবক ইত্যাদি উৎপাদন এবং তা কৃষকদের মধ্যে নায্য মূল্যে সরবরাহকরণ।
  • মৎস্য চাষিদের জন্য বিজ্ঞানসম্মত মিশ্র মৎস্য চাষ, জিওল মাছের চাষ এবং রঙিন মাছ চাষের মাধ্যমে অধিক আয় ও বিকল্প জীবিকার সন্ধান।
  • কৃষকদের আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অপ্রচলিত মৎস্য (যেমন, ভেটকি, পারসে, খয়রা ইত্যাদি) মাছ চাষে উৎসাহদান।
  • পুঁটি, মৌরলা ইত্যাদি দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং চাষ পদ্ধতির সম্প্রসারণ।
  • নতুন নতুন প্রজাতির হাঁস, মুরগীর প্রবর্তন এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিজ্ঞানসম্মত প্রথায় মুরগী পালনে উৎসাহদান।
  • স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে রঙিন পাখি পালন এবং বাজারে বিক্রয়ের জন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা।
  • গবাদি পশুর উৎপাদনশক্তি বৃদ্ধির জন্যে সংকরায়ন কর্মসূচী গ্রহণ।

কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কর্মসূচী –

  • কৃষক (পুরুষ ও মহিলা) ও বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ আয়োজন।
  • কৃষি, উদ্যানপালন, পশুপালন, মৎস্য চাষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে উন্নত প্রযুক্তির প্রদর্শন।
  • বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের সমস্যার উপর কৃষকের জমিতে গবেষণার মাধ্যমে ঐ সকল সমস্যার সমাধানের জন্যে সুপারিশ প্রদান।
  • বিভিন্ন ফসলের উচ্চ ফলনশীল ও উন্নতমানের বীজ, চারাগাছ, মাছের পোনা, উন্নত প্রজাতির পশুপাখি ইত্যাদি উৎপাদন ও ন্যায্য মূল্যে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ।
  • মাটি পরীক্ষা ও ফলাফলের ভিত্তিতে সুপারিশ প্রদান।
  • এস.এম.এস ও অন্যান্য বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের পরামর্শ দান।
  • বিভিন্ন সম্প্রসারণ কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ।

সাধারণভাবে জেলার যে কোন প্রান্ত এবং বিশেষ রূপে শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের জন্য চিহ্নিত কর্মক্ষেত্র থেকে কৃষক, মহিলা এবং বেকার যুবক-যুবতীবৃন্দ কেভিকে ক্যাম্পাসে অবস্থিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আয়োজিত আবাসিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারে।

নতুন এই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের কর্মক্ষেত্র হল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার মোট ২৯ টি ব্লকের মধ্যে ১৪ টি নিম্নলিখিত ব্লক –

১) মহকুমা – বারুইপুর, ব্লক – বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙ্গর এক ও দুই।

২) মহকুমা – ক্যানিং, ব্লক – ক্যানিং এক ও দুই, বাসন্তী ও গোসাবা।

৩) মহকুমা – আলিপুর সদর, ব্লক – বিষ্ণুপুর এক ও দুই, বজবজ এক ও দুই এবং ঠাকুরপুকুর – মহেশতলা।

৪) মহকুমা – ডায়মন্ডহারবার,  ব্লক – ফলতা।

কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের অন্যান্য কর্মসূচী –

  • কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর প্রথম সারির প্রদর্শন ক্ষেত্র (Frontline Demonstration – FLD) আয়োজন করা হয় জেলার বিভিন্ন ব্লকে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত বিভিন্ন কর্মসূচীগুলিও সারা জেলা জুড়েই আয়োজিত হয়।
  • ফার্ম ক্লিনিক সেন্টার হল একটি কর্মসূচী, যেখানে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের সকল বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং ফসল, মাছ ও পশুপাখির চাষ পদ্ধতি, রোগ-পোকার আক্রমণ ও প্রতিকার ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে পরামর্শ দেন। এই কর্মসূচী জেলার যে কোন জায়গায় আয়োজন করা যেতে পারে। উৎসাহী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/পঞ্চায়েত/প্রতিনিধি/ব্যক্তি এই কর্মসূচী আয়োজনের জন্য কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন।
  • কেভিকের নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচী ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান/প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়। কৃষি, উদ্যানপালন, পশুপালন, মৎস্য চাষ ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য উৎসাহী সংস্থা/বিভাগ/প্রতিষ্ঠানকে যোগাযোগ করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা, খাওয়া ও প্রশিক্ষণের অন্যান্য নির্দিষ্ট খরচ বহন করতে হবে।

চাষিভাইগণ তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তিগত পরামর্শ, কর্মোদ্যোগ সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত খবরাখবরের জন্য কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মোবাইলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

রাজ্য সরকারি দপ্তর, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি সংস্থা, নাবার্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে কৃষকদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়ে তাঁদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের লক্ষ্য।

কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র জেলা স্তরের একটি সম্পদ প্রতিষ্ঠান। কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য চাষ বিষয়ে যে কোনরকম সমস্যার সমাধান ও প্রযুক্তির পরামর্শের জন্য এই কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।

বিশদে জানতে যোগাযোগ করুন – ড. নারায়ণ চন্দ্র সাহু (কর্মসূচী সংযোজক)।

ফোন নম্বর – ৯৪৭৫৭২৪৮৯৫

ইমেল – rkmvu.kvknarendrapur@gmail.com

স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)

তথ্যসূত্র - ইকবাল দরগাই

Published On: 05 April 2020, 02:03 PM English Summary: Shasya Shyamala' KVK showing new direction in cultivation of agriculture

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters