স্কোয়াশ একটি সুস্বাদু ও জনপ্রিয় সব্জি হিসাবে বিদেশিদের কাছে পরিচিত | এদেশেও স্কোয়াশ একটি উচ্চমূল্যের সব্জি ফসল | মূলত, এটি একটি গ্রীষ্মকালীন সব্জি এবং লতানো উদ্ভিদ | সাধারণত, এই সব্জিটি কুমড়া (cucurbit) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। স্কোয়াশ ফল বিভিন্ন ধরণের আকার, এবং রঙের হয়ে থাকে। এটি হৃদরোগ, চোখের রোগ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে | ত্বকের সমস্যা সমাধানেও এর জুড়ি মেলা ভার | কয়েক বছর ধরে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদের হচ্ছে |
স্কোয়াশ চাষ (Squash cultivation) করে কৃষকরাও বেশ লাভবান হচ্ছেন |
মাটি ও জলবায়ু (Soil and Climate):
স্কোয়াশ চাষের জন্য উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নিন্ম আর্দ্রতা প্রয়োজনীয়। চাষকালীন অনুকূল তাপমাত্রা হলো ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চাষকালীন উচ্চতাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কমে যায়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা এঁটেল দো-আঁশ মাটি এই চাষের জন্য উপযোগী তবে চরাঞ্চলে পলিমাটিতে স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়।
চারা উৎপাদন:
শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের জন্য ৮ – ১০ সেমি. বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে। সহজ অঙ্কুরোদগমের জন্য পরিষ্কার জলে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত ভিজিয়ে অতঃপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে। প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বপন করতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে। বীজ সরাসরি মাদায়ও বপন করা হয়। সেক্ষেত্রে সার প্রয়োগ ও মাদা তৈরির ৪-৫ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে। চারা গজানোর ১০-১২ দিন পর ১টি সুস্থ ও সবল চার রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে ফেলতে হবে। চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে।
বেড তৈরির নিয়ম:
বেডের উচচতা ১৫-২০ সেমি. ও প্রস্থ ১-১.২৫ মি. থাকতে হবে | এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৭০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে।
মাদা তৈরির নিয়ম:
মাদার ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি. , গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি. এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি. প্রশস্ত হবে। ৬০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন বেডের কিনারা থেকে ৫০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে চারা লাগাতে হবে।
রোপণ:
বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা জমিতে লাগানো উচিত। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি ওই জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে জল দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Zinia flower farming: জেনে নিন আকর্ষণীয় জিনিয়া ফুলের চাষ ও পরিচর্যা
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
স্কোয়াশের ভালো ফলন পেতে মাটিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে | সমস্ত গোবর সার, ফসফরাস সার ও পটাশ সারের ৩ ভাগের দুইভাগ শেষ জমি প্রস্তুতের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট এক ভাগ পটাশ সার বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। তবে নাইট্রোজেন সার তিনটি সমান ভাগে বীজ বপনের ২৫, ৪০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
সেচ:
স্কোয়াশ চাষের জন্য সেচ অতন্ত্য প্রয়োজনীয় | সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনও সব জমি ভেজানো বা প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুষ্ক মৌসুমে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। প্রত্যেক সেচের পর হালকা খড়ের মালচিং করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। এছাড়া, জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে | কারণ, আগাছা জমির অর্ধেক রস শোষণ করে নেয় |
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
ফলে মাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এটি থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য ফেরোমন ফাঁদ এবং পরাগায়নের পর ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা যায়। এ ছাড়াও ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ১০-১২ দিন পরপর ব্যবহার করে এই পোকার আক্রমণ কমানো যায়।
ফসল সংগ্রহ:
পরাগায়নের ১০-১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হবে। তখনও ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। এই ফলের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই ফল চাষে লাভ করতে পারেন |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Oil Seed Farming: ধানের পর জমিতে তৈলবীজ চাষে বিপুল লাভের সম্ভাবনা
Share your comments