একাঙ্গী (Kaempheria galanga L.) জিনজিবারেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটোরি, বেদনানাশকসহ বিভিন্ন ঔষধিগুণ থাকা সত্ত্বেও এটি এখনও অব্যবহৃত গুল্ম হিসাবে বিবেচিত হয়। একে অনেকসময় বাংলায় ভুঁইচম্পা বা সুরভি আদা বলা হয়। সবুজ রঙের বড় পাতা বিশিষ্ট, অনেকটা কচুরিপানার মতো দেখতে কন্দযুক্ত এই ভেষজ উদ্ভিদ চন্দ্রমূলি নামেও সুপরিচিত।
একাঙ্গীর ব্যবহার (The use of Kaempheria) :
আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে একাঙ্গী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটিতে বিদ্যমান এসেনসিয়াল অয়েল সুগন্ধী, মশলা ও প্রসাধনীর উপাদান হিসাবে বহুল ব্যবহৃত। এটি খুশকি দূর করার পাউডার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। একাঙ্গী সর্দি, মাথাধরা, ম্যালেরিয়া, বাত, চোখ-গলাফোলা রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও রক্ত পরিষ্কারক হিসাবে, পাকস্থলীর ঘা সারাতে ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। মাছের চার তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন পানীয় (Soft Drinks )জাতীয় দ্রব্যাদি তৈরিতে এটি কাঁচামাল (Raw materials) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মাটি ও জলবায়ু (Suitable climate) :
প্রায় সব ধরনের মাটিতেই একাঙ্গীর চাষ করা সম্ভব। তবে জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, ৬-৬.৫ পি.এইচ যুক্ত, উর্বর বেলে ও বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে একাঙ্গীর চাষ ভালো হয়। বার্ষিক ২৫০০-৩০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত একাঙ্গী চাষের জন্য উত্তম। ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় একাঙ্গীর দৈহিক বৃদ্ধি ও ফলন ভালো হয়। একাঙ্গী হালকা ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে। ভিজে স্যাঁতসেতে নিচু জমিতেও এর চাষ সম্ভব।
মাটি শোধন (Soil purification) :
গভীরভাবে চাষ দিয়ে মাটি উল্টিয়ে রেখে দিলে রোগজীবাণু ও পোকামাকড় সূর্যের তাপে নষ্ট হয়ে যায়। মাটির ওপর খড়কুটা দিয়ে পুরু স্তর তৈরি করে পুড়িয়ে অথবা জমিতে বিঘা প্রতি ১.৫-২.০ কেজি ফুরাডান বা নিমকেক (২কেজি/শতকে) প্রয়োগের মাধ্যমেও মাটি শোধন করা যায়। মাটিবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিঘায় ৫০০-৬০০গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ও ৪০-৫০ কেজি আর্দ্রতাযুক্ত জৈবসার বা কেঁচোসার শেষ চাষের আগে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় জৈবসার ছড়াতে পারলে ভালো। ব্যাকটেরিয়ানাশক হিসেবে সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
সেচ (Irrigation) :
ভাল ফসল পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সেচের প্রয়োজন। উপযুক্ত জল নিকাশির ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশী জল জমে গেলে একাঙ্গীর কন্দ পচে যেতে পারে। সেচ দিয়ে জমিতে জো এলে আড়াআড়িভাবে তিনটি চাষ দিয়ে নিতে হবে। তারপর আগাছা পরিষ্কার করে জমি সমতল করতে হবে। জমির আর্দ্রতা বুঝে ১৫-২০ দিন পরপর চারবার সেচ দিতে হবে।
নিবন্ধ লেখনী - তনুশ্রী সাহা ও ডঃ সার্থক ভট্টাচার্য্য (গবেষক ও সহকারী অধ্যাপক)
(বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া ও দি নেওটিয়া ইউনিভার্সিটি, সরিষা, দঃ ২৪ পরগণা)
Image source - Google
Related link - (Successful farmer) এক একর জমিতে লাউ চাষ করে লক্ষাধিক উপার্জন করছেন এই কৃষক, আপনিও এই পদ্ধতিতে চাষ করুন আর দ্বিগুণ উপার্জন করুন
Share your comments