সাধারণত, অড়হর একটি ভালো অর্থকরি ফসল। অড়হর ডাল আবার তুর ডাল নামেও পরিচিত | সঠিক নিয়ম মেনে চাষ করতে পারলে যে কোনও ফসলের থেকে বেশি লাভ পাওয়া যায়। কারণ, বাজারে সারাবছরই মুগডালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অড়হর ডালের দামও যেমন ভালো থাকে, তেমনই চাহিদাও ভালো থাকে। অড়হরের মূলে বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন সঞ্চিত হয়, ফলে এর চাষ করলে জমি উর্বর হয়। অড়হরের জমির ভূমিয় রোধ করার ক্ষমতা আছে।
কৃষি দফতরের মতে, জমিতে যখন ধান চাষ করা হয় তখন আলে অড়হর ডাল লাগানো যেতে পারে | তারা বলছেন, আলের দুদিকে সারি দিয়ে অড়হর ডালের চারা পুঁতে দিতে হবে। ডালের চারার দুটি সারির দূরত্ব হতে হবে অন্তত ১ ফুট। ফলে আলের মাঝখান দিয়ে সহজেই যাতায়াত করা যাবে। আর আলে চাষ করায় জল দাঁড়িয়ে যাওয়াও সম্ভাবনা নেই। সামান্য খরচে চাষীদের লাভ মিলবে ব্যাপক | কৃষি দফতরের মতে, কোনও অনুর্বর জমিতে এই চাষ অন্য কারণেও উপযোগী। কম খরচে এই চাষ সত্যি কৃষকদের জন্য বেশ লাভজনক |
মাটি(Soil):
জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে অড়হর চাষ ভালো হয়। এ ছাড়া উঁচু এঁটেল জমি ও টিলা জমিতেও অড়হরের চাষ ভালো হয়।
জাত:
অড়হরের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো, স্বল্প মেয়াদি (১২০দিন) টিএটি-১০, ইউপিএএস-১২০, প্রভাত, টি-২১, পুসা আগেতি। মধ্য মেয়াদি (১৬০দিন) রবি ২০-১০৫, দীর্ঘ মেয়াদি (১৮০ দিন) শ্বেতা (বি-৭) চুর্নি (বি-৫১৭), জাগৃতি |
চাষের সময়:
অড়হর বোনার সময় হলো, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শ্রাবণ মাস।
আরও পড়ুন - Lotus cultivation guide: কিভাবে ঘরে চাষ করবেন পদ্মফুল, জেনে নিন পদ্ধতি
জমি তৈরী:
অড়হর গাছের শিকড় মাটির অনেক গভীর স্তর পর্যন্ত প্রবেশ করে। কাজেই জমিতে ৪-৫ বার গভীরভাবে চাষ করে মই দিয়ে ভালোভাবে জমি প্রস্তুত করা দরকার। টিলা জমিতে গর্তে বীজ বোনা যায়।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
জমি প্রস্তুত করার সময় বিঘাপ্রতি প্রায় ৬ কুইন্টাল গোবর সার অথবা আবর্জনা সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি ৫ কিলোগ্রাম ইউরিয়া এবং ৩৫ কিলোগ্রাম সিঙ্গেল সুপার ফসফেট সার প্রয়োগ করা ভালো।
বীজের পরিমান:
বিঘা প্রতি ২ কেজি বীজ ছড়াতে হবে |
বীজ বোপনের দূরত্ব:
সারি থেকে সারির দূরত্ব হতে হবে ৭৫ সেন্টিমিটার। এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হতে হবে ৩০ সেন্টিমিটার।
রোপণ:
বোনার আগে প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম কেপটান বা মিরাম বা ১ গ্রাম বেভিস্টিন বা ২.৫ গ্রাম ইন্ডফিল এম ৪৫ ওষুধ মিশিয়ে শোধন করে নেয়া প্রয়োজন এরপর ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বীজ বোনা দরকার | চারা জমি থেকে বের হওয়ার ৩ সপ্তাহ পরে একবার এবং প্রয়োজন মতো ৫-৬ সপ্তাহ পরে আর একবার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে |
রোগবালাই ও দমন(Disease Management System):
নানা ধরনের পোকার মধ্যে কুঁড়ি ও শুঁটি ছিদ্রকারী পোকা অড়হরের খুব ক্ষতি করে। কুঁড়ি ও শুঁটি ছিদ্রকারী পোকা প্রথম অবস্থায় গাছের পাতা খায়, পরে শুঁটি ধরার সময় শুঁটিতে ছিদ্র করে বীজগুলো খেয়ে গাছের অনিষ্ট করে। এ দুই পোকা ছাড়াও অন্য পোকা যেমন ফি বিটল, পাতা মোড়ানো পোকা এবং শোষক পোকার উপদ্রব কোনো কোনো সময় অড়হরে দেখা যায়। এ সব পোকা দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি বা সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি লিটার প্রতি জলে মিশিয়ে ফুল আসার সময় একবার ও ১৫ দিন অন্তর আরো দুবার স্প্রে করতে হবে।
অড়হরের রোগের মধ্যে ঢলে পড়া রোগ এবং পত্রদুষ্টি ব্যাধিই বেশি হতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ে এবং ক্রমশ শুকিয়ে যায়। শিকড় ভালোভাবে মাটিতে না বসায় গাছকে সহজে জমি থেকে টেনে তোলা যায়। গাছের কাণ্ড এবং শিকড়ে লম্বা ছোট ছোট কালো কালো দাগ পড়ে। দাগগুলো পরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় বেশ মোটা দেখায়। এ রোগ প্রতিকারের জন্য ভৌত ও রাসায়নিক উপায়ে জমি শোধন করা দরকার। এ ছাড়া জমিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত।
ফসল সংগ্রহ:
গাছের অধিকাংশ শুঁটি পেকে গেলে অড়হর ফসল তুলে নেয়া উচিত। শুঁটি রৌদ্রে শুকিয়ে লাঠির ধারা পিটিয়ে বীজ বের করে মজুদ করা যায়।
আরও পড়ুন -Corn cultivation method: জেনে নিন ভুট্টা চাষের সহজ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
Share your comments