চা বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। এটির একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে। ক্লান্তি কাটাতেই হোক বা অবসর সময়ে অথবা বৈঠকি আড্ডায় সর্বত্রই রয়েছে এই বিশেষ পানীয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির এই ফসলের চাহিদা বাজারে ব্যাপক। উত্তরবঙ্গ চা শিল্প উত্পাদন অঞ্চলগুলি পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ অঞ্চলে। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, কিষানগঞ্জ এবং উত্তর দিনাজপুর জেলাগুলিতে চা চাষ হয়ে থাকে।
যে কোন ফসল চাষে সেচ কার্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক সময়ে সেচ না দিলে ফসলের ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অর্থকরী ফসল চা চাষেও সঠিক সময়ে সেচ প্রদান অত্যন্ত আবশ্যক।
চা চাষে সেচের সময় -
সাধারণত অক্টোবরে বৃষ্টিপাত না হলে নভেম্বর মাসে চা বাগিচায় প্রথম সেচন করা হয়। তারপর জলে প্রয়োজনের ভিত্তিতে আরো পাঁচবার প্রয়োজনের ভিত্তিতে আরও তিন-চার সপ্তাহ অন্তর সেচন করা হয়। আর এপ্রিল মাসে ৭৫-১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে সেচের প্রয়োজন নেই। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত যদি গড় evaporation গড় বৃষ্টিপাতের থেকে ৮-৩০ মিলিমিটার হয় তাহলে সেচ দেওয়া দরকার।
জলের প্রয়োজন কীভাবে বোঝা যায়:
জলসেচ করতে হয় মাটির জলধারণ ক্ষমতা জেনে। এটি জানতে মেটেরিওলজিক্যাল পর্যবেক্ষণ ও টেনশিওমিটারের সাহায্য নেওয়া হয়। তবে চা বাগিচার মতো বিশাল এলাকার জলধারণ অবস্থা জানতে মেটেরিওলজিক্যাল পর্যবেক্ষণই বেশি ব্যবহৃত হয়। এই জন্য বাগিচায় rain gauge মাটি থেকে ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে একটি ফানেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডায়ামিটারের measuring glass স্থাপন করা থাকে এবং প্রতিদিন সকাল ৮:৩০ মিনিটে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন চা বাগিচায় penman’s ET স্থাপন করা হয়, যেখান থেকে potential evapo-transpiration মাপা হয়। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা, স্থায়ীত্ব, runoff বিশ্লেষণ করে নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত মোট যে বৃষ্টিপাত হয় তাকে ধরা হয় কার্যকরী বৃষ্টি হিসাবে। অক্টোবর – এপ্রিল মাস পর্যন্ত মাপা evapo-transpiration এবং effective rainfall এর পার্থক্যই irrigation requirement বা প্রয়োজনীয় সেচ ধরা হয়।
বিভিন্ন মাসে বাস্পীভবনের পরিমাপ (সেন্টিমিটার) সারণী |
|||||||
স্থান |
অক্টোবর |
নভেম্বর |
ডিসেম্বর |
জানুয়ারী |
ফেব্রুয়ারী |
মার্চ |
এপ্রিল |
আসাম |
১২৭ |
৮৯ |
৬৭ |
৬৪ |
৮৬ |
১৩৭ |
১৫৫ |
ডুয়ার্স |
১৩৮ |
১০০ |
৭৬ |
৭৫ |
৯৫ |
১৫০ |
১৬৪ |
বিভিন্ন মাসে প্রয়োজনীয় জলসেচের পরিমাপ সারণী |
||||||
স্থান |
অক্টোবর |
নভেম্বর |
ডিসেম্বর |
জানুয়ারী |
ফেব্রুয়ারী |
মার্চ |
আসাম |
৮৩ |
৬৪ |
৪২ |
৩০ |
২৬ |
৪৭ |
ডুয়ার্স |
৬১ |
৬৫ |
৪৩ |
৩৫ |
৪৬ |
৮৫ |
সেচের সময় কিভাবে নির্ধারিত হয় :
সেচের সময় নির্ধারিত করতে হলে প্রথমে জানতে হবে মাটির জলধারণ পরিস্থিতি। যেটি মাপা হয় টেনশিওমিটারের সাহায্যে। ছোট গাছের জন্য টেনশিওমিটার স্থাপন করতে হবে ২০ সেন্টিমিটার গভীরে। প্রথম বছর গাছের জন্য। তারপর প্রতি বছর ১০ সেন্টিমিটার নিচে নামাতে হবে। কিন্তু পরিণত চা গাছের ক্ষেত্রে টেনশিওমিটার স্থাপন করতে হবে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ সেন্টিমিটার নিচে। এটা ছাড়াও একটি অতিরিক্ত টেনশিওমিটার স্থাপন করতে হবে শিকড়ের (root zone) ১/৪ অংশ গভীরতায়। সাধারণত এটি ২৫ সেন্টিমিটার নিচে স্থাপন করা হয় যেখান থেকে জলধারণ মাপা হয় সব থেকে সক্রিয় রুট জোন থেকে।
টেনশিওমিটারের সাকশান ৫ এর সমান হলে সেচন আরম্ভ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: ড: মেহফুজ আহমেদ
সহ কৃষি অধিকর্তা (বিষয়বস্তু), জলপাইগুড়ি
Image source - Google
(Ginger cultivation) আদা চাষ করে প্রতি বিঘায় মুনাফা অর্জন করুন ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত
Share your comments