আসছে খরিফ মরসুম, আর খরিফ মরসুম মানেই বর্ষাকাল বা পেয়ারার মরসুম। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় প্রতিবছর পেয়ারার ব্যবসা করে প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা আয় হয়। পেয়ারা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, "প্রতিবছর এই সময়ের মধ্যে আমাদের প্রচুর বিক্রি হয়”।
তাইওয়ান গোলাপী পেয়ারার চাষ এখন ভারতে খুব জনপ্রিয়। এটি ভারতীয় কৃষকদের জন্য আয়ের একটি ভাল উত্স হয়ে উঠছে। কৃষকরা এখন বিভিন্ন রাজ্যে এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি পেয়ারার একটি অত্যন্ত উন্নত জাত এবং এক বছরের মধ্যেই এর উদ্ভিদ ফলন দিতে সক্ষম। যে কৃষকরা ঐতিহ্যবাহী চাষ থেকে আলাদা কিছু করতে চান, তারা তাইওয়ান গোলাপী পেয়ারা চাষ করতে পারেন।
বছরে তিনবার ফলন -
এটি একটি বহুবর্ষজীবী জাত। এই জাতের উদ্ভিদ প্রতি বছরে কমপক্ষে তিনবার ফল দেয়। একটি উদ্ভিদ এক বছরে প্রায় ৩০ কেজি ফল দিতে পারে। আপনি যদি এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে চান, আপনাকে প্রায় ৫০০ টি গাছ লাগাতে হবে। যার থেকে আপনি প্রতি বছরে ১৫০ কুইন্টাল ফলন পাবেন। যদি বাজারে আপনার ফল ৩০ কেজিও বিক্রি হয়, তবে আপনি এক বছরে প্রায় ৭ লক্ষ টাকারও বেশি আয় করতে পারেন।
বিশিষ্টতা -
এটি একটি অতি উন্নত এবং আধুনিক প্রজাতির পেয়ারার গাছ। এক ফুট উঁচু এই প্রজাতির উদ্ভিদ ৬ মাস পর থেকে ফল দেওয়া শুরু করে। এই জাতটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হ'ল ফুল ও ফল বছরে বারো মাসই দিতে পারে, ফলও খুব বড় হয়। ওজনের ক্ষেত্রে, এটি ১৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
কীভাবে বপন করবেন -
এই ফসলের জন্য, আপনাকে একটি ২.৫. × ৩ মডেল গ্রহণ করতে হবে। এক উদ্ভিদ থেকে অপর উদ্ভিদের দূরত্ব ২.৫ ফুট এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩ ফুট হওয়া উচিত। বিঘা বাগানের জন্য ৪৫০ থেকে ৫০০টি গাছ লাগানো প্রয়োজন। মাটি প্রস্তুত করতে গোবর জৈব সারের সাথে ডিএপি সার মিশ্রিত করুন। গাছ লাগানোর ছয় মাস পরেই ফল দেওয়া শুরু করবে।
উত্পাদন বৃদ্ধি –
এক বছরে, একটি উদ্ভিদে দেড়\শতাধিক শাখা বৃদ্ধি করুন এবং গাছগুলির উচ্চতা ৬ ফুট পর্যন্ত থাকলে ভালো। পেয়ারার সর্বোচ্চ ফলনের জন্য কান্ডের পরিবর্তে শাখাগুলি বিকাশ করা দরকার। প্রকৃতপক্ষে, এর প্রতিটি পাতায়, ফুল এবং ফলগুলি ৮-১০ শাখায় জন্মায়। ফলপ্রসূ উদ্ভিদে যত বেশি শাখা-প্রশাখা তত বেশি ফল পাবেন।
যে জমিতে ফল বাগান করা হবে তাতে বিঘা প্রতি ২০ কুইন্টাল গোবরসার বা ১০ কুইন্টাল কেঁচোসারের সঙ্গে ট্রাইকোডার্মা + নিমখোল বা দানা (সুপারিশ অনুযায়ী) দিয়ে গভীর চাষ দিলে ভালো। না পারলে যতটা পারবেন করবেন। চাষ জমি হলে আগে ডালশস্য জৈব উপায়ে চাষ করে নেবেন।
পেয়ারা চাষের জৈব প্যাকেজ (Organic cultivation) –
৬ মিটার x ৬ মিটার বা অধিক ঘন ৩ মিটার X ৩ মিটার বা বর্তমানে সুবিধাজনক ঘনত্বে ২ ঘনফুট গর্তে ১০ কেজি গোবর সার/৫ কেজি কেঁচোসারে ২৫ গ্রাম জীবাণু সার + ২৫ গ্রাম ভালো জৈব সয়েলকন্ডিশনার দানা বা হিউমিক অ্যাসিড + ২৫ গ্রাম জৈব এনজাইমের সাথে ৩/৪ কেজি নিম খোল প্রয়োগ ।
সার ব্যবস্থাপনা (Fertilizer Application) -
বর্ষার আগে ও পরে সমান দুভাগে ভাগ করে রিং নালা কেটে প্রয়োগ-
প্রথম বছর -
গোবর সার ২০ কেজি/কেঁচো সার ১০ কেজি + খোল ১ কেজি, জীবাণুসার ৫০ দানা ৪০ গ্রাম প্রতি বছর সমান অনুপাতে বাড়িয়ে প্রয়োগ করতে হবে ।
ষষ্ঠ বা সপ্তম বছর থেকে -
গোবর সার ২৫ কেজি/কেঁচো সার ১০ কেজি + খোল ২ কেজি , জীবাণুসার ৭০ গ্রাম, হিউমিক অ্যাসিড ৭০ গ্রাম, জৈব উৎসেচক দানা ৭০ গ্রাম প্রতি বছর সমান অনুপাতে বাড়িয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
পেয়ারার ক্ষেত্রে ফল আসলে আবশ্যিক ভাবে ফলের মাছির ফেরোমন ফাঁদ বিঘাতে ২ টি লাগানো ও প্রাথমিক বাড়বৃদ্ধির বছরে জৈব রোগনাশক স্প্রে। মাঝে ফুল থেকে ফল আসার সময় নিমবীজ নির্যাস বা নিমতেল (নিমজাত কৃষিবিষ) ১০০০০ পি পি এম ২ মিলি/লিটার জলে স্প্রে।
আরও পড়ুন - বাড়িতে টবে ডুমুর চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
ফুল আসার পর ফলের বাড় বৃদ্ধিতে জৈব বাড়বৃদ্ধি কারক স্প্রে ফলের উৎপাদনের সঙ্গে গুণগত মান বৃদ্ধি করে যা চাষির লাভ বাড়ায়।
পেয়ারার মত প্যাকেজ লেবু, জামরুল, বাওকুল, সবেদা ও অন্যান্য ফলের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, তরে ফলের মাছির ফেরোমন ফাঁদ এক্ষেত্রে না লাগালেও চলবে কিন্তু বিশেষ ফলে রোগ-পোকার জন্য জৈব স্প্রে জরুরী।
আরও পড়ুন - জানুন ভূত জোলোকিয়া লঙ্কা চাষের পদ্ধতি
Share your comments