ভারতবর্ষে উৎপাদনের দিক থেকে লেবুজাতীয় ফলগুলি তৃতীয় স্থান অধিকার করে। লেবুজাতীয় ফল গুলির মধ্যে সবথেকে বেশি চাষ হয় কমলালেবু (উদাহরনঃ নাগপুর ম্যান্ডারিন, কিনু ম্যান্ডারিন, খাসি এবং দার্জিলিং ম্যান্ডারিন), দ্বিতীয় স্থানে মিষ্টি লেবু ( উদাহরনঃ মৌসুম্বি, পাইনাপেল, ব্লাড রেড এবং জাভা লেবু) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাতিলেবু। গোটা বিশ্বে উৎপাদনের দিক থেকে ভারতবর্ষ পাতিলেবু উৎপাদনে প্রথম স্থান অধিকার করে। অন্ধপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গুজরাট, বিহার এবং হিমাচল প্রদেশ পাতিলেবু উৎপাদনে বিশেষ স্থান অধিকার করেছে।
পাতিলেবু তে সাধারণত বছরে তিনবার ফুল হয় যথাক্রমে, জানুয়ারি - ফেব্রুয়ারি, জুন- জুলাই এবং সেপ্টেম্বর- অক্টোবর। এই তিন বার ফুলের সময় গুলিকে যথাক্রমে আম্বে বাহার (Ambe Bahar), মৃগ বাহার (Mrig Bahar) এবং হাসতে বাহার (Haaste Bahar) বলা হয়। দিনে দিনে গোটা দেশে পাতিলেবু চাষ বেড়েই চলেছে এবং ফলের মধ্যে এর গুরুত্ব আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কারণে পাতিলেবুর চাষ নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক ব্যবসা।
নিচের টেবিলে রাজ্যভিত্তিক নামকরা পাতিলেবুর জাত গুলির নাম উল্লেখ করা হল।
রাজ্য | জাত/ ভ্যারাইটি |
অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা | বালাজি এবং পেটলুর সিলেকশন - ১ |
তামিলনাডু | PKM-1 |
কর্ণাটক | কুরগ লাইম (Coorg Lime) |
মহারাষ্ট্র | বিক্রম, প্রমালিনি, চক্রধর, সাই সরবতি, আকলা লেবু (Akola Lime) |
উত্তর ভারত | কাগজি লেবু |
১) প্রমালিনী (Pramalini):
পাতিলেবুর এই জাতে সাধারণ কাগজি লেবুর তুলনায় ৩০% বেশি ফলন ধরে এবং একসাথে ৩-৭ টি ফল গুচ্ছাকারে ধরে থাকে। ফলের মধ্যে প্রায় ৫৭% রস পাওয়া যায়, যা অন্যান্য লেবুর তুলনায় অনেকটাই বেশি।
২) বিক্রম (Vikram):
এই জাতের লেবুতে একসাথে ৫-১০ টি ফল গুচ্ছাকারে ধরে থাকে এবং যা থেকে সেপ্টেম্বর-মে এবং জুন মাসে ফলন পাওয়া যায়, যে সময় অন্য গাছে লেবু ধরে না। এই জাতে অন্যান্য লেবুর তুলনায় ৩০-৩২% বেশি ফলন পাওয়া যায়।
৩) চক্রধর (Chakradhar):
এটি একটি বীজবিহীন পাতিলেবুর জাত। গাছগুলি অনেকটা খাড়া এবং ঘন প্রকৃতির হয়। ফলগুলি অনেকটা গোলাকার এবং খুব পাতলা খোসা দেখতে পাওয়া যায়। ফলের রসের পরিমাণ প্রায় ৬০-৬৬%। গাছ লাগানোর পর চতুর্থ বর্ষ থেকে ফলন পাওয়া শুরু হয়। সাধারণত এই জাত থেকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, জুলাই-জুলাই এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফল পাওয়া যায়।
৪) পিকেএম -১ (PKM-1):
এই জাতের ফলগুলি গোলাকার, মাঝারি থেকে বড় আকৃতির, উজ্জ্বল আকর্ষণীয় হলুদ রঙের। এতে প্রায় ৫২.৩১% রস পাওয়া যায়।
৫) সিলেকশন – ৪৯ (Selection – 49):
এই জাতে একসাথে প্রচুর পরিমাণ উত্তম মানের ফলন পাওয়া যায়। এই জাতে গ্রীষ্মকালীন ফলন পাওয়ার একটি প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এই জাতে লেবুর ক্যাঙ্কার, ট্রিসটেজা ভাইরাস এবং লিফ মাইনার এর বিরুদ্ধে সহনশীলতা দেখতে পাওয়া যায়।
৬) পুষা উদিত (Pusa Udit):
এই পাতিলেবুর জাত সম্প্রতি দিল্লীর ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (Indian Agricultural Research Institute, New Delhi) তে ক্লনাল নির্বাচন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। খুব উন্নত প্রজাতির এই পাতিলেবুর জাতে গাছের গড়ন মাঝারী আকারের, এবং খুব ঘন পাতা তৈরি হয়। ফলগুলি গোলাকার এবং উজ্জ্বল হলুদ রঙ বিশিষ্ট হয়। এই জাতে মোটামুটি সারাবছর ফলন পাওয়া যায়। তবে, সবথেকে বেশি ফলন হয় দুবার, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি-মার্চ এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে। এই প্রজাতি লেবুর কানকোর অথবা কর্কট রোগের বিরুদ্ধে মোটামুটি সহনশীল। ফলগুলি মাঝারী (৩৪.৩৮ গ্রাম) আকারের এবং রসে (৪২.৮০%) পরিপূর্ণ। ফলে আম্লিকতার মাত্রা ৭.০১%। দেশজুড়ে পরীক্ষা করার পর দেখা গিয়েছে ভারতীয়-গাঙ্গেয় উপত্যকায় এবং বাড়ির তরিতরকারির বাগানের লাগানোর জন্যে এটি একটি অতি উত্তম প্রজাতি।
৭) পুষা অভিনভ (Pusa Abhinav):
পুষা উদিতের মতই, ‘পুষা অভিনব’ দিল্লীর ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ক্লোন নির্বাচন পদ্ধতিতে বিকশিত হওয়া আরও একটি উত্তম পাতিলেবু প্রজাতি। ফলের গড় ওজন ৩৮.১৫ গ্রাম এবং রসের পরিমাণ প্রায় ৫৬.৯২%। বাণিজ্যিক লেবু বাগানের জন্যে এটি একটি উত্তম প্রজাতি।
৮) রসরাজ (Rasraj):
পাতিলেবুর এই জাতটি বেঙ্গালরের ভারতীয় উদ্যান বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (Indian Institute of Horticultural Research, Bangalore) এ বিকশিত হওয়া একটি আন্তঃ-প্রজাতিগত সংকর প্রজাতি। এই সংকর জাতটি লেবুর কানকোর রোগের প্রতি প্রতিরোধী। ফলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ রঙের এবং ফলের গড় ওজন ৫৫ গ্রাম। ফলের মধ্যে রসের পরিমাণ প্রায় ৭০% এবং ফল প্রতি বীজের পরিমাণ ১২ টি। ফলের ত্বক তুলনামূলক মোটা এবং আম্লিকতার পরিমাণ ৬%।
৯) তেনালি (Tenali):
এই জাতটি বেঙ্গালরের ভারতীয় উদ্যানবিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (Indian Institute of Horticultural Research, Bangalore) তে তৈরি করা হয়েছে। এই জাতটি লবণাক্ত মৃত্তিকায় চাষ করা সম্ভব, কারন এটি মাটিতে লবণের প্রতি সহনশীল।
আরও পড়ুন - হলুদ চাষে উন্নত ফলনের জন্য রোগ পোকার প্রতিকার (Turmeric Cultivation)
Share your comments