বেসরকারি বিনিয়োগ টানতে এবং দুধ, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পশু খাদ্য উদ্ভিদগুলির মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সুদের ভর্তুকি সহ কেন্দ্রীয় সরকার ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যার ফলে ৩৫ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোভিডের জন্য মে মাসেই মোদী সরকার ২০ লক্ষ টাকা কেন্দ্রীয় প্যাকেজের ঘোষণা করেছিলেন। সেখান থেকেই টাকা নিয়ে “পশুপালন পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল” (Animal Husbandary Infra Development Fund) তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দুধ, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং পশু খাদ্য উদ্ভিদের জন্য বেসরকারি শিল্প এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য যে ঋণ দেওয়া হবে, তাতে ৩-৪ শতাংশ সুদের ভার সরকার বহন করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পশুপালন পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (Animal Husbandary Infra Development Fund) অনুমোদিত হয়েছে। মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভাদেকার বলেছেন "মন্ত্রীপরিষদের দ্বারা ১৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল অনুমোদন করা হয়েছে, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। এই তহবিল দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি, রফতানি বাড়াতে এবং দেশে ৩৫ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে । "
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, সরকার এর আগে দুধের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সমবায় খাতের ইতিমধ্যেই ১০ হাজার কোটি টাকার দুগ্ধ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের (ডিআইডিএফ) অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এমএসএমই এবং বেসরকারী সংস্থাগুলিকেও পশুপালন খাতে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিকাঠামো তৈরির জন্য আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করতে এবং এগিয়ে আসার জন্য অনুকুল পরিস্থিতি তৈরি করা প্রয়োজন। দুধ, মাংস প্রক্রিয়াকরণ এবং পশু খাদ্য উদ্ভিদগুলিতে পরিকাঠামোগত বিনিয়োগের প্রচার করবে সরকার। কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি (এফপিও), এমএসএমই, বিভাগের ৮ টি সংস্থা, বেসরকারী সংস্থাগুলি এবং স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারীরা এই তহবিল থেকে উপকৃত হবেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ব্যাখ্যায়,স্বত্ত্বভোগীদের প্রস্তাবিত ইনফ্রা প্রকল্পের জন্য ১০ শতাংশ অনুদান রাখতে হবে এবং বাকি ৯০ শতাংশ টাকা তাদের নিজ নিজ ব্যাংক থেকে তাদের কাছে ঋণ হিসেবে পৌঁছে যাবে। তাছাড়া, কোনও ব্যক্তি বেসরকারি উদ্যোগে দুধ, হাঁস-মুরগির মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করতে চাইলে তিন শতাংশ পর্যন্ত সুদের খরচ সরকার বহন করবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাখ্যায়, আর্থ-সামাজিক দিকে থেকে নিচের দিকে থাকা জেলাগুলি থেকে কোনও ব্যক্তি এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে চাইলে ৪ শতাংশ সুদের খরচ সরকার বহন করবে। সারা দেশে এই ধরনের জেলার সংখ্যা ১১৫টি। পশ্চিমবঙ্গে বীরভূম, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং নদীয়া এই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। অপরদিকে, যে জেলাগুলির এই শ্রেণীর মধ্যে নেই তাদের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ সুদের খরচ সরকার বহন করবে।
আবার, ঋণ পরিশোধের জন্য ছয় বছর সময় পাওয়া যাবে। প্রয়োজন হলে দুই বছর অতিরিক্ত সময়ও দেবে সরকার। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় সরকার নাবার্ডের অধীনে, ৭৫০ কোটি টাকার একটি ক্রেডিট গ্যারান্টি তহবিলও গঠন করবে। নাবার্ড ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকল্পগুলিতে ঋণের গ্যারান্টি প্রদান করবে। এই গ্যারান্টি পরিমাণ সর্বাধিক ২৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকবে।
নতুন ইনফ্রা তহবিলের সুবিধাগুলি তুলে ধরে সরকার বলেছে যে পশুপালন খাতে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
"বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদে সুবিধা পেতে নতুন এই ফান্ডটি প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের জন্য মূলধনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সেই সাথে বিনিয়োগকারীদের সামগ্রিক আয় বৃদ্ধি / লগ্নির টাকা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।" যোগ্য সুবিধাভোগীদের প্রক্রিয়াকরণ এবং মূল্য সংযোজন পরিকাঠামোতে এ জাতীয় বিনিয়োগ রফতানিতেও প্রভাব ফেলবে। যেহেতু ভারতে দুগ্ধ শিল্পের মাধ্যমে আয় চূড়ান্ত মূল্যের প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ কৃষকদের কাছে ফিরে আসে, তাই এই খাতে মুনাফা হলে কৃষকের আয়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সুতরাং, সরকারের এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ কেবল কয়েকগুণ বেশি বেসরকারী বিনিয়োগের উপকার করবে না, বরং কৃষকদের কৃষি খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করবে। যার ফলে কৃষকদের আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সঙ্গে বাড়বে উৎপাদন।
সুব্রত সরকার
Related article - সর্বাধিক লাভজনক পশুপালন (animal husbandry business) ব্যবসা, স্বল্প বিনিয়োগ অধিক মুনাফা
মৌমাছি পালন (HoneyBee) হতে পারে সর্বাধিক লাভজনক ব্যবসা (Profitable Business)
করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে রামদেবের (Coronavirus Ayurvedic medicine) আয়ুর্বেদিক ওষুধ
Share your comments