ঝাড়খন্ডের রাজ্যপাল দ্রৌপদি মূর্মূ জানিয়েছেন যে বিরসা এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি আগামী বৎসর থেকে কৃষক সচেতনতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এই সমস্ত অনুষ্ঠান প্রতিটা ব্লকে সংঘটিত করা উচিৎ। রাজ্যপালের মতে এই ধরণের কর্মসূচী যদি গ্রহণ করা হয় তাহলে রাজ্যের প্রতিটি কৃষকের কৃষি সম্পর্কীত বিভিন্ন বিষয় ও সুবিধা জানতে বিশেষ সুবিধাজনক হবে, কারণ এই কর্মসূচীগুলি প্রতিটা ব্লকে সংঘটিত হলে তাঁদের সেখানে আসতে ও যোগদান করতে কোনো অসুবিধাই হবে না।
দ্রৌপদি মূর্মূ জানিয়েছেন যে, এই রাজ্যের এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে সেগুলি খুবই প্রত্যন্ত, যদি রাঁচি শহরে অবস্থিত বিরসা এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠানগুলি করা হয় তাহলে তাঁদের অনেকেরই এখানে আসতে ও যোগদান করতে অসুবিধা হবে, ফলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে কর্মসূচীগুলি গ্রহণ করা হবে অর্থাৎ কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তিগত চাষবাস তা তাঁরা জানতেই পারবে না, তাই রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে যদি চাষীদের চাষবাসের আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি সম্বন্ধীয় কৃষি প্রযুক্তি মেলা সংগঠিত করা হয় তাহলে কৃষকরা সহজেই সেখানে যোগদান করতে পারবে এবং তাঁদের মধ্যে উন্নত প্রযুক্তির কৃষিশিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভবপর হবে।
বিরসা এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিতে তিনদিনের একটি কৃষি প্রযুক্তি মেলায় শ্রীমতি মূর্মূ তাঁর এই ইচ্ছার কথা তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে বলেছেন। রাজ্যের গবেষণাগার গুলি তাঁদের উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের সঠিক ক্ষেত্র হলো কোনো কৃষকের জমি, তাই গবেষকদের তিনি অনুরোধ করেন যে তাঁরা যেন তাঁদের গবেষণা দ্বারা প্রাপ্ত বিষয়গুলিকে চার দেওয়ালের মধ্যে না রাখে। প্রতিটি সফল গবেষক ও ছাত্রকে রাজ্যের এক একটি ব্লকের দায়িত্ব নিতে হবে, এবং কৃষকদের সাথে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আদানপ্রদান করতে হবে, মাসের তিরিশ দিনের মধ্যে অন্তত ছয় সাত দিন নির্ধারিত গ্রামে গিয়ে কৃষকদের সাথে মিশতে হবে এবং তাঁদের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষিশিক্ষা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, গবেষণা ও কৃষি যদি একসাথে চলতে থাকে তাহলে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রাজ্য কৃষিতে অনেক উন্নতি করবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
রাজ্যপাল আরও বলেছেন, যদি এমনভাবে পরিকল্পনা করে এগোনো যায় এবং একটা গ্রাম যদি উপকৃত হয় তবে দেখা যাবে আশেপাশের আর পাঁচটা গ্রামের মানুষের মনেও এই উন্নয়নের প্রভাব পড়বে। ঝাড়খন্ডের কৃষকরা অনেক বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী। একটি পরিপূর্ণ কর্মসূচী যদি তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে আগামী ২০২২ এর মধ্যে ঝাড়খণ্ডের কৃষকরাও তাঁদের উপার্জন দ্বিগুণ করতে সক্ষম হবে।
তিনি রাজ্যের ১৭ জন উন্নত চাষীকে শংসিত করেন চাষের কাজে তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও ভালো কৃষিকার্যের জন্য, শুধু তাই নয় এই সমস্ত চাষীরা তাঁদের গ্রামের অন্যান্য চাষীদের কৃষি বিষয়ক সমস্ত কাজে সাহায্য করছেন।
বিরসা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর শ্রী প্রবীন কৌশল এই বিষয়ে জানিয়েছেন, কৃষি প্রযুক্তি মেলা হলো খুব ফলপ্রসূ একটি অনুষ্ঠান যা কিনা চাষীভাইদের কাছে প্রযুক্তিগত কৃষি ভাবনা ও চেতনা সরবরাহ করতে পেরেছে।
ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ন্যাচারাল রেইসিন এন্ড গাম এর ডিরেক্টর শ্রী কে কে শর্মা বলেছেন ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ পূর্বাংশ থেকেই আগামী দিনে একটি বড় সবুজ বিপ্লবের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, কারণ এখানে স্বাধীনতার পর থেকেই চাষের উন্নতির সম্ভাবনাগুলিকে চেপে রাখা হয়েছিলো, ভারতের কোনো কালেই সরকারী কোনো পদক্ষেপ এই অংশে গ্রহণ করা হয় নি। দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের ক্ষেত্রে ঝাড়খন্ড সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আই সি এ আর-এর সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি বিরসা ইউনিভার্সিটির সাথে তাঁদের হাত মিলিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, পণ্য, ও পরিষেবা তাঁরা সম্মিলিতভাবে কৃষির উন্নতিতে পরিবেশন করতে পারেন।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল, বিশাল সংখ্যক মানুষ এই মেলা পরিদর্শন করেছেন, তাঁরা বিভিন্ন রকম তথ্যাদি সংগ্রহ করেছেন, শুধু কৃষকরাই নয়, ছাত্ররা, এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই মেলায় পরিদর্শন করেছেন। একটি সেনা ছাত্রের দলও তাঁদের কৃষি প্রেমের জন্য এই প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়েছিলো।
প্রিন্সিপাল এ পি এস অভয় কুমার সিং বলেছেন যে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব ভালো একটি উদ্যোগ। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল তাঁদের ছাত্রদের কৃষি প্রযুক্তি জানার জন্য কৃষি প্রযুক্তি মেলায় পাঠিয়েছিলো।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)
Share your comments