বহু যুগ ধরে মানুষের খাদ্য লালসার শিকার, নিরীহ প্রাণীরা। পৃথিবীতে নিরামিষভোজী যত না মানুষ আছেন তার কয়েক গুণ বেশি রয়েছে আমিষভোগী। গবেষণায় উঠে এসেছে এমনও তথ্য যেখানে বিশ্ব জুড়ে নিরামিষভোজী মানুষের সংখ্যা মাত্র ৫০ কোটি, কিন্তু আমিষাশী মানুষ প্রায় ৫০০ কোটির উপর! সংখ্যাটা শুনে নিশ্চই চোখ কপালে উঠল, তাই না? বাস্তব ক্ষেত্রে কিন্তু 'দ্য ফ্রেন্ড অফ আর্থ' এবং 'দ্য হেনরিক বল ফাউন্ডেশন' নামক দুই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা তাই বলছে। প্রায় ৭০০ কোটি জনসংখ্যার পৃথিবীতে আরও যত লোক সংখ্যা বাড়ছে ততই বাড়ছে আমিষ খাওয়ার চল। মানুষের রসনা মেটাতে গিয়ে বহু জীব বৈচিত্র্য আজ ধ্বংসের মুখে। খুবই করুণ অবস্থায় রয়েছে বর্তমানে জীব-জন্তুরা। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন, মাংসের জন্য প্রাণীহত্যা কেমন ভাবে রোধ করা যায়। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে মাংসের জন্য প্রাণীহত্যা বন্ধ করার ফতোয়া জারি করলে, পুরো পৃথিবীতে ভয়ানক অশান্তি নেমে আসবে। কারণ পশু মাংসের আমদানি রফতানির সঙ্গে প্রতি দেশের মধ্যে অনেক বড়মাপের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক যোগ রয়েছে। এই ব্যবসায়িক শৃঙ্খলে ছেদ পড়লে নেমে আসতে পারে, যুদ্ধের মতনও অভিশাপ!
বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় শেষমেশ কৃত্রিম উপায়ে মাংস উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এরজন্য কোনও প্রানীহত্যাও করতে হয়নি অথবা কসাইয়ের ছুরিতে শানও দিতে হয়নি। পুরোপুরি কৃত্রিম উপায়ে এই মাংসের পুষ্টিগুণ ও স্বাদও প্রকৃত প্রানীমাংসের মতো। অর্থাৎ একদিকে সাপও মরলো, লাঠিও ভাঙলো না। এই প্রচেষ্টায় সবথেকে বড় অবদান যেই দেশের তা হল ইজরায়েল। মজার বিষয় হল, মাংসটি কৃত্রিম ভাবে উৎপন্ন হয়েছে, আমাদের পৃথিবীতে নয়, খোদ মহাকাশে! শুনতে অবাক লাগলেও, বিকল্প খাদ্য নিয়ে গবেষণারত ইজরায়েলের আলেভ ফার্মের তত্ত্বাবধানে একদল বিজ্ঞানী স্পেস স্টেশনে একটি বিফ-স্টিকের পরিমানের সমতুল্য পরিমান মাংস কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করেছেন। ইজরায়েলের এই ফার্মটি ২০১৯ সালের ৭ অক্টবর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করে। এই গবেষণায় ইজরায়েলের এই কোম্পানিটিকে সাহায্য করেছিল রাশিয়া এবং আমেরিকার তিনটি বিকল্প প্রস্তুতকারী সংস্থা।
টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই মাংস উৎপাদন হয়েছিল বলে জানা যায়। টিস্যু কালচারেরই আরও এক রূপ 'বায়োপ্রিন্টিং' পদ্ধতিতে এই অসাধ্যসাধন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় 'থ্রি ডি বায়ো-প্রিন্টার' মেশিনে থাকা 'বায়ো-ইঙ্ক' নামে তরলের মধ্যে প্রাণীকোশ বা কলার কৃত্রিম বৃদ্ধি ঘটানো হয়। 'বায়ো-ইঙ্ক'-এর মধ্যে কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী বিভিন্ন উপাদান মেশানো থাকে। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই যুগান্তকারী পরীক্ষাটি করা হয়।
আরও পড়ুন: Almond Farming: বাড়িতে আমন্ড চাষের সুফল
ষাঁড়ের জীবন্ত টিস্যু নিয়ে মহাকাশে এই পরীক্ষামূলক গবেষণাটি করা হয়। থ্রি-ডি বায়োপ্রিন্টার মেশিনে এই ছোট্ট টিসুটিতে থাকা কোষগুলি বিভাজিত হওয়ার ফলে, আকারে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মাত্র দু' সপ্তাহ লেগেছিল একটি বড়সড় মাংসের খন্ড তৈরী হতে। আনন্দের বিষয় এটাই, এই মাংসখণ্ডটি উৎপন্ন করার জন্য কোনও অবলা জীবকে প্রাণ বলি দিতে হয়নি। যে কোনও পশু পাখি বা জন্তুর টিসু দিয়ে কৃত্রিম ভাবে মাংস উৎপাদন করা যাবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
মাংসটির টুকরোর স্বাদ একেবারে আসল মাংসের মতো হওয়ায়, তা খেতেও কোনওরকমের অসুবিধা হয়নি। খুব তাড়াতাড়ি বাজারেও চলে আসতে চলেছে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি এই মাংস। যারা পশু-পাখি হত্যার কারণে মাংস খেতে কখনো চান না, তাঁদের হয়তো এবার আর কোনও অসুবিধা থাকবে না, মাংসের স্বাদ গ্রহণে।
আরও পড়ুন:National Education Policy: এবার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও বাংলা-সহ ৫টি ভাষায় পঠনপাঠন শুরু
Share your comments