চাষবাসের ইতিহাস বাংলায় বহু প্রাচীন। একসময় বাংলার কৃষি ভাবনা সারা বিশ্বের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছিল। বর্তমানেও চাষবাস নিয়ে বাঙালিদের আগ্রহে ভাঁটা পড়েনি। কৃষি নিয়ে উন্নত চিন্তা ভাবনা যে বাংলার তরুণ সম্প্রদায় এখনও করে চলেছেন, তাঁর জলজ্যান্ত উদাহরণ স্বরূপ বাগুইহাটির তরুণ শৌর্যদীপ বসাকের নাম উল্লেখ করাই যায়। কৃষি নিয়ে অসাধারণ আবিষ্কারে এই তরুণ তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে।
যুগান্তকারী কৃষি মডেল ( Mesmerizing Cultivation Process )
জল, আলো, হাওয়া এই তিন উপাদানের দৌলতে বিনা মাটিতেই হবে চাষ! ইজরায়েলের 'হাইড্রোপনিক' প্রযুক্তিতে মাত্র ৮ দিনের ভেতর এক কেজি বীজ রূপান্তরিত হবে আট কেজি চারায়! নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে নয়া এই উদ্ভাবনে স্পষ্ট সবুজ বিপ্লবের ইঙ্গিত। অভাবনীয় আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে এই কৃতি বঙ্গতনয় জিতে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। টেরি স্কুল অফ এডভান্সড স্টাডিজ (TERI) থেকে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে এমটেক করা এই ছাত্র প্রথম জীবনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিয়ারিং-এর পড়ুয়া ছিলেন। প্রকৌশলী নিয়ে বিটেক শেষ করে মোটা মাহিনার চাকরি করলেও স্বপ্ন ছিল নতুন কিছু করার। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন করে TERI-তে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। এমটেকের প্রজেক্ট হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন হাইড্রোপনিক ফার্মিং। নতুন প্রজেক্টে শৌর্যদীপকে সঙ্গত দিয়েছিলেন তাঁরই সহপাঠী লবকেশ বালচন্দানি। দু'জনের গবেষণা বৃথা যায়নি। কৃষি নিয়ে চিন্তা করতে করতে এমন এক ব্যবস্থাপনার জন্ম হল, যেখানে খুব কম খরচে ও স্বল্প সময়ে চারা তৈরি হবে। অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব এই পদ্ধতিতে মাটির কোনও ভূমিকা না থাকায় জলের প্রায় পুরোটাই সাশ্রয় হয়।
আন্তর্জাতিক সম্মান: (International Honor)
‘ইউকে এড’ এবং ‘আইকেইউএ ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত ‘এফিসিয়েন্সি ফর অ্যাকসেস ডিজাইন চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় শৌর্যদীপ ও লবকেশের তৈরী মডেল নজর কেড়ে নিয়েছে সব গবেষক-অধ্যাপকদের। যুগ্ম ভাবে তৈরী এই কৃষি মডেল জিতে নিয়েছে এই প্রতিযোগিতার ব্রোঞ্জ সম্মান। দুই বন্ধুর বানানো এই যন্ত্রে রয়েছে একটি মাইক্রো কন্ট্রোলার, যা স্বয়ংক্রিয় পন্থায় গ্রিনহাউসের ভিতরকার পরিবেশে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা পরিমাপ করে জল দেওয়ার মতন কাজ করতে পারবে। মূলত পশুখাদ্য উৎপাদন করা এই যন্ত্র দিয়ে মাশরুম, সবজি চাষও করা যাবে।
কৃষি মডেলের ব্যবহার (Use of New Cultivation Model)
শৌর্যদীপ জানান, দেশের গরিব-প্রান্তিক চাষিদের কথা ভেবেই তাঁদের এই উদ্ভাবন। ইজরায়েলের হাইড্রোপোনিক প্রযুক্তির সঙ্গে আরও কিছু প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরী করেছেন এই আধুনিক যন্ত্র। এই যন্ত্রের সাহায্য নিলে এক কেজি বীজ বস্তায় পুরে মাত্র একদিন রেখে দিলেই বীজগুলির অঙ্কুরোদ্গম সহজেই হয়ে যাবে। এরপর বুক শেল্ফের মতন দেখতে ট্রেতে স্তর অনুযায়ী রেখে দিলেই এক সপ্তাহের মধ্যেই ৬-৮ কেজি চারা হয়ে যাবে। চারা বানানোর যন্ত্রে জল দেওয়ার অটোমেটিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাপমাত্রা অনুযায়ী যন্ত্রের মাইক্রো কন্ট্রোলার গাছে নিজের থেকেই জল দেবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণেরও কোনও দরকার পড়বে না।
আরও পড়ুন: Procedure of Turtle Farming: কচ্ছপ চাষের আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগে হয়ে উঠুন লাভবান
তরুণ বাঙালি গবেষকের এই আবিষ্কার কৃষি বিশ্বে যে এক নতুন যুগ আনতে চলেছে এ কথা বলাই বাহুল্য। শৌর্যদীপের এই আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে বাঙলার কৃষি জগতও যে গর্ব অনুভব করছে তা আজ স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: Young Farmer Forum : চাষবাসের কৌশল হাতে কলমে শিখতে ইন্ডিয়ান ইয়ং ফারমার ফোরামই ভরসা
Share your comments