অনেক কম সময়ে বেশী উৎপাদন করা যায়, খেতেও সুস্বাদু, রোগ-প্রতিরোধক্ষম, বিদেশেও দারুন চাহিদা- ফলে বাগদার পরিবর্তে ভেনামি চিংড়ি চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। শীতের দুমাস বাদ দিয়ে সারা বছরই ভেনামি চিংড়ি চাষ করা যায়। ভেনামি মোটামুটি ৯০ দিনই বাজারজাত করা যায়। দুই ২৪ পরগণার পাশাপাশি মেদেনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকায় নোনাজলে এই চিংড়ির চাষ খুবই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশ কিছু সমস্যার কারনে গত কয়েক বছর ধরে সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না চাষীরা; তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ভালো সিডের সমস্যা, এছাড়া পরিকাঠামোগত অভাব, ভেনামি চিংড়ি চাষে মাছের খাবারের জন্য মোটা অঙ্কের টাকার অভাব প্রভৃতি কারণের জন্য চাষীরা লাভের মুখ দেখেননি এই মাছচাষে। আবার অনেকক্ষেত্রে জলাশয়ের মান খারাপ হয়ে গেলে ভেনামির মড়ক দেখা দেয়। এসব সমস্যা মেটাতে উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে বাংলার চিংড়ি চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তামিলনাড়ুর ডঃ ডে জয়ললিতা মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়
বেলগাছিয়া অবস্থিত রাজ্য প্রাণী অ মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একযোগে কাজ শুরু করেছে তারা। ভেনামি চিংড়ির খাবারের খরচ কমাতে এবং মাছের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ‘বায়োফ্লক’ প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে পারেন মৎস্য চাষীরা। এই প্রযুক্তির প্রয়োগে মাছ চাষের পুকুরের জলকে দূষণের হাত থেকে ঠেকানো যাবে, ফলে জলে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বাড়বেনা, ফলে চিংড়ি মারা যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবেনা। এতে চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগ করে খরচও করতে হবেনা। বায়োফ্লক প্রযুক্তি কি, তা কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রাণী অ মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালা হয়। সেখানের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন – বাংলার চিংড়ি চাষীরা চাইলে তামিলনাড়ুতে গিয়ে এই প্রযুক্তির পর্যবেক্ষণ করে আসতে পারেন, বা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এখানে এসে পুকুরে চাষীদের হাতে কলমে শিক্ষাদান করতে পারেন। বায়োফ্লক হল উপকারি ব্যাকটেরিয়া, অনুজীব অ শৈবালের সমন্বয়ে তৈরী হয়ে পাতলা আবরণ, যা জলকে ফিল্টার করে। সরাসরি পুকুরে বায়োফ্লক তৈরী করা যায়, আবার আলাদা পাত্রে তা তৈরী করে পুকুরে প্রয়োগ করা যেতে পারে। রাজ্য প্রাণী অ মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গদাধর দাশ বলেছেন, জলে কার্বনের উৎস হিসাবে চিটেগুড়, ইউরিয়া, আটা, ধানের গুড়ো ও মিনারেল মিশ্রণ প্রয়োজন। ভেনামিকে দিনে চারবার খাবার দিতে হয় তবে বায়োফ্লক প্রয়োগ করলে তিনবার খাবার দিলেই চলে।
- Sushmita Kundu (sushmita@krishijagran.com)
Share your comments