
FICCI এর একটি রিপোর্ট অনুসারে ভারতীয় কৃষিতে আধুনিকিকরণ হওয়া সত্ত্বেও, কিছু কিছু বিষয়ের যেমন- অতিরিক্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপড় নির্ভরশীলতা, জলবায়ুর খামখেয়ালিপনা, চাষযোগ্য কৃষিজমির অভাব বা হ্রাস, ও চাষিদের আয় হ্রাস ইত্যাদির কারণে ভারতীয় কৃষির অগ্রগতি থমকে যাচ্ছে।
Tata Strategic Management Group ও FICCI দ্বারা যৌথ গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, অপর্যাপ্ত শস্য সুরক্ষা, স্বল্পতা ও পরিবহনের অসুবিধার কারণে প্রভাব পড়ছে ভারতীয় কৃষকদের কৃষির আয়ের উপড়। এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ভালো শস্য সুরক্ষার প্রযুক্তিগত সমাধানই কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
কিছু বিষয়কে নির্দেশ করা হয়েছে, কেন কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হচ্ছে না? বেশ যুক্তিসঙ্গত ব্যাপার হলো ভারতে প্রতি হেক্টর জমির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু ভারতীয় কৃষকদের রুগ্ন অর্থনীতি, কৃষকদের বার বার-ই চাষের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করছে। শুধুমাত্র অর্থনীতিই নয় এর নেপথ্যে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি কারণ যেমন – সুষ্ঠু জলসেচের অভাব , ভৌম জলস্তর কমে যাওয়ায় মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়া, চাষীদের বিজ্জানভিত্তিক চাষের সম্বন্ধে অপ্রতুল জ্ঞান, ও জমির রুক্ষতা ইত্যাদি।

রিপোর্ট অনুসারে ভারতীয় কৃষকরা সবথেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কৃষি থেকে তাদের আয় অনেকটাই কম। যেখানে একজন আমেরিকান কৃষক বৎসরে ১,১৯,৮৮০ ডলার, ইংল্যান্ডের কৃষকেরা গড়ে ৫০,৩৬৫ ডলার, জাপানের কৃষকরা ৫,০০০ ডলার আয় করে সেখানে ভারতীয় কৃষকরা বৎসরে আয় করে মাত্র ১,৮০০ ডলার। যদিও বেশির ভাগ কৃষকের অধিকারে ছোটো ছোটো জমির মালিক, সেখানে অধিকাংশ সময় জমিতে তারা জলসেচের সুযোগ পায় না, ও বেশির ভাগ চাষিরাই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল, তাছাড়া কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষমতা ভারতীয় চাষিদের অনেক কম, সেই কারণে ফসল উৎপাদনের হারও অনেকটাই কম। তাদের আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কীটশত্রু ও পেস্টশত্রুর আক্রমণে নষ্ট হয়ে যায়।
রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে প্রতি হেক্টর জমিতে কীটনাশক এর ব্যবহার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম, যেখানে চীনে হেক্টর প্রতি ১৭ কেজি, জাপানে ১২.৫ কেজি, জার্মানিতে ৩.৭ কেজি, ফ্রান্সে ৩.৭ কেজি, ফ্রান্সে ৩.৭ কেজি ও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে ২.৮ কেজি কীটনাশকের ব্যবহার হয় সেখানে ভারতে পরিসংখ্যান অনুযায়ী হেক্টর প্রতি ০.৬ কেজি কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, এই কারণে ফসল তোলার আগে ও ফসল তোলার সময় বহু ফসল কীটপতঙ্গের আক্রমণে নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে কৃষকদের আয় অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়াও ফসল তোলা, বা স্থানান্তরের সময়ও প্রায় ২৫% ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই শুধু শস্য সুরক্ষাই নয়, এইভাবে ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে।
আমেরিকা, জাপান, চীনের পর ভারত কৃষি রাসায়নিক উৎপাদনে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। ভারতে সারা বৎসরে ৪.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কৃষি রাসায়নিক উৎপাদিত হয়, যা ২০২৫ এর মধ্যে বেড়ে ৮.১ বিলিয়নে পৌঁছবে। সারা ভারতে কর্মজীবী মানুষের মধ্যে ৫০% কৃষিজীবী এবং ভারতের মোট GDP-এর ১৭% আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে।
- প্রদীপ পাল
Share your comments