টেক্সাস এর এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কীর্তি রাঠোর এর দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা প্রমান করতে পেরেছে যে একটি উচ্চ গুণমান সম্পন্ন তুলো থেকে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্যের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। হ্যাঁ, এটা সত্য যে আমেরিকার খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন এই ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে যে জামাকাপড় যে তুলো দিয়ে তৈরী হয়, সেই তুলোয় ক্ষুধাও নিবারণ করা সম্ভব, অর্থাৎ তুলোও মানুষের কাছে ভোজনোপযোগী। এই গবেষণা বিগত দশ বৎসর ধরে চলে আসছে, শুধু পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের ব্যাপারে সবুজ সংকেত এর অপেক্ষা ছিলো, তবে এই সবুজ সংকেত প্রাপ্তির পর থেকে এখন কৃষকরা শুধুমাত্র সুতা তইরীর জন্যই তুলো উৎপাদন করবে না, তারা খাদ্য হিসাবেও এই ফসল উৎপাদন করতে পারবে। যদিও এই গবেষণাটিকে আমেরিকার গবেষকরা নিজের মধ্যেই রাখতে চাইছে এবং সারা বিশ্বে এখনি এটা ছড়িয়ে ফেলাটা তারা ঠিক মনে করছেন না।
বিগত মঙ্গলবার, আমেরিকার কৃষি বিভাগ তুলোর জৈবপ্রযুক্তিগত পরিভাষাটিকে বাণিজ্যিকভাবে সবুজ সংকেত প্রদান করেছে। টেক্সাসের এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটি বক্তব্য অনুসারে এই ধরণের তুলোর বীজকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে আমেরিকানরা এখন থেকে তুলো তৈরী জামাকাপড় পরিধানের সাথে সাথে সেগুলি খেতেও পারবে, এমনই অদ্ভুত এক ধরণের তুলো তারা বর্তমানে তৈরী করতে চলেছেন এবং খুব শীঘ্রই সেগুলি বাজারে ঢুকতে চলেছে।
বিগত ২৩ বৎসর ধরে এই প্রকল্প চলে আসছে, এবং অধ্যাপকরা বলেছেন যে, তারা জিন উৎপাদনকারী বিষাক্ত মৌলগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন, যেগুলি বিভিন্ন কীটশত্রু, পোকামাকড়, ও অখাদ্য বিষয়গুলিকে নিষ্ক্রিয় করেছে। এইটা করার জন্য তারা যে শুধুমাত্র তুলোর বীজকে খাদ্যপযোগী করেছে তাই নয়, তারা এই জাতের উৎপন্ন তুলোর তন্তুগুলিও ভোজনোপযোগী করেছে, যা মানুষের দেহের কোনও ক্ষতিসাধন করে না। এই তুলোর স্বাদ কতকটা হিউমাসের ন্যায় হলেও স্বাদটা খুব একটা খারাপ নয়।
কটন ইঙ্ক এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কেটার হেক এর মতানুসারে এই তুলোবীজের বাণিজ্যিক উৎপাদনে আরও কিছুটা সময় দরকার কারণ সমস্ত চাষির কাছে তুলোবীজ পৌঁছোতে এখনো বেশ কিছুটা দেরি হবে। এই আবিষ্কার থেকে শুধুমাত্র তুলোর কয়েকটা প্রজাতিই নয় বরং সমস্ত রকমের তুলোর মধ্যে অবস্থিত বিষাক্ত পদার্থ বা জিন সমূহকে ধ্বংস করে এবং গাছের প্রতিটা অংশকে খাদ্যপযোগী করে তোলা সম্ভবপর হয়েছে।
এই ধরণের তুলোবীজকে ভবিষ্যতে মাছের খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হবে, যদিও আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়েছে এই তুলোবীজ থেকে উৎপাদিত মীনখাদ্য সব মাছের জন্য ব্যবহার করা যাবে না, শুধুমাত্র সর্বভুক স্যালমন মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এর থেকে চাষিরা সামান্য আয়বৃদ্ধিও করতে পারবে, এতে চাষিদের জীবন বা জীবিকা উভয়ই বেশ উপকৃত হবে।
তুলোর পুষ্টিগত গুণ হিসেবে যেটুকু বিবেচনা করা গেছে, সেটি চীনেবাদাম বা হ্যাজেলণাটের পুষ্টিগত গুরুত্বের প্রায় সমান হয়। এর প্রোটিন অংশটি নিঃসৃত করে কুকিজ ও চকোলেট এমনকি আরও বিবিধ খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- প্রদীপ পাল
Share your comments