
চলতি বছরে শিলিগুড়ি মহকুমায় ডাল চাষের এলাকা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়েছে কৃষিদপ্তর। ধান কাটার পর সেই জমিতে ডাল শস্য (নভেম্বর মাসে) ছড়িয়ে দেওয়া যায়। পরবর্তীতে জমিতে ধান চাষের আগেই ফেব্রুয়ারিতে ডাল তুলে নেওয়া হয়। এভাবে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করা যায়। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় প্রতি বছর ৭০ হেক্টর জমিতে ডাল চাষ হয়। যা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় খুবই কম। চলতি বছর সরকারি উদ্যোগে শিলিগুড়ি মহকুমায় ২৫০ হেক্টর জমিতে ডাল শস্য চাষের টার্গেট নিয়েছে দপ্তর। মহকুমার ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ি, নকশালবাড়িতে এই ডাল চাষ শুরু হয়েছে। বড়জোর পাঁচ একর বা দশ একরের মতো জমিতে বিক্ষিপ্তভাবে চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ডালের উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা মেটাতে ভিন রাজ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। বিভিন্ন সময় ডালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। স্থানীয় চাহিদার কথা মাথায় রেখেই চলতি বছর সরকারি উদ্যোগে ডাল শস্য চাষের এলাকা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। মুসুর এবং অড়হর ডাল খুব কম সময়ে উৎপাদন হয়। শিলিগুড়ি মহকুমায় মুসুর ডাল চাষের পক্ষে অনুকূল। তাই এই দু’ধরনের ডালকে বাছা হয়েছে।
মহকুমার অধিকাংশ চাষি ডাল চাষে উৎসাহ দেখান না। তাদের উৎসাহিত করতে আধিকারিকরা বুঝিয়েছেন যে এখানে ডাল চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। চাষিদের ডাল চাষে উৎসাহিত করতে এবছর ২৫০ হেক্টর ডালের প্রদর্শনী ক্ষেত্র করা হয়েছে। এজন্য ধান চাষ হওয়া জমি বাছা হয়েছে। বিনামূল্যে ডালের বীজ ছাড়াও জৈব সার, কীটনাশক চাষিদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। ধান কাটা এবং ধান চাষের মাঝের এই সময়েই ডাল চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ধান কাটার পরই ডাল শস্যের বীজ ছড়িয়ে দিতে হয়। মুসুর ডাল খুবই অল্প সময়ে ফলন দেয়। ফেব্রুয়ারিতে ধানচাষ শুরু হয়। তার আগে ডাল উৎপাদন হয়ে যায়। মহকুমায় সামান্য মুগ, অড়হর এবং মুসুর ডাল চাষ হয়। তবে মুগ ডাল হতে বেশি সময় লাগে। সেজন্য মুসুর ডাল ও অড়হর ডালকে বাছা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জমিতে বারবার একই সবজি চাষ না করে ডাল শস্য চাষ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। কৃষি সহকারী আধিকারিক বলেন, ডাল শস্য চাষে লাভ কম হয়। এমন ধারণা থেকে চাষিদের অনেকেই ডাল চাষে উৎসাহ দেখান না। কিন্তু এই ধারনা একদমই ভুল। ভালো বীজ এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে ডাল চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে জমিতে প্রাকৃতিত ভাবে নাইট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও জমি অনেক বেশী উর্বর হয়ে ওঠে ও পরবর্তী ফসলের উৎপাদন প্রচুর মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। জমিতে বেশী মাত্রায় নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের খরচ কমে।
পশ্চিমবঙ্গে ডালচাষের প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্বেও বিভিন্ন জেলায় কৃষকেরা ডালচাষে বিরত থাকেন। রাজ্যকে ডাল জাতীয় শস্য ভিন রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয় রাজ্যের মানুষের চাহিদা পূরনের জন্য। সরকারি ভাবে ডাল শস্য চাষ করার জন্য কৃষকদের প্রচুর পরিমাণে ডাল বীজ অনুদানের পরেও ডাল চাষের এলাকা সেইভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ার কারণ কী?
- রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments