কিছু লোকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, মানুষ বাঁশের তৈরি খাবার খেতে পারে কীভাবে? তবে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, অন্তত একবার এটি চেষ্টা করা উচিত। কারণ এটি কেবল অবিশ্বাস্যরকম সুস্বাদু, তা-ই নয়, এটির অনেক স্বাস্থ্যসম্মত গুণাগুণও আছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, বাঁশের অঙ্কুরগুলি ক্যান্সার প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ওজন হ্রাস পর্যন্ত কাজ করে থাকে।আর খাবারের দিক থেকে কেবল স্বাদে গন্ধেই নয়, এটি আপনাকে থাই কারির মতো বহিরাগত আন্তর্জাতিক খাবারের স্বাদ দেবে।
বাঁশের অঙ্কুর কী?
বাঁশের নতুন কল অথবা অঙ্কুর মাটির বাইরে বেরিয়ে আসে, যা খাদ্য রূপে গ্রহণযোগ্য। বাম্বুসা ভালগৌরিস (Bambusa Vulgauris) এবং (Phyllostachys edulis) ফিলোস্টাচিস এডুলাস সহ অনেকগুলি প্রজাতির বাঁশই খাদ্য রূপে গ্রহণ করা হয়। এই অঙ্কুরগুলি বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত আকারে তাজা, শুকনো এবং ক্যান-এ বিক্রয় হয় ।
কাঁচা বাঁশের কান্ডগুলিতে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইডস, প্রাকৃতিক টক্সিন কাসাভা থাকে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয় যে, পুঙ্খানুপুঙ্খ রান্না করে অঙ্কুর থেকে বিষ অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে এবং এ কারণে অন্যান্য উপায়ে ব্যবহার করার আগে তাজা বাঁশের অঙ্কুরগুলি সিদ্ধ করা হয়।
বাঁশের অঙ্কুরের পুষ্টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যা
১. হৃদয় রোগের ঝুঁকি কমায় -
যেহেতু এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলি উচ্চ পরিমাণে রয়েছে, তাই শরীরে ফেনলিক অ্যাসিড বৃদ্ধির জন্য বাঁশের অঙ্কুর খুবই কার্যকরী। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে, যা হৃদরোগের মতো অসংখ্য দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার ঝুঁকি হ্রাস করে।
২. এটি ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে-
এতে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকে। এক কাপ বাঁশের কান্ডে প্রায় ১৩ ক্যালোরি এবং আধা গ্রাম ফ্যাট থাকে। এতে স্যাচুরেটেড এবং অসম্পৃক্ত উভয় ফ্যাট থাকে। বাঁশের অঙ্কুরে স্বাস্থ্যকর ফাইবারগুলিও বেশি পরিমাণে থাকে, যা হজমে সহায়তা করে।
৩. পাকজনিত ব্যাধিগুলি নিরাময়েও সহায়তা করে:
এটি পেন কিলার রূপেও কাজ করে। বাঁশের অঙ্কুরের পাশাপাশি বাঁশের পাতাও পেটের ব্যাধি নিরাময়ে কার্যকর। এগুলি অন্ত্রের কৃমি এবং ব্যথা উপশম করতেও সহায়তা করে।
৪. প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আলসার নিরাময়কারী:
বাঁশের অঙ্কুরগুলি, গুঁড়ো করে জুস রূপে পান করলে এটি আলসার সহজেই মোকাবেলা করতে পারে।
৫. একটি প্রাকৃতিক ক্ষত নিরাময়কারী:
যে কোন রকমের ক্ষত এটি প্রাকৃতিকভাবে নিরাময় করে। বাঁশের অঙ্কুরগুলি ক্ষত এবং ঘা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৬. বিষক্রিয়ার সম্ভাব্য নিরাময় -
আয়ুর্বেদিক বিজ্ঞান অনুসারে বাঁশের অঙ্কুরের নিষ্কর্ষে অ্যান্টি-ভেনোমাস গুণ রয়েছে যা সাপ এবং বিছের কামড়ের চিকিত্সা করতে উপযোগী।
৭. গবেষণা অনুযায়ী এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে –
বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, বাঁশের পাতাগুলিতে অ্যামাইলাসের পাশাপাশি ক্লোরোফিল রয়েছে যা ক্যান্সারের প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
ক্ষতিকারক দিক –
কিছু লোক দাবি জানান যে, বাঁশের অঙ্কুর বেশি খেলে চুল পড়তে পারে। তবে এতে অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে, যা স্বাস্থ্যানুযায়ী আলাদাভাবে আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com )
Share your comments