সর্পদংশন সতর্কতায় এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে শের (SHER) | সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণী ও মানুষের লড়াই বেড়ে উঠেছে | যুগের সাথে তালমিলিয়ে মানুষ বনাঞ্চল কেটে বানিয়েছে বড় বড় আবাসন, শপিং কমপ্লেক্স কত কি | ফলত, বনের প্রাণীরা এসে পড়ছে লোকালয়ে | হাতির, সাপ, চিতাবাঘ এদের হামলায় মানুষের মৃত্যুর খবরও প্রকাশ্যে আসছে বেশি। আর এখানেই মূল কাজ বন্যপ্রাণপ্রেমীদের। উভয়ের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পারস্পরিক সহাবস্থানের বাতাবরণ তৈরি করা।
সাপের কামড়ে মানুষের প্রাণহানি নিয়ে গ্রামবাংলায় এখনও বহু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এখনও সর্পদংশনের পর চিকিৎসা না করিয়ে ওঝার ঝাড়ফুঁকের উপর নির্ভর করেন তাঁরা। এসব সংস্কারমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ চালান বন্যপ্রাণপ্রেমীরা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ব্যঘ্র সংরক্ষণ সংস্থা ‘শের’ অভিনব উদ্যোগ নিল। শুধু মৌখিকভাবে বোঝানো নয়, হুগলিতে বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় বসবাসকারী ১০০ জন কৃষককে তাঁরা দিলেন গামবুট এবং গ্লাভস, যা জঙ্গল এলাকায় তাঁদের সুরক্ষিত রাখবে।
আরও পড়ুন - Duare Sarkar: ১৬ আগস্ট থেকে রাজ্যে ফের চালু দুয়ারে সরকার, জেনে নিন বিস্তারিত তথ্য
মূলত বর্ষাকালে সাপের উৎপাত গ্রামবাংলার খুবই স্বাভাবিক, পরিচিত ছবি। সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্ষাকালেই সবথেকে বেশি সংখ্যক সর্পদংশনের ঘটনা ঘটে এবং তা কৃষিকাজ করার সময়। বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, সাপের দংশনে মৃত্যু ৯৫ শতাংশই ঘটে গ্রামীণ এলাকায়। গ্রামবাংলার জমিতে বিভিন্ন নির্বিষ ও বিষধর সাপ বেরতে দেখা যায়। চন্দ্রবোড়া, কেউটে, গোখরো, শাঁখামুটির মতো বিষধর সাপের ছোবলে কৃষক মৃত্যুর ঘটনা আকছার ঘটে। তার অন্যতম কারণ, মাঠে কাজ করার যথাযথ রক্ষাকবচ থাকে না গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলির। থাকে না যথেষ্ট সচেতনতাও।
শের-র অভিনব উদ্যোগ:
মূলত ব্যঘ্র সংরক্ষণ সংস্থা হলেও ‘শের (SHER) কাজ করে থাকে বন্যপ্রাণ নিয়ে। আর বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি জঙ্গল লাগোয়া বাসিন্দাদের জীবনযাপনের প্রতিও বেশ দরদী পদক্ষেপ নিয়ে থাকে এই সংস্থা। ১ দশকের বেশি সময় বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সাপ উদ্ধারের কাজ করছেন সংস্থার সদস্যরা। সম্প্রতি হুগলির হরিপাল ব্লকের ১০০ কৃষককে সর্পদংশন প্রতিরোধ করতে একজোড়া করে গামবুট ও একজোড়া গ্লাভস দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই এই গামবুট ও গ্লাভস ব্যবহার করে কীভাবে সর্পদংশনের হাত থেকে কৃষকদের বাঁচানো যায়, তাও জানানো হয়।
সাপে ও মানুষের এই প্রাণহানি লড়াই এড়াতে ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য সংরক্ষণে এটি ‘শের’-এর একটি প্রথম ধাপের উদ্যোগ। এভাবে তাঁরা একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করলেন। আশা একটাই, গ্রামীণ সমাজের জনমানসে সাপ ও মানুষের সহাবস্থান সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে উঠবে। পাশাপাশি গ্রামবাংলায় সর্পদংশনের মাত্রা কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে। নিতান্তই এই উদ্যোগ কৃষকবন্ধুদের জন্য যথেষ্ট ফলদায়ক ও প্রশংসনীয় |
আরও পড়ুন - Utsosri Prokolpo: রাজ্যে শিক্ষকদের সুবিধার্থে চালু হলো “উৎসশ্রী” প্রকল্প
Share your comments