পশ্চিমবঙ্গের ফুলের উপত্যকা হিসাবে পরিচিত ক্ষীরাই। রাজ্যের সমগ্র ফুলের চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশই এখানে চাষ হয়। পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছাড়াও, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ফুল চাষ করা হয়। অন্য সময়ে এই ক্ষীরাই-এর ভূমিতে পুষ্প চাষ করে বহু মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু এখন কর্মসংস্থান তো দূরে থাক, অন্নসংস্থান নিয়ে চিন্তিত তারা। কারণ ফুল চাষীরা লকডাউনের জেরে ফুল সরবরাহ করতে না পারার জন্য পাঁচ লাখ টাকারও বেশী লোকসান করেছেন। বিগত কয়েকদিন পূর্বে বেঙ্গল ফ্লোরিকালচারিস্টস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার সেলার্স অ্যাসোসিয়েশন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের কাছে কৃষকদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করে, ফুল বিক্রিতে অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ করে একটি লিখিত আবেদন জানায়। অনুমতি প্রদানও করা হয়, তা সত্ত্বেও কৃষকদের সমস্যার সমাধান হয়নি। কিন্তু কেন?
স্থানীয় কৃষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, এখান থেকে বেশীরভাগ পণ্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু যান চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ তারা। এক কৃষক বলেছেন, ‘যদি কোনভাবে ব্যবস্থা করে ফুল বাজারে নিয়ে যাই, তা-ও বিক্রি করতে পারছি না। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম’। সর্বোপরি, শ্রমিকদের ফুল সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন এক হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। ফুল সংগ্রহ না করলে সেগুলি ক্ষেতেই নষ্ট হবে এবং এতে গাছ মারা যাবে।
কলকাতা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের 'ফুলের উপত্যকা' ক্ষীরাই। কৃষকদের ক্ষেতে এখন ফুটে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের ফুল। ফসল সম্পূর্ণ প্রস্তুত, অপেক্ষা শুধু সংগ্রহের। কিন্তু ফসল সংগ্রহের পর কী করবেন এই চাষীরা?
শুধু এখানেই নয়, একই দৃশ্য অন্যান্য ফুলের ক্ষেতেও। হাওড়ার মল্লিকবাজারের পুষ্প পণ্যবীথিটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয়, সমগ্র এশিয়ার সর্ববৃহৎ ফুলের বিপণন ক্ষেত্র। কিন্তু পরিবহণ ব্যবস্থায় শিথিলতার কারণে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ফুল নিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন অনেক চাষী।
লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের দুগ্ধচাষীদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে এর আগে রাজ্য সরকার, দুপুর বারোটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মিষ্টির দোকানগুলি খোলা রাখার জন্য অনুমতি দেয় এবং কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্যে মান্ডি এবং সবজি বাজার লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়। কিন্তু ফুল বিক্রিতে অনুমতি প্রদান করলেও "লকডাউনের কারণে বন্ধ মন্দির এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানও স্থগিত রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ফুলের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। আর এর প্রভাবেই মারাত্মক ক্ষতির মুখে চাষীরা।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments