মাছ চাষে সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট এবং রুরাল ডেভেলপমেন্ট – এই দুটি প্রধান বিষয়ের উপর মনোনিবেশ করে বিজ্ঞানের ছাত্র দিব্যেন্দু পাল এবং তার আরও দুই সহ উদ্যোক্তা সৌমিত্র বর্মণ এবং প্রতাপ চন্দ্র বর্মণ প্রতিষ্ঠা করেছেন – ‘ব্লু লেগুন অ্যাগ্রো ফার্মিং’ কোম্পানি। শ্রীপুর গ্রাম, ইটাহার - উত্তর দিনাজপুর এবং কুশমান্ডি, দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় তিন একর জায়গা জুড়ে তাদের এই মাছ চাষের উদ্যোগ। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সমাজের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে তারা এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা দিব্যেন্দু পাল-এর বক্তব্য -
কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা দিব্যেন্দু পাল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, গুজরাট এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও তিনি পরামর্শ নিয়ে এই মৎস্য চাষ কার্য করে থাকেন। মূলত তারা স্থানীয় বাজারের চাহিদাগত ভিত্তিতে সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটা ইত্যাদির চাষ করে থাকেন। ধানী পোনা থেকে চাষ শুরু করে চারা পোনা, পরবর্তী পর্যায়ে চারা বড় হলে অর্থাৎ টেবিল সাইজের হলে সেই মাছকে অন্য পুকুরে/জলাশয়ে রেখে রক্ষণাবেক্ষণ করে বড় করা হয়। তার বক্তব্য অনুযায়ী, মাছ চাষ তো অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু সম্পূর্ণ জৈবিক পদ্ধতির অনুসরণ করেন এমন মানুষের সংখ্যা সত্যই কম।
জৈবিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ -
কোম্পানির কর্ণধার দিব্যেন্দু পালের মতে, ‘তাদের পুকুরে মাছ চাষ সম্পূর্ণ জৈবিক পদ্ধতিতে করা হয়। পুকুর পরিচর্যার ক্ষেত্রে এবং মাছের ন্যাচারাল ফিড তৈরীর ক্ষেত্রে অনেকে কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকেন’। আপাতদৃষ্টিতে তা সুবিধাজনক লাগলেও এর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে মানুষের উপর। কারণ কেমিক্যাল প্রয়োগ করা মাছ যখন আমরা দিনের পর দিন খাদ্যরূপে গ্রহণ করছি, তখন সেই কেমিক্যালের প্রভাবে অনেক রোগ সৃষ্টি হয়, যা অনেকেরই অজানা। এই ব্লু লেগুন অ্যাগ্রো ফার্মিং’ কোম্পানি সম্পূর্ণ জৈবিক খাদ্য মাছের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। তাদের ৩ মাসের প্রোজেক্টে আনুমানিক ১৫ ক্যুইন্টাল মাছ উৎপন্ন হয়। জৈবিক পদ্ধতিতে উৎপন্ন হওয়ায় তাদের চাষ করা মাছের স্বাদ অন্যান্য জায়গার মাছের তুলনায় যে অনেকটাই বেশী, সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তাদের পুকুরে ২-৩ টি ক্যাট ফিশও রয়েছে। এই ক্যাট ফিশ কিছু ধানী পোনা খেয়ে নিলেও এর একটি বড় সুবিধা রয়েছে। এরা যখন অন্যান্য মাছকে তাড়া করে তখন মাছগুলি জলে দ্রুত চলাফেরা করায় স্বাভাবিকভাবেই জলে অক্সিজেনের সৃষ্টি হয়, মাছগুলিরও ব্যায়াম হয় এবং মাছ সতেজ থাকে। তাছাড়া সময়মতো তারা পুকুরের বাস্তুতন্ত্র পরিচালনা করেন, জল পরিশোধন করেন এবং সর্বোপরি নিয়মিত মাছগুলিকে নিরীক্ষণ করেন, যাতে পুকুরে মাছে রোগের প্রকোপ না হয়। মাছের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং জু-প্ল্যাঙ্কটন তৈরীতেও তারা কোনরকম কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না।
কেমিক্যাল প্রয়োগ করে চাষ করলে খাদ্যশৃঙ্খল পদ্ধতির মাধ্যমে সেই কেমিক্যাল ক্ষুদ্র প্রাণী থেকে শুরু করে সকল মানুষের তথা পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে থাকে। ‘ব্লু লেগুন অ্যাগ্রো ফার্মিং’ কোম্পানিটি সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় তাদের উৎপন্ন মাছ স্বাদে অতুলনীয়, সম্পূর্ণ রোগমুক্ত তাদের মাছ, সতেজ এবং যদি পুষ্টিগুণের কথা বলা হয়, তাহলে আমাদের শরীরের জন্য তা শতভাগ খাঁটি। সুতরাং, জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন এই কোম্পানিটির মাছ যে অন্যান্য জায়গার উৎপন্ন মাছের তুলনায় খাঁটি, তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
Share your comments