ভারত বিশ্বের বৃহত্তম পাট এবং পাটজাত পণ্যের উৎপাদক, বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০% অবদান দেয় এবং কৃষিক্ষেত্র, বাণিজ্য ও শিল্পে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষকে জীবিকা প্রদান করে। যদিও, দেশীয় বাজার পাট এবং পাটজাত পণ্যের মূল ভিত্তি হিসাবে অব্যাহত রয়েছে, তবে আমাদের রফতানি বাজারও ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখাচ্ছে। এই বহুমুখী প্রাকৃতিক তন্তুর বায়ো-ডিগ্রেডেবিলিটি (জৈব-পচনশীলতা) এবং পরিবেশবান্ধব গুণের কারণে পাটজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে ভারত আজ বছরে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। যাইহোক, পাটজাত বৈচিত্র্যময় পণ্যগুলি তৈরী করার জন্য উচ্চ গুণমানের তন্তুর প্রয়োজন, যা সম্ভব করতে উন্নতশীল জাত এবং কার্যকরী পাটপচন প্রক্রিয়া অপরিহার্য। পাটের জাতগুলির জিনগত পটভূমি ছাড়াও, তন্তুর গুণমান মূলত: কৃষকদের দ্বারা পাট পচানোর প্রক্রিয়ার উপরও নির্ভর করে, এমনটি বলেছেন ব্যারাকপুরের কেন্দ্রীয় পাট এবং সমবর্গীয় তন্তু অনুসন্ধান সংস্থা আইসিএআর-ক্রাইজাফের নির্দেশক ডঃ গৌরাঙ্গ কর। এই বছর পাট বোনার সময় থেকে শুরু করে, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রাথমিকভাবে পাট চাষে এক ধাক্কা লেগেছিল। এছাড়াও, ২০২০ সালের মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের ফলে মাঠে থাকা পাটের ফসলে প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাব এবং আম্ফান ঘূর্ণিঝড় সত্ত্বেও, আইসিএআর-ক্রাইজাফ এবং ন্যাশনাল জুট বোর্ড, দি জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের মত অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণে মাঠে পাটের ভাল ফসল হয়েছে। এখন ফসল কাটা ও পচানোর কাজ শুরু হয়েছে এবং এই সময় উন্নত পচন পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে সেরা মানের পাট তন্তু পাওয়া যায়।
এই প্রসঙ্গে ডঃ কর উল্লেখ করেছেন যে, সম্প্রতি আইসিএআর -ক্রাইজাফের বিজ্ঞানীরা পাট পচানোর গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তারা ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং’-এর মাধ্যমে পাট পচানোর ব্যাকটেরিয়ার জিনোম সিকোয়েন্সগুলি ডিকোড করেছেন। বিশদ জিনোমিক বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে যে, ব্যাসিলাসের তিনটি পৃথক প্রজাতি কনসোর্টিয়াম গঠন করে। জিনোম সিকোয়েন্সিং এও নিশ্চিত করেছে যে, পাট পচানোর ব্যাকটেরিয়াগুলি পেকটিন, হেমিসেলুলোজ এবং অন্যান্য ননসেলুলোজিক উপাদানগুলিকে কমিয়ে দেয় এবং তন্তুর পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। ব্যাকটিরিয়ার স্ট্রেনগুলি বিষাক্ত নয় এবং এইজন্য এই ব্যাক্টেরিয়া যুক্ত পাট পচানোর জল সফলভাবে সেচের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সিকোয়েন্সিং-র সম্পূর্ণ তথ্য এন.আই. এইচ.এন.সি.বি.আই.-এর ডাটাবেসে জমা দেওয়া হয়েছে।
পাট পচানোর ব্যাকটিরিয়াগুলি ইতিমধ্যে আইসিএআর-ক্রাইজাফ দ্বারা বিকশিত পাট পচানোর জন্য জীবাণু মিশ্রণ "ক্রাইজাফ সোনা" পাউডারে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই জীবাণু মিশ্রণের জনপ্রিয়তার কারণে, কেবল গত তিন বছরে, দেশের বিভিন্ন পাট উৎপাদনকারী রাজ্যের প্রায় ৫০,০০০ হেক্টরের বেশি এলাকা জুড়ে ৩.৬ লক্ষ কৃষকদের কাছে ৭.৮৫ কোটি টাকা মূল্যের ১৪২৮ মেট্রিক টন ক্রাইজাফ সোনা পাউডার সরবরাহ করা হয়েছে। তন্তুর মান উন্নত করতে এবং উন্নত পচন পদ্ধতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের পাট তন্তুকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে, কৃষকদের অবশ্যই পাট পচানোর জন্য এই জীবাণু মিশ্রণটি ব্যবহার করতে হবে। পাট পচানোর সময় ‘ক্রাইজাফ সোনা’ পাউডার ব্যবহারের ফলে তন্তুর গুণমান ১-২ গ্রেড উন্নত হয়, পচনের সময়কাল ৭ দিন কমে যায় এবং পাট পচানোর জন্য ৭৫% কম জল প্রয়োজন হয়।
বিজ্ঞানী দলকে অভিনন্দন জানিয়ে সংস্থার নির্দেশক ডঃ গৌরাঙ্গ কর বলেছেন যে, এই জাতীয় সাফল্য পাটের ক্ষেত্রে প্রথম এবং এটি নিশ্চিত যে, এই যুগান্তকারী ফলাফলগুলি জীবাণু মিশ্রণ ব্যবহার করে পাট পচানোর পদ্ধতিকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে। পচানোর দক্ষতাকে বাড়াতে এবং অল্প জল ব্যবহার করে পাট পচানোর সময়কে কমাতে, পেকটিন, হেমিসেলুলোজ এবং অন্যান্য নন-সেলুলোজিক উপকরণগুলিকে পচানোর জিনগুলি পরিবর্তন করা যেতে পারে। সুতরাং, এই যুগান্তকারী গবেষণালব্ধ সাফল্য কৃষক সম্প্রদায়ের দ্বারা উচ্চমানের পাট তক্ত উৎপাদন করতে সহায়তা করবে যা বাজারে উচ্চ আয় উপার্জনের পক্ষে সহায়ক হবে।
তথ্যসূত্র - আইসিএআর-ক্রাইজাফ, ব্যারাকপুর জুট রিসার্চ সেন্টার
Image Source - ICAR-CRIJAF, Jute Research Centre
Related Link - (Government job notification) দশম/দ্বাদশ শ্রেণী উত্তীর্ণদের জন্য সুখবর, সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি
বাড়িতে বসে শুরু করুন এই ব্যবসা আর উপার্জন করুন অতিরিক্ত মুনাফা
সর্বাধিক লাভজনক পশুপালন (animal husbandry business) ব্যবসা, স্বল্প বিনিয়োগ অধিক মুনাফা
Share your comments