শাক সবজীর চাষ থেকে কীভাবে করবেন বাড়তি আয় করবেন কৃষকবন্ধুরা

বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন মাছের চাষ-ই শুধু নয়, হলদিয়ার মাছ চাষিরা পরিবেশ বান্ধব ভাবে মাছ চাষ করেছেন। কাজে লাগাচ্ছেন পুকুর পাড়। পুকুরের পাড়কেও এখন সবজি চাষের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্পপুঁজি, অল্পসময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের সাথে এরকম চাষ।

KJ Staff
KJ Staff
Aquaponic system in village
Aquaponic (Image credit - Google)

বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন মাছের চাষ-ই শুধু নয়, হলদিয়ার মাছ চাষিরা পরিবেশ বান্ধব ভাবে মাছ চাষ করেছেন। কাজে লাগাচ্ছেন পুকুর পাড়। পুকুরের পাড়কেও এখন সবজি চাষের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জলাশয়ে পরিকল্পিত উপায়ে স্বল্পপুঁজি, অল্পসময় ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের সাথে এরকম চাষ।

পুকুরে মাছ, পাড়ে শাক-সব্জী ফল-মূল চাষ (Aquaponics system) - 

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এমন ভাবে পুকুর পাড়ে গাছ লাগালে পুকুরে রোদ লাগার কোনো অসুবিধা হয়না। তাছাড়া খেয়াল রাখতে হবে বাঁশ জাতীয় গাছ না থাকে, তবে পাতা পড়ে মাছ চাষের অসুবিধা হবে। তবে পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে বাড়তি আয় সহজেই করা যায়।পরিকল্পিত সমন্বিত মাছ চাষে অধিক লাভ – পুকুরে মাছ, পাড়ে শাক-সব্জী ফল-মূল!

আসলে পুকুরের পাড়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল, ফল, গাছ-গাছরা রোপণের সুযোগ থাকলেও সেখানে সারাবছর নানারকমের মৌসুমী শাক-সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। তাতে জমির সদ্ব্যবহার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর পুষ্টির যোগানের বিষয়টি তো রয়েছেই। 

শাক সবজির চাষ - 

পুকুরের পাড়ে আসলে সারাবছরই কিছু না কিছু শাক-সবজির চাষ করা সম্ভব। তারমধ্যে কিছু থাকতে পারে স্থায়ী এবং কিছু হতে পারে মৌসুমী। বাৎসরিক বা স্থায়ীগুলোর মধ্যে আনাজি কাঁচ কলা, কাঁচা পেঁপে ইত্যাদি।

অপরদিকে মৌসুমীগুলোর মধ্যে - লাউ, সীম, পটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, শশা, করলা, লালশাক, ডাটা, ঢেঁড়শ, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, কলমিশাক, পুঁইশাক, মিষ্টিআলু শাক ইত্যাদি। মসলার মধ্যে আদা, হলুদ, রসুন, পেঁয়াজ, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি। ডালের মধ্যে রয়েছে খেসারি, মাসকলাই, মটর ইত্যাদি। এসব শাক-সবজি কিংবা ডাল-মসলার সবগুলোই আবার শাক-সবজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

পুকুরের পাড়ে সবজি ফলিয়ে পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। পুকুরের পাড়ে এসব সবজি চাষ করার জন্য খুব একটা জমি প্রস্তুতের প্রয়োজন হয়না। কোদাল কিংবা খুরপি দিয়েই পুকুরের পাড়ের জমি প্রস্তত করে নেওয়া যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে মাছ চাষের জন্য প্রতিবছর মাছ তুলে ফেলার পর পুকুর সাময়িক সংস্কার করার প্রয়োজন পড়ে। তাই প্রতিবারেই পুকুর সংস্কারকালে নতুন মাটি উঠানো হয়। সেই মাটি খুবই উর্বর হয়ে থাকে। কারণ মাছের খাবার হিসেবে যেসব জিনিস দেওয়া হয় সেগুলোর বেশিরভাগই পুকুরের তলানিতে জমা পড়ে। সেই তলানি নিচের মাটির সাথে মিশে গিয়ে গাছের জন্য পুষ্টিকর জৈবসারে রূপ নেয়।

অপরদিকে নতুন খননকৃত পুকুরের মাটিও শাক-সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগি। নতুন মাটি অথবা সংস্কারকৃত পুকুরের জৈবসারযুক্ত মাটিতে অত্যন্ত ভালোভাবেই শাক-সবজি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। পুকুরের পাড়টিকে কয়েকটি ধাপে ভাগও করে নেওয়া যেতে পারে। তাতে একেক ভাগে একেকটি সবজি ফসল চাষ  করা যেতে পারে। আবার লাউ, সীম, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, পটল, করলা, পুঁইশাক, ইত্যাদি বাঁশের তৈরি মাচা অথবা মাটিতে বিছিয়ে দু-ভাবেই চাষ  করা যেতে পারে। তবে মাটিতে বিছিয়ে দিলে সেক্ষেত্রে খড় বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অপরদিকে অন্যান্য সবজি ফসলগুলোর কোনটি বীজ মাটিতে পুঁতে দিয়ে আবার কোনটির বীজ মাটিতে ছিটিয়ে দিয়ে বপন করা যেতে পারে।

যেভাবেই চাষ  করা হোক না কেন পুকুরের পাড়ে সবজি চাষের ফলে সেখানে যথেষ্ট উঁচু থাকার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা কম নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে। অপরদিকে সারাবছরই সেখান থেকে কিছুনা কিছু শাক-সবজি ফলানো সম্ভব। তাতে পারিবারিক সবজির চাহিদা মেটানো যায়। দেশজ শাক-সবজির উৎপাদন বাড়াতে পুকুরের পাড় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

পুকুরে মাছ চাষ এবং তার পাড়ে সবজি চাষের জায়গা বানানো সেই উদ্যোগের এরকমই বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরন তৈরি করেছেন হলদিয়ার বেশ কিছু মাছ চাষি। পাড়ে বিভিন্ন শাক সব্জী আনাজ, ফলের গাছ আবার কেউ কেউ বিভিন্ন পাতা-বাহার গাছ লাগিয়ে মাছের সাথে সাথে সুন্দর ভাবে পাড়টাও কাজে লাগাচ্ছেন।

এই পদ্ধতিতে চাষ করে যারা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন -

এমনই একজন মাছ চাষি হলেন বাড়ঘাসিপুর গ্রামের পবিত্র মুখার্জী। স্থানীয়রা বলেন ওনার হাতে যাদু আছে। পুকুর পাড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ।  পাড় বরাবর এক সারি কলা গাছ। বর্ষার সময়ে পুকুর পাড় থেকে বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে মাচা বানিয়ে করছেন বিভিন্ন শাক সব্জী। পুকুরের চওড়া পাড়ের জমিতে সবজি চাষ করেছেন।সবজির মধ্যে রয়েছে পেঁপে, ঢেঁড়স, বেগুন, মরিচ, লাউ, চাল-কুমড়া, মিষ্টি-কুমড়া, লাল শাক, পুঁই শাক ইত্যাদি। পুকুর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন করে সারিবদ্ধভাবে সাড়ে  পেঁপে, ঢেঁড়স, বেগুন ও মরিচের গাছ রয়েছে। এসব সবজি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে।  এছাড়া কাঁঠাল, লেবু বিভিন্ন ফলের গাছতো আছেই।

দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের নারায়ন বর্মন, পঞ্চানন মন্ত্রীরাও পুকুর পাড়ের সদ্ব্যবহার করছেন। নারায়ন বর্মন তার ফিশারীর পাড়ে লাগিয়েছেন এক বিশেষ জাতের কুল গাছ। প্রচুর ফলনও আসে এর থেকে। আবার এই কুল গাছের কাঁটা থাকার জন্য পাড় বরাবর লম্বা সারির কুল গাছ ভালো বেড়ারও কাজ দিচ্ছে। তাছাড়া আছে দামিক পাতা বাহার গাছ। পাড়ে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক গাছ।  সবজি, ফল ও মাছ বিক্রি করে তিনি লাভবান হচ্ছেন।   

আরও পড়ুন - সহজে শিখুন সূর্যমুখী চাষ সাথে পান দ্বিগুন আয়ের সুযোগ

যাই হোক এটা বলাই যায়, পুকর পাড়ে সবজি চাষ করায় পুকুর পাড় আগাছামুক্ত রাখার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন গাছের শিকড়ের কারণে পুকুরের পাড় ভেঙে পড়ে না। মত্স্য চাষিদের প্রত্যেকের পুকুর পাড়ে জমি ফেলে না রেখে ফল-মূল ও সবজি চাষ করা দরকার। তবে খেয়াল রাখতে হবে বাঁশ জাতীয় ক্ষতিকর গাছ যাতে না থাকে। গাছের পাতা পড়ে পুকুরের জল নষ্ট যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এমন ভাবে কোনো গাছ লাগানো যাবে না যেখানে পুকুরে ছায়ার সৃষ্টি হয়। পরিকল্পিত সমন্বিত মাছ চাষের জন্য মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন - জেনে নিন চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম

Published On: 05 May 2021, 01:57 PM English Summary: How to make extra income from vegetable cultivation

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters