সময়ের সাথে সাথে নারীরা আজ সমাজ সংস্কারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। একটা সময় ছিল যখন নারীরা তাদের ঘরবাড়ি এবং পরিবারের মধ্য়েই সীমাবদ্ধ ছিল।কিন্তু এখন তাঁরা সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে, খেলাধুলা থেকে বিনোদন, রাজনীতি থেকে সামরিক এমনকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যন্ত, মহিলারা কেবল জড়িত নয়! বরং একটি বিশাল ভূমিকা পালন করছে এবং অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করছে।
এ তো গেল নারীদের অভূত পূর্ব সাফল্য়ের কথা। কিন্তু প্রশ্ন হল নারী দিবস উজ্জাপনের প্রয়োজনীয়তা কি? প্রশ্ন আরও একটা মনের মধ্য়ে আছে,নারী আর পুরুষ কি আলাদা নয়?কোন কি পার্থক্য় নেই ? কোন এক অগ্য়াত পুরুষ আমাকে একবার এই প্রশ্নটাই করেছিলেন। আমি তার মুখের উপর সটান জবাব দিয়েছিলাম।পার্থক্য় তো আছেই,এক বিরাট পার্থক্য আছে।‘ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন’।যা কিছু পার্থক্য় শুধু এই দুই হরমোনের।এবার আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে তা হলে লড়াইটা কীসের? লড়াইটা প্রকৃতি প্রদত্ত পার্থক্যের নয়, এ লড়াই মানুষের তৈরি ভেদাভেদ নিয়ে।
‘লেডিজ ফার্স্ট’ শুনতে মেয়েদের তো সমস্যা নেই। ঘটা করে নারী দিবস উদ্যাপন শুরু হয়ে যায় এক সপ্তাহ আগে থেকে। পুরুষ দিবস নিয়ে তো এত মাতামাতি হয় না?এই যে প্রশ্নগুলো, কতটা ঠিক আর কতটা ভুল?প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আপনাকে যে ইতিহাসে যেতে হবে।
১৯০৮ সাল। ১৫ হাজার মহিলা নিউ ইয়র্ক সিটির রস্তায় আন্দোলনে নেমেছিলেন। দাবি— ভোট দেওয়ার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে কাজের সময় কমানো এবং সম বেতনের অধিকার।
আরও পড়ুনঃ শূন্য বৈষম্য দিবস, ১ মার্চ ২০২২
নারীরা মিছিল করে তাদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলেছিলেন। এত বিপুল সংখ্যক মেহনতী নারী কন্ঠস্বর তৎকালীন সরকারকে বুঝিয়ে দিয়েছিল,”আমরা নারী,আমরাও পারি”। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়েছিল। ক্লারা ছিলেন একজন জার্মান রাজনীতিবিদ।
১৯১৭-তে রাশিয়ান মহিলারা একটি স্ট্রাইক করেন, ‘ব্রেড অ্যান্ড পিস’। যুদ্ধে নিহত প্রায় ২ কোটি যোদ্ধার মৃত্যুর প্রতিবাদে।তারা যুদ্ধ সংক্রান্ত তাদের দাবি ও মতামতও তুলে ধরেন। এর পর সম্রাট নিকোলাস তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং নারীরা ভোটের অধিকার পান। তাদের প্রদত্ত অধিকারের পরিপ্রেক্ষিতে, ইউরোপের নারীরাও কয়েকদিন পর ৮ মার্চ কর্মীদের সমর্থনে সমাবেশ করে। এ কারণে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে স্বীকৃতি দেয়।
পৃথিবীর সব ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা সত্ত্বেও, নারীরা আজও তাদের অধিকারের জন্য় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। লড়াইটা বাসে-ট্রেনে রিজার্ভড সিটের লড়াই নয়, লড়াইটা পিরিয়েডস-এর জ্বালাময়ী কষ্ঠ সহ্য় করে হাঁসি মুখে, বাড়ি থেকে শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যোগ্যতা অনুযায়ী সম-অধিকার পাওয়ার।
আরও পড়ুনঃ National Science Day 2022:এই পাঁচজন ভারতের মহিলা বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তাদের অবদান জানুন
আসলে নারীদের লড়াইটা শুধুমাত্র ‘সম’-তেই সীমাবদ্ধ নেই। মেয়েরা ভালো গাড়ি চালাতে পারে না, মেয়েদের মন বোঝা খুব শক্ত,লড়কি হাসি তো ফাঁসি,মেয়েদের মতো কাঁদিস না,কিংবা দাদা একটা স্য়ানিটারি ন্য়াপকিন দিন তো! আর ঠিক তখনই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে লোকটির আড়চোখা নজর। নারীদের প্রত্য়েকদিন এই সব মানসিক সমস্য়াগুলির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।
ফেমিনিজমের আড়ালে অনেকেই নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে তো সবার মানসিকতার প্রকাশ পায় না!একদিন নারী দিবস পালন করে পরিস্থিতি বদলানো যায় না! পরিস্থিতি বদলানোর জন্য় আগে মানসিকতার বদল প্রয়োজন। তাই প্রতিটা দিনই হোক নারী দিবস, প্রতিটা দিনই হোক পুরুষ দিবস। বিচার হোক যোগ্যতায়।
Share your comments