নিউ ইয়ারকে বরণ করে নেবার খুশিতে সমগ্র রাজ্য মাতলেও বিপদ যে আমাদের শিয়রে। পৃথিবীর অক্সিজেন সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণকারী অস্ট্রেলিয়ার অরণ্য এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। বিধ্বংসী দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। আমাজনের পর এবার প্রায় ১০ লক্ষ একর জুড়ে জ্বলছে এই অরণ্য। হতাশাজনক যে, কোনোভাবেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না দেশের সরকার। একমাত্র সমাধান প্রবল বৃষ্টি। দু’ মাসেরও বেশি ধরে চলা ভয়াবহ দাবানলে প্রায় ৫০ কোটি বন্যপ্রাণী নিহত। নিহত মানুষের সংখ্যাও নেহাত নগণ্য নয়। কিন্তু দাবানল এখনো বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই দেশটির ৬ রাজ্যের ৪ টিই দাবানলের কবলে পড়েছে।
এই অরণ্যে রয়েছে নাম না জানা বহু প্রজাতির লক্ষ লক্ষ গাছ, যা আজ বিপন্ন হতে চলেছে। ১৫০০-এর উপর ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন, নিখোঁজ অনেকেই। এই বিধ্বংসী আগুনের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ বনের পশুরা। চারদিক থেকে আগুন এই প্রাণীদের এমনভাবে নাগপাশে আবদ্ধ করেছে যে, পালানোর সুযোগও তারা পাচ্ছে না। আগুনের লেলিহান শিখায় ঝলসে যাচ্ছে তাদের দেহ। কোন কোন প্রাণী কোনোমতে পালিয়ে জনবসতিতে চলে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার মানুষজন এই দূর্গত প্রাণীদের আশ্রয় দিয়ে, তাদের চিকিৎসা এবং খাবারের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। সেই ভয়ার্ত পশুগুলো মানুষ দেখলেই এখন জড়িয়ে ধরছে! বোবা মুখে ভাষা ফোটে না, কিন্তু কাতর আর্তিতে চাইছে সাহায্য।
দগ্ধ-অর্ধদগ্ধ প্রাণীগুলির বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ৩৬ লাখ হেক্টর, কুইন্সল্যান্ডে ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমি পুড়ে গেছে। এছাড়া ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে ৮ লাখ ২০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। এই ভয়াবহ দাবানল মোকাবেলায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। তৎস্বত্বেও ভয়াবহ আগুন এখনও নিয়ন্ত্রনে আসেনি। এই আগুন নিয়ন্ত্রনে না এলে শুধু যে লক্ষ লক্ষ উদ্ভিদ এবং বন্য প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটবে, তা-ই নয়, এর সর্বাধিক ক্ষতির দিকটি হল পরিবেশে এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। কার্বনডাই অক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড এর পরিমান বিপুল বৃদ্ধি পাবে। ফলত বিপদের অশনি সংকেতের ত্রাসে আমাদের সকলেই।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments