সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানিকারিদের বক্তব্য অনুসারে সামুদ্রিকখাদ্য ও চিংড়ির রপ্তানিমূল্য আগামীদিন বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৎসরের শুরু থেকে বাজারে চিংড়ির মূল্যের উত্থানপতন লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। ভারত থেকে রপ্তানিকৃত মোট সামুদ্রিক খাদ্যের মধ্যে ৭০ শতাংশ চিংড়ি রয়েছে যেগুলি সাধারণত পুকুরে চাষ হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এই কারবার থেকে ভারতের মোট ৬০০ মিলিয়ন ডলার অঙ্কের বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিলো।
বর্তমানে আমেরিকার বাজারে চিংড়ির চাহিদা উত্তরোত্তর ভাবে কমতে থাকায় ভারতীয় বাজার চিংড়িতে ছেয়ে গেছে। ভারতে পূর্বের তুলনায় সীফুড বিশেষ করে চিংড়ির রপ্তানি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে কমে গেছে, যে কারণে বিগত বৎসরের তুলনায় চিংড়ির দামেও কিছুটা বৈষম্য দেখা গেছে, কারণ বহু বড় বড় রপ্তানিকারক সংস্থা এখনো ভাবছেন যে আমেরিকায় চিংড়ির চাহিদা আগের মতই হবে এবং এবছরও তারা একটা বৃহৎ লভ্যাংশ আশা করছেন।
ভারতের পূর্ব উপকূলের চিংড়ি প্রায়শই ধারাবাহিকভাবে রোগগ্রস্ত হয় যে কারণে এদের গায়ে একধরণের সাদা দাগ দেখতে পাওয়া যায়, তবে এই রোগগ্রস্ত মাছ মানুষের স্বাস্থ্যের উপড় কতখানি প্রভাব ফেলছে তা এখনও পরীক্ষিত হয় নি, কিন্তু এই রোগের কারণে চিংড়ির উৎপাদন কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে উৎপাদন ও আর্থিক ক্ষতি ঠেকানোর জন্য বহু চাষি নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই মাছ তুলে নিচ্ছে। সবথেকে বেশি অন্ধ্রের মাছচাষিরা এই কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
এই ধরণের কাজের জন্য অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা পড়ে যাওয়াকেও দায়ি করা হচ্ছে, ফলে বহু চাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে চিংড়ির উৎপাদনে কোনো ঘাটা পড়ে নি, বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের মতোই এবছরও প্রায় ছ’লক্ষ টন চিংড়ির উৎপাদন হবে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
পূর্ব উপকূলের ক্ষেত্রে অন্ধ্র ও পশ্চিম উপকূলের ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র ও গুজরাট চিংড়ি উৎপাদনে বেশি উন্নতি করেছে। বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা কমার কারণই হলো চিংড়ির রোগভোগ, তবে গবেষণাতে প্রমাণিত হয়েছে যে ভারতীয় চিংড়ির ক্ষেত্রে রোগভোগের প্রভাব তেমনভাবে এখনো পর্যন্ত প্রতিভাত হয়নি।
চীন ও থাইল্যান্ড থেকে সবথেকে বেশি রোগগ্রস্ত সীফুড তথা চিংড়ির সরবরাহ করা হয়, এবং রোগভোগের কারণে এই দুটি দেশের চিংড়ি তথা সীফুড উৎপাদনে সবথেকে বেশী প্রভাব পড়েছে। এইসময়টাতেই ভারতীয় রপ্তানিকারক সংস্থাগুলি চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজারে বাজিমাত করতে চাইছেন এবং এশিয়ার সর্বোত্তম সীফুড রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের আত্মপ্রকাশের এটাই সবচেয়ে সুবর্ণ সময় তাই সমস্ত রপ্তানিকারক সংস্থাগুলিই চাহিদা বৃদ্ধি বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।
- প্রদীপ পাল