উত্তরবঙ্গের কুমারগ্রাম থেকে জয়গা,কোচবিহার থেকে কারসিয়াং এই সমস্ত এলাকায় মাস্রুম চাষের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে । শুধু সমতল এলাকা গুলিতেই প্রায় ২০ হাজারের বেশী পরিবার এই চাষের সাথে যুক্ত সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে ।কিন্তু এর স্থানীয় বাজার আজও সেভাবে গড়ে ওঠেনি । এর কারন পাহাড়ের বাজারগুলিতে ‘মাস্রুম’ কিছুটা চললেও শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ী,কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালদা এই সব বড় শহরে এর জনপ্রিয়তা এখনো কিছু ব্যক্তিনির্ভর। এই সব চাষিদের মুলতঃ নির্ভর করতে হয় পাহাড়ের উপর অর্থাৎ কিছুটা ভুটান, নেপাল, সিকিম ও আসামের উপর ।এখন সিকিম জৈব রাজ্য ঘোষণা হওয়াতে সেখানে কোন মাশরুম যায় না বললেই চলে,ভুটানেও একই সমস্যা এছাড়া সেখানে সরাসরি কোন সামগ্রী যাওয়া বন্ধ যার ফলে ফরেদের উৎপাতে চাষিরা দাম পায় না,নেপাল কিংবা অসমে সবসময় চাহিদা থাকে না ।মাশরুম (ইংরেজি: Mushroom) এক ধরনের ছত্রাক এবং এদের অধিকাংশই ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোমাইকোটার অন্তভুক্ত। পৃথিবীতে এর প্রায় ১৪ হাজারের মত প্রজাতি রয়েছে ।তবে এর সব গুলোই খাবার উপযূক্ত নয় । চীন,কোরিয়া ও ইউরোপের বেশীরভাগ দেশই এই খাবার যথেষ্ট জনপ্রিয় । নানা পুষ্টি গুনে ভরপুর এই ‘মাস্রুম’ যে অন্য সকল খাদ্যকে অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে সেটি এক নজরে দেখা যাক এর পুষ্টি গুনগুলি দিয়েঃ
এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে থাকে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ০.৮ গ্রাম স্নেহ, ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.৪ গ্রাম আঁশ, ৪.৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মি. গ্রাম কেলসিয়াম, ১১০ মি. গ্রাম ফসফরাস, ১.৫ মি. গ্রাম লৌহ, ০.১৪ মি. গ্রাম ভিটামিন বি১, ০.১৬ মি. গ্রাম বি২, ২.৪ মি. গ্রাম নায়াসিন, ১২ মি. গ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ কেলোরি। সাধারণত মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশি এবং প্রচলিত শাক-সবজির চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাক-সবজির চেয়ে চারগুণ। এছাড়াও এতে যে ফলিক এসিড থাকে তা অ্যামিনিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমুত্র রোগী এবং যারা মোটা তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার। এটা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজেই হজম হয়।
“সানডে হো ইয়া মানডে রোজ খাইয়ে আনডে”…বিজ্ঞাপন ছিল ডিম এর পুষ্টির গুরুত্ব ও পোলট্রি র ব্যবসায়িক উদ্যোগ বৃদ্ধির জন্য আমদের দেশের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ।স্বম্ভাবনা ও বাজার থাকা সত্বেও ঠিক ‘মাশরুম’ আমাদের খাদ্য তালিকায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটির প্রচার বা গুরুত্ব বোঝানোর জন্য আজ অবধি যৎসামান্যই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । তাই এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি সেভাবে । আজও বেশিরভাগ সাধারন মানুষই এটি শখ করে এক আদ্দিন খায়,দামি রেস্তরাঁ কিংবা হোটেলে এটি কিছুটা জনপ্রিয় হলেও তা সংখ্যায় খুবই কম এছাড়া কেবল মাত্র বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ও কিছু বিদ্যলায়ে মিড ডে মিলে খাওয়ালে এর সার্বজনিক প্রচার ও প্রসার অসম্ভব । যে ভাবে এক সময় সয়াবিনের পুষ্টির গুনাগুন বোঝার জন্য ওটাকে শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকে নয়, বিভিন্ন ভাবে সয়াবিনের প্রচার চালিয়ে এটাকে সাধারন মানুষের খাদ্য তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই যদি ‘মাস্রুম’ কে অন্যতম সুস্বাদু সস্তা সহজপচ্চ্য ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে প্রচার করা যায় তবে কে বলতে পারে একদিন উত্তরবঙ্গের ‘মাস্রুম’ দেশ ছড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দেবে না!শুধু তাই নয় এই এলাকায় একটি বিকল্প রোজগারের রাস্তা খুলে যাবে বলে আমার মনে হয়।
- অমরজ্যোতি রায়
Share your comments