
পশ্চিম বাংলার বেগুনের চাহিদা দেশের সীমানা ছা়ড়িয়ে বিদেশও বাড়ছে। কিন্তু বাংলার রকমারি বেগুন বিদেশে সে ভাবে রফতানি করা যাচ্ছে না। কারণটা অবশ্য একটাই — কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। ফলে আনাজের মাধ্যমে আমাদের শরীরে ঢুকছে ক্ষতিকর বিষ। তাই বিদেশের বাজারে সমাদর মিলছেনা বাঙলার সবজির।
বিষ প্রয়োগ না করেও এ বার পোকা ধরার প্রযুক্তি চাষির কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করল এরিয়ান ইনডাসট্রি। কিছুটা পুরনো ফেরোমন ফাঁদের সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন প্রযুক্তি। সৌর চালিত আলোক-ফাঁদ।
এই আলোক এবং হরমোনের টোপে পোকারা এসে সহজেই ফাঁদে পড়ে মরছে। দেগঙ্গা, আমডাঙা, বারাসতের যে সব চাষিরা এই আলোক-ফাঁদ ব্যবহার করছেন, মাত্র কয়েক দিনে তাঁদের কীটনাশকের খরচ প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। তাতে চাষের খরচ কমে বাড়ছে লাভও। সব থেকে বড় লাভ, পাতে পড়ছে বিষহীন আনাজ।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বেগুনের পোকা আটকানো প্রায় অসম্ভব। কারণ, এই পোকা ফল বা বেগুন ফুটো করে ভিতরে ঢুকে যায়। এই পোকার নাম ‘ফ্রুট অ্যান্ড শুট বোরার’। বাংলায় বলা হয় ছিদ্রকারী পোকা। বেগুনের পোকার পূর্ণাঙ্গ অবস্থা হচ্ছে মথ। এই মথ পাতার নীচের দিকে ডিম পাড়ে। পোকার লার্ভা ছোট বেগুনের নীচের দিকে ফুটো করে ভিতরে ঢুকে পড়ে। বেগুন খেয়ে পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় তারা বেগুনের উপরের দিক ফুটো করে বাইরে বেরিয়ে আসে। পোকায় খাওয়া বেগুন বাজারে বিক্রি করা যায় না।
এই পোকা জব্দ করার উপায় কী?
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, পোকার বংশবৃদ্ধি বন্ধ করাই একমাত্র পথ। হরমোন আলোক-ফাঁদ সেই কাজটাই করছে।
কী ভাবে?
বেগুন খেতের পোকারা নিশাচর। ফলে রাতে ছাড়া তাদের মারার উপায় নেই। কীটনাশক দিনে স্প্রে করা হয়। নতুন আলোক-ফাঁদের উপরে রয়েছে একটি সৌরবাতি। দিনে সূর্যের আলোয় তা চার্জ হয়ে থাকে। অন্ধকার হলে নিজে থেকেই জ্বলে ওঠে। তার নীচে রয়েছে একটি প্লাস্টিকের পাত্র। সেই জল ভর্তি পাত্রে কেরোসিন বা সামান্য কীটনাশক মিশিয়ে রাখা হচ্ছে।
সেই পাত্রের সঙ্গে লাগানো দু’টি ছোট প্রকোষ্ঠে থাকছে ফেরোমন ট্যাবলেট। এটি আসলে হরমোন। সেই হরমোনের গন্ধে এবং বাতির আলো লক্ষ্য করে পুরুষ পোকারা এসে বিষ-জলে পড়ছে। তার ফলে পোকার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে কীটনাশক স্প্রে করলে পোকার ডিম বা লার্ভা নষ্ট হয়। কিন্তু আলোক-ফাঁদে পূর্ণাঙ্গ পোকা মরে।
দেগঙ্গার একটি ফার্মার্স ক্লাবের প্রধান সুদর্শন মণ্ডল এই আলোক- ফাঁদ ব্যবহার করে উৎফুল্ল। তিনি বললেন, ‘‘সপ্তাহখানেকের ব্যবহারে বেগুন খেতে পোকার দাপট অনেক কমে গিয়েছে। কীটনাশকের খরচ প্রায় শূন্য। আমাদের এলাকা থেকে বিদেশে অনেক আনাজ যায়। কিন্তু বিষের ব্যবহারের জন্য তা বাতিল হয়ে যেত। আশা করি, এ বার আর তা হবে না।’’
একটি যন্ত্রের দাম প্রায় আটশো টাকা। যদিও এর মধ্যে ২৫০ টাকার সরকারি ভর্তুকি আছে। একটি যন্ত্র দু’মরসুমের বেশি ব্যবহার করা যাবে। চাষিরা বলছেন, এক মরসুমে এক বিঘা বেগুন খেতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার কীটনাশক ছড়াতে হয়। এটি বিক্রি করছে ফার্মার্স-প্রোডিউসার্স অর্গানাইজেশন (এফ পি ও)। বারাসত ১ ব্লকের এফপিও-র প্রধান শঙ্কর জানা নিজের জমিতেও বসিয়েছেন এই যন্ত্র। এক বিঘা জমিতে একটি যন্ত্রই যথেষ্ট বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
চাষবাসে কীট-পোকা দমনে সৌরচালিত আলোক ফাঁদ সংগ্রহ করতে যোগাযোগ করুন –
শ্রী সুরজিত কুমার দে, উত্তর ২৪ পরগণা (মোবাইল - ৮০১৭৭৭৪৩৩০, ৯৮৩১৬৯০৫১৩)
অন্যান্য যোগাযোগ:
- নদীয়া – রবীন্দ্র শিল (৯৪৩৩৩৪২২৮৫)
- বাঁকুরা, পুরুলিয়া ও বর্ধমান – অভিজিৎ রায় (৭০০১০৬৫২৮১)
- গোয়াহাটি - এস এল মেহমুদ (৮৮১২৮৪১২৩০,৭৩৯৯৯২৪৪৪৯)
- আব্দুল রাউফ, উত্তর ২৪ পরগণা (৭৫০১০৯২০৩২)
- পাটনা, রজনীকান্ত দত্ত (৯৪৩৪২২০১৭৬)
- আগরতলা, ত্রিপুরা - পঙ্কজ রায়,(৯১৮৯৭৪৮৬৪২৫৩)
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments