
কৃষি মজুরের অভাব এবং কম খরচে দ্রুত কৃষিকাজ সম্পন্ন করতে পশ্চিমবঙ্গে কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫-৬০ মিনিটে এক একর জমির ধান কাটা, ঝাড়া, দানা পরিষ্কার হয়ে বস্তাবন্দি হয়ে যাচ্ছে। খুবই সুবিধা, স্বাভাবিকভাবে এর চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টারে ফসল কাটার পরে ধানখেতে আগোছালো খড় ও প্রায় ১০ ইঞ্চি লম্বা নাড়া পড়ে থাকছে। পরবর্তী ফসল চাষের জন্য জমি দ্রুত ফাঁকা করতে জমিতে পড়ে থাকা খড় ও নাড়া পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে এলাকার শস্য নিবিড়তা বেশি, সেখানে বিশেষত আমন ধান কাটার পরে খড় ও নাড়া পোড়ানোর প্রবনতা বেশি। আমাদের রাজ্যে আমন ধান কাটা হয় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে এবং বোরো ধান কাটা হয় এপ্রিল-মে মাসে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার চালানোর কয়েকদিন পরে খড় ও নাড়া কিছুটা শুকিয়ে গেলে আগুন লাগানো হচ্ছে।
বর্তমান অবস্থা
গত কয়েক বছর ধরে পূর্ব বর্ধমান সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে দেখা যাচ্ছে ধান কাটার পরে,জমিতে গাছের গোড়া পোড়ানো চাষিদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যে আমন ও বোরো ধান মিলিয়ে ৫৩ লক্ষ হেক্টর এলাকার ৪-৫ শতাংশ এলাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। যন্ত্রে কাটা মোট খড়ের ২৫-৩০ % অংশ পোড়ানো হচ্ছে। প্রতি একরে ১২-১৬ কুইন্টাল খড় ও নাড়া উৎপন্ন হয়। আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে মোট ধান চাষ এলাকার ৩০ শতাংশ এলাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা। ১ টন(১০ কুইন্টাল) খড় পোড়ালে ১৪৬০ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড ও ৬০ কেজি কার্বন মনো অক্সাইড, ১৯৯ কেজি ছাই, ২ কেজি সালফার ডাই অক্সাইড, ০.৭-৪.১ কেজি মিথেন, ০.০২-০.০৬ কেজি নাইট্রাস অক্সাইড, ৩ কেজি এরোসল কনা উৎপন্ন হয়। এছাড়া হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, ডাই অক্সিন ও ফুরান উৎপন্ন হয়।
আরও পড়ুনঃ স্ট্রবেরি পেয়ারা দেখেছেন? শিখে নিন এই বিদেশি ফলের চাষ পদ্ধতি
কেন খড় পোড়ানো হচ্ছে
-
ধানেরপরেরফসলেরকিংবাকৃষিকাজেরজন্যদ্রুতজমিফাঁকাকরাদরকার।কেননাপড়েথাকাখড়ওনাড়ারজন্যসাধারনকর্ষণযন্ত্রজমিতেচালানোযাচ্ছেনা।তাইসহজউপায়আগুনলাগানো।
-
খড় ও নাড়া না পুড়িয়ে জমির সঙ্গে মিশিয়ে পরের ফসল লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অপ্রতুলতা ও তা খরচসাপেক্ষ।
-
আগেকার দিনে জমিতে পোকা মাকড় মাড়তে আগুন দেওয়ার রীতি ছিল। বহু চাষিরা তাদের বাবা দাদুদের এই কাজ করতে দেখেছে।সেখান থেকে অনেকের ধারনা এতে জমির উর্বরতা ও স্বাস্থ্য ভালো হয়।
খড় পোড়ানোর খারাপ দিক গুলি কিকি
-
ধোঁয়া, এরোসলকনাওকুয়াশামিলেঘনধোঁয়াশাউৎপন্নকরেবায়ুরদৃশ্যমানতাহ্রাসকরে।যেজন্যশীতকালেপাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, পশ্চিমউত্তরপ্রদেশেগাড়ি, ট্রেনওবিমানচলাচলবিঘ্নিত হওয়া খুবই নজরে আসে।
-
এক একরে ১২-১৬ কুইন্টাল খড় উৎপন্ন হয়। প্রতি ১০ কুইন্টাল খড় পোড়ালে ৫.৫ কেজি নাইট্রোজেন, ২.৯ কেজি ফসফরাস, ২৫ কেজি পটাসিয়াম, ১.২ কেজি সালফার, ৪০০ কেজি কার্বন ও ৫০-৭০ শতাংশ অনুখাদ্য নষ্ট হয়।নাড়া পোড়ানোর ফলে ওইসব মৌল বিষাক্ত গ্যাসে পরিনত হয়ে বাতাসে মিশছে। এর থেকে প্রচুর পরিমানে বায়ু দূষণ ঘটছে। আগুন দিলে জমির নরম মাটির সঙ্গে উপকারী পোকা প্রাণী, জীবাণু ও কেঁচো নষ্ট হয়ে যায়।
-
চাষের জন্য জমির উপরিভাগের ছয় ইঞ্চি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, নাড়া পোড়ানোর ফলে সব থেকে ক্ষতি হয় এই অংশেরই।এর ফলে জমি বন্ধ্যা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন, ২৫ কোটি টাকার পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের আশা
খড় বা নাড়া না পুড়িয়ে কৃষিতে এবং অন্যান্য কাজে খড়ের পুনঃব্যবহার
-
মাশরুম ও কম্পোসটতৈরির কাজে খড় ব্যবহার করা যেতে পারে। মাশরুম উৎপাদনে কুচানো খড় ব্যবহার করা হয়। খড় পচিয়ে কম্পোসট সার জমিতে ফেরত দিলে উর্বরতা ও জলধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
-
জমিতেনাড়া পোড়ানো আটকাতে পরীক্ষা মূলক ভাবে ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ দ্বারা প্রস্তুত নাড়া পচানোর বিশেষ ক্যাপসুল চাষিদের দেওয়া যেতে পারে। ক্যাপসুলটির মধ্যে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকছে, সেগুলি নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহৃত হলে জমির উর্বরতা বাড়বে।
-
ধানখেতেরখড়বেলারযন্ত্রেরসাহায্যেগাঁটতৈরিকরেখেতথেকেনিয়েঅনেককমযায়গায়মজুতকরাযায়।কম্বাইন্ড হারভেস্টার, হ্যাপিসিডার, শ্রাব মাস্টার, কাটার কাম স্প্রেডার প্রভৃতি যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে।
-
শিল্পেরকাঁচামাল- কাগজশিল্প, ইটতৈরি শিল্প, বায়োমাস প্ল্যান্ট, ইথানল প্ল্যান্ট এ খড় ব্যবহার করা যাবে।
Share your comments