ভারত সরকারের তরফ থেকে ভারতে প্রতিদিন যে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যদ্রব্যের অপচয় হয় তার জন্য এক বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এবং এই বিষয়ে একটি বিশেষ দেশের সাহায্য নিতে আগ্রহী হয়েছেন যারা এই খাদ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করছে। ভারতীয় ইউনিয়ন ফুড প্রসেসিং বিভাগের মন্ত্রী শ্রী হরসিম্রত কৌর বাদল, যিনি সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ফুড সামিট ২০১৮ এ অংশগ্রহণের জন্য কোপেনহেগেন-এ রয়েছেন, বলেছেন যে ভারতে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণের উন্নতি করতে হলে আর বেশী করে আন্তর্জাতীক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেছেন ভারত খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির সাথে একি সারিতে রয়েছে এবং ভারত সরকার এই খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও ভোগের সময় যে পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী বিনষ্ট হয় সেটা কমানোর জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এবং এই কাজে সরকার বিদেশি অংশীদার ও প্রযুক্তির সাহায্যকে পুরোমাত্রায় ব্যবহার করছে।বাদল ডেনমার্কের খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রে নিযুক্ত উন্নত প্রযুক্তির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন ভারতকে এই ব্যাপারে এই ছোটো দেশটার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে হবে এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে আগামী দশকে দেশের বিনষ্ট খাদ্যের পরিমাণ কম করা যায়।
তিনি এখানকার বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগের অত্যন্ত প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে ভারতের ডেনমার্কের ড্যানফোর্সের মতো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া উচিৎ, কারণ এই কোম্পানিটি এই দেশে খাদ্যসুরক্ষার ক্ষেত্রে খুব সুন্দর কাজ করছে। ড্যানফোর্স হলো ডেনমার্কের একটি রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশন যন্ত্রের সংস্থা, যারা ভারতের তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে কাজ করতে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়েছে, এখানে তারা এমন কাজ করেছে যে এই রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়েছে এবং তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য ইউরোপীয় বাজারে রপ্তানি করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেছেন যে, আমাদের খাদ্য আমাদের পাতে আসার আগেই অনেকটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যেখানে পশ্চিমী দেশগুলোতে খাদ্য তাদের পাতে পরার পর বিনষ্ট হচ্ছে। ভারতে প্রচুর খাদ্য উৎপাদন হয়, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু এই উৎপাদিত খাদ্যের অনেকটাই বিনষ্ট হয়ে যায় উৎপাদন চলাকালীন, যা আমাদের দেশের অনেক বুভুক্ষু মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারতো।
ডেনমার্কের পরিবেশ ও খাদ্য মন্ত্রী জেকব এলিম্যান-জেন্সন বলেছেন যে সারা বিশ্বে প্রতিবৎসর প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়, যা নাকি মানুষের ব্যবহৃত মোট খাদ্যের ২৪%। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ডেনমার্কের সাথে পশুপালন, খাদ্যসুরক্ষা, ও কৃষি গবেষণার বিষয়ে মৌ সই হয়েছে। আমাদের সরকার এই বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে প্রযুক্তি ও সঠিক সরবরাহ পদ্ধতিকে ব্যবহার করে ভারতে বুভুক্ষু মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া যায়।
এটা উল্লেখ্য যে, খাদ্য বিনষ্ট বিষয়টি শুধুমাত্র ফল, সবজি বা সামুদ্রিক খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে আবদ্ধ নেই, দুধের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি যথেষ্ট পরিমাণে চোখে পড়ছে। ভারতবর্ষ সারা বিশ্বে সবজি উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, তবুও বিশ্ব রপ্তানি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে এই ক্ষেত্রে ভারতের বৈদেশিক রপ্তানি মাত্র ১.৩%। এর একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে মজুতকরণের পরিকাঠামোগত অভাব। সরকারি তথ্যানুসারে, ভারতে সামগ্রিক উৎপাদনের মাত্র ৬% মজুতঘরে যায়, যেখানে একতা উন্নত বিপণনের ক্ষেত্রে পরিমাণটা হওয়া উচিৎ ৭০%।
- প্রদীপ পাল
Share your comments