স্বল্প খরচে অধিক আয়ের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে সুধা পদ্ধতিতে আমন ধান উৎপাদনে জোর দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা কৃষি দপ্তর। কৃষি দপ্তর জানিয়েছে, প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় নতুন এই পদ্ধতিতে খরচ অনেকটা কম হয়। বীজতলায় বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সুস্থ সবল চারা তৈরি করে উৎপাদন সহজেই বৃদ্ধি করা যাবে। তবে বীজতলায় নিয়মিত আগাছা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এই পদ্ধতিতে বর্ষাকালীন বৃষ্টির উপর নির্ভরতাও কমবে। এবছরই জেলার বিভিন্ন ফারমার্স ক্লাব ও এফপিও’র মাধ্যমে প্রথম চাষ হচ্ছে। জলপাইগুড়ির কৃষি আধিকারিক মেহফুজ আহমেদ বলেন, জেলায় ২০০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সুধা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। চাষিদের বীজ বিতরণ করা হচ্ছে। তাই সামান্য খরচে গজলডোবা, ঝাকুয়াপাড়া, ক্রান্তি ও ময়নাগুড়ির বিভিন্ন ফারমার্স ক্লাব সহ ফারমার্স প্রডিউসার অর্গানাইজেশনের (এফপিও) মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু হচ্ছে। চাষে একর প্রতি বীজ লাগে সাড়ে চার কেজির মতো। খরচও তুলনায় অনেকটা কম হয়। বিঘা প্রতি ২২ মন ধান উৎপাদন হবে।
ষ সম্বন্ধে আরও জানতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সুধা পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বীজতলা তৈরি করে সুস্থ ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন চারা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে এক একর জমির চারা রোপণ করার জন্য বীজতলা করতে পাঁচ ডেসিমেল জমি লাগবে। এই পরিমাণ বীজতলা জন্য ২০০ কেজি জৈব সার, ৫০০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ২ কেজি ফসফেটের সঙ্গে ২০০ গ্রাম বরিক পাউডার এবং ৫০০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ১৫ দিন অন্তর বীজতলায় প্রতিবারে ৪০০-৫০০ গ্রাম নাইট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের ১০-২০ দিনের মাথায় আগাছা দমন করতে হবে। বীজতলায় ছিপ ছিপে জল রাখতে হবে। চারা তোলার ঠিক সাত দিন আগে বীজতলায় কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তবে বীজতলা থেকে চারা তোলার ঠিক ছ’ঘণ্টার মধ্যেই মূল জমিতে চারা রোপণ করতেই হবে। সেই চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে গুছিতে একটি করে মূল জমিতে রোপণ করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি আমন ধানের ক্ষেত্রে ৫০-৬০ দিনের চারা ২০ সেন্টিমিটার বাই ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে বসাতে হবে। মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা সারি থেকে সারি ও গাছ থেকে গাছ ২০ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। মূল জমিতে দীর্ঘমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ হবে ৮০ কেজি নাইট্রোজেন, ৩২ কেজি ফসফেট এবং ৪০ কেজি পটাশ। অর্থাৎ প্রথম চাপানে একের দুই ভাগ ও দ্বিতীয় চাপানে একের চার ভাগ নাইট্রোজেন যথাক্রমে একের দুই ভাগ পটাশ দিতে হবে।
মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ৬০ কেজি নাইট্রোজেন, ২৪ কেজি ফসফেট, ৩০ কেজি পটাশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে একবার চাপান দিতে হবে একের দুই ভাগ নাইট্রোজেন ও পটাশ। অনুখাদ্য হিসাবে ১ গ্রাম চিলেটেড জিঙ্ক, ২০ শতাংশ বোরন ২ গ্রাম, ইউরিয়া ১০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে প্রথমে সর্বাধিক পাশকাটি আসার সময় ও দ্বিতীয়বার থোর আসার আগে স্প্রে করতে হবে।
- তন্ময় কর্মকার
Share your comments