
গতকাল ডঃ মানকম্বু সাম্বাশিভন স্বামীনাথনের ৯৩ তম জন্মবার্ষিকি উদযাপিত হল কৃষিজাগরণের মুখ্য কার্যালয়ে। কৃষি জাগরণ মিডিয়া গ্রুপের তরফ থেকে ডঃ স্বামীনাথনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে এই সংস্থার প্রতিটি সদস্য বিশেষভাবে আনন্দিত হয়েছেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ই আগস্ট ডঃ স্বামীনাথন জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত কুম্বাকোনাম অঞ্চলে। তিনি একজন আন্তর্জাতিক কৃষি প্রশাসক, ভারতীয় ফসলের জিনতত্ত্বের প্রয়োগের আবিষ্কর্তা, ও ভারতীয় কৃষিতে “সবুজ বিপ্লব” এর জনক হিসাবে বিখ্যাত। অনাবাদি জমিতে কীকরে উচ্চফলনশীল ধান ও গম বীজ প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে কৃষকের মুখে হাঁসি ফোটানো যায় সেই ব্যবস্থার ইতিবাচক প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেন। তিনি বর্তমানে এম এস স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান , তিনি নিজের হাতে করেই ভারতীয় কৃষক ও কৃষির উন্নয়নের স্বার্থে এই গবেষণাগারের স্থাপনা করেন ।
তার কাজের একমাত্র লক্ষ্যমাত্রা কীকরে পৃথিবীর বুক থেকে ক্ষুধা ও গরিবি দূর করা যায়। স্বামীনাথন পরিবেশ বান্ধব ভাবে প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা ও প্রচলিত খাদ্য-সুরক্ষা ব্যবস্থাকে বজায় রেখে চলমান ভারতীয় কৃষি উন্নয়ন এর ভাবনা চিন্তা করেন, এবং তিনি কখনোই চান না যে কৃষির উন্নয়নের কারণে দেশের জীব বৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটুক। তিনি তার প্রচলিত কৃষি উন্নয়নের ব্যবস্থার নামকরণ করেছেন “এভারগ্রীণ রিভলিউশন”।

কৃষিজাগরণ মিডিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে এই মহান ব্যক্তিত্বকে যে শুধুমাত্র জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হয়েছে তাই নয়, ভারতীয় কৃষির উন্নয়নের স্বার্থে তার যে মহান কার্যকেও সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়। কৃষিজাগরণ মিডিয়া গ্রুপের এডিটর ইন চিফ্ মিঃ এম সি ডমিনিক জানান ডঃ স্বামীনাথন হলেন এমন একজন মানুষ যিনি সমগ্র বিশ্বের কৃষিজগৎ-কে তাঁর কাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত করেছেন। ভারতীয় কৃষিকে উন্নতির পথে আনার জন্য তিনি অনেক স্বার্থত্যাগ করেছেন, এবং সেই পরাধীন ভারতের জরাজীর্ণ কৃষি ব্যবস্থাকে নতুন রূপদান করতে তিনি এখনো অনেক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছেন, শুধু তাই নয়, কৃষিজাগরণ মিডিয়া গ্রুপকেও তিনি অনুপ্রাণিত করেছেন কৃষি ও কৃষকদের হিতে কাজ করবার জন্য, যাতে দেশ থেকে সমস্ত রকমের দুর্ভিক্ষ ও অভাব দূরীভূত হয়। আমরা এই গ্রুপের সদস্য হিসেবে তাঁর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য বদ্ধপরিকর।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব্ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এর একজন ডিরেক্টর জেনারেল পদে কাজ করেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮০ সালে তিনি ভারত সরকারের কৃষিমন্ত্রকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্ডিয়ান রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এ ডিরেক্টর জেনারেলের পদে কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর থে কন্সারভেশন অফ নেচার এন্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস এর সভাপতি নির্বাচিত হন।

তাঁর সুদীর্ঘ কর্মজীবনে ডঃ স্বামীনাথন পৃথিবী ও ভারত বিখ্যাত পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করেন, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলি হলো ওয়ার্লড ফুড প্রাইজ ১৯৮৭, পদ্মভূষণ, ইন্দিরাগান্ধী কৃষি পুরস্কার ১৯৯৯, পদ্মশ্রী, ইন্দিরা গান্ধী এওয়ার্ড ফর ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন ২০১৩, এলবার্ট আইনস্টাইন ওয়ার্লড অ্যাওয়ার্ড ১৯৮৬, পদ্ম-বিভূষণ, রামন ম্যাগসাইসে অ্যাওয়ার্ড, চারটি স্বাধীনতা সংগ্রাম পুরস্কার, লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড২০১০ ইত্যাদি।
এই মহান কৃষি ব্যক্তিত্বকে আমরা কৃষিজাগরণ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে কুর্ণিশ জানাই ও তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
- প্রদীপ পাল
Share your comments