মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য জিঙ্ক বা দস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিঙ্ক ছাড়া জীবনই অচল। বর্তমানে জিঙ্কের ঘাটতি বিশেষকরে বাচ্চাদের ও শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম, খুব বেড়ে গিয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে এ নিয়ে চর্চা হচ্ছে । উন্নতকামী দেশগুলিতে মৃত্যু এবং রোগের জন্য জিঙ্কের ঘাটতিকে পঞ্চম কারণ (পৌষ্টিক তত্বের ভিত্তিতে) হিসেবে চাহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, জিঙ্কের অভাবে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সাড়ে চার লক্ষ পাঁচ বছরের নিচের শিশু।
একটি হিসেবে দেখা গিয়েছে যে এশিয়া এবং সাব-সাহারান আফ্রিকার ৬০-৭০ % মানুষ কম পরিমান জিঙ্ক আত্তীকরণ করে যা আশংকার বিষয়। সংখ্যার দিক দিয়ে তা এশিয়াতে হবে ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) এবং সাব-সাহারান আফ্রিকাতে এই সংখ্যা হবে ৪০ কোটি (৪০০ মিলিয়ন)। মাটিতে এবং মানুষের মধ্যে জিঙ্ক ধাটতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে (চিত্র – ২)। এটা মনে করা হয় যে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ জিঙ্কের অভাবে ভোগে।
মানুষের শরীরে বহু জৈবিক কার্য্যকলাপে জিঙ্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। বড়দের শরীরে ২-৩ গ্রাম জিঙ্ক থাকে। এই উপাদান(জিঙ্ক) শরীরের সমস্ত অংশ থেকে যেমন – অর্গ্যান, টিস্যু, হাড়, ফ্লুইডস এবং কোষ। মানুষের শরীরে থাকা প্রায় ৩০০ টি উৎসেচকের (এনজাইম) সঙ্গে জিঙ্ক যুক্ত; নানা ধরনের ক্রিয়া-কার্য এই দস্তার মাধ্যমে হয়; যেমন – উচ্চতা, ওজন এবং হাড়ের বিকাশ, কোষ বৃদ্ধি ও বিভাজন, প্রতিরোধী ক্ষমতা, ফার্টিলিটি, স্বাদ, গন্ধ, চামড়া, চুল, নোখ ও দৃষ্টিশক্তি।
জিঙ্কের অভাবে মানুষের বিশেষ করে বাচ্চা ও শিশুদের মধ্যে যে রোগ হয়, তা হল পেটখারাপ (ডায়ারিয়া), নিমেনিয়া, বিকাশের গতি স্লথ, দুর্বল প্রতিরোধী ক্ষমতা, মানসিক পঙ্গুত্ব, খর্বাকৃতি আকার ইত্যাদি।
জিঙ্ক বা দস্তার এই বিশাল ঘাটতি উন্নয়নশীল দেশ বিশেষকরে ভারতে মানুষের মধ্যে ম্যালনিউট্রিশনের অবস্থা সৃষ্টি করেছে। সারা দেশে পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাদের অত্যধিক পাতলা পায়খানা ও নিউমোনিয়া হয় দেখে সহজেই বোঝা যায় যে ভারতে জিঙ্কের ক্রমবর্ধমান অভাব খুবই চিন্তার বিষয় এবং এই বৃদ্ধির পরিমাণ সাব-সাহারা আফ্রিকা দেশ ও প্রতিবেশী দেশ থেকে অনেক বেশী (চিত্র ৩) যার ফলে জিঙ্ক ঘাটতির প্রাসঙ্গিকতা ভারত সরকার ও তার নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং মানুষের জীবনে জিঙ্কের গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
জিঙ্ক ম্যালনিউট্রিশন (সম্ভাব্য সমাধান)
জিঙ্ক ম্যালনিউট্রিশন দূর করতে সম্ভাব্য সমাধানের রাস্তা হলো –
(১) খাদ্য সাপ্লিমেন্টেশন্,
(২) খাদ্য ফর্টিফিকেশন্,
(৩) বায়ো ফর্টিফিকেশন্।
প্রথম দুটি কর্মসূচীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ক্রয় করার ক্ষমতা , বাজারকে কাছে পাওয়া , স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র এবং অর্থের নিয়মিত যোগান খুবই জরুরী। এই সব ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আর এই ধরনের কর্মসূচী শহরের পক্ষে খুবই উপযুক্ত বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যেখানে লোকজন পাওয়া অত্যন্ত সহজ।
বিপরীতভাবে শেষ কর্মসূচী অর্থাৎ বায়োফর্টিফিকেশন্ বিশেষকরে খাদ্যশস্যে জিঙ্ক ফর্টিফিকেশন জিঙ্কের ঘাটতি দূর করতে সর্বোত্তম বিকল্প ব্যবস্থা। গ্রাম ও শহরে, উভয় জায়গাতেই এই বায়োফর্টিফিকেশনের কাজ করা সম্ভব। দুই প্রকারে এই কর্মসূচী কাজে লাগানো যায়; যেমন – (১) জেনেটিক বায়োফর্টিফিকেশন্ ও (২) এগ্রোনমিক বায়োফর্টিফিকেশন্ ।
Share your comments