কৃষিজাগরন ডেস্কঃ এবার মৎস্যজীবীদের জন্য দরাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রায় ১৫ লক্ষ মৎস্যজীবীকে বিনামূল্যে ৫ লক্ষ টাকার বিমা দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। আগামী ১ নভেম্বর থেকে দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে মৎস্যজীবীরা এই প্রকল্পে তাদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এই প্রকল্পের জন্য প্রত্যেক 'দুয়ারে সরকার' শিবিরে এবার একটি আলাদা কাউন্টারও থাকবে।
এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হল, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত মৎস্যজীবীদের বীমার আওতায় নিয়ে এসে তাদের জীবনকে সুরক্ষিত করা।এ প্রসঙ্গে মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী একান্ত সাক্ষাত্কারে বলেন,“মৎস্যজীবীদের একাংশ প্রায় সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়,মাছ ধরতে গিয়ে এমন দুর্ঘটনা ঘটে যে তাঁরা প্রাণ হারায়।তখন ব্যপারটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হয়। সেজন্য একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে মৎস্যজীবীদের একটা বীমা করে দিলে তাঁরা ৫ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত পেতে পারবে এবং তাদের জীবন সুরক্ষিত হবে”।
আরও পড়ুনঃ খড়গেই নতুন সভাপতি,১০৭২ ভোট পেয়ে তারুর রইলেন অন্তরালেই
তিনি আরও বলেন, “এই যে ব্যাপারটা এটার মধ্যে কতগুলি পদ্ধতি আছে। যেগুলো মেনে চলতে হবে আমাদের।তার মধ্যে একটা হচ্ছে দুর্ঘটনাজনিত জীবন বীমা।এর একটা প্রিমিয়াম আছে, ৭২ টাকা ৪০ পয়সা করে” ।
দুয়ারে সরকার শিবিরে আহ্বান জানিয়ে মৎস্যমন্ত্রী মৎস্যজীবীদের উদ্দ্যেশে বলেন,“এখন আগের থেকে মৎস্যজীবীদের সুযোগ সুবিধা অনেক বাড়ছে..দুয়ারে সরকার ১লা নভেম্বর থেকে শুরু হবে।সমস্ত মৎস্যজীবীদের আহ্বান জানিয়ে বলব তোমরা সবাই এই কার্ডে নিজেদের নাম নথিভুক্ত কর”।
তাঁর সংযোজন,“আমরা সবাইকে বারকোড যুক্ত একটি করে কার্ড দেব।এই কার্ড থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।সেই সঙ্গে তাদের সামগ্রীক উপকারও হবে।ধাপে ধাপে আমরা অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করছি”।
এত আর্থিক টানাটানির মধ্যে দিয়েও প্রায় ১৫ লক্ষ মৎস্যজীবীদের বীমার আওতায় নিয়ে আসা হবে।কীভাবে সম্ভব হচ্ছে?জানতে চাওয়া হলে বিপ্লব বাবু বলেন,“ইনস্যুরেন্সর মধ্যে দিয়ে আমরা গোটা ব্যাপারটা কভার করছি।ফলে ওদেরও কোনও অসুবিধা হবে না আমাদেরও কোনও অসুবিধা হবে না”।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৎস্যজীবীরা পাড়ি দেন মাঝ সমুদ্রে। সেখানে অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হয় তাদের। প্রাণহানি পর্যন্ত হয়।অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারগুলি। তাই এই বীমা প্রকল্প মৎস্যজীবীদের উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
আরও পড়ুনঃ এবার রাজ্যেও লাম্পি ভাইরাসের হাতছানি, আক্রান্ত ২
২০২১ সালের আগস্ট মাসে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম রাজ্যের তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরিকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন 'কৃষক বন্ধুর' অনুরূপ কোনও প্রকল্প চালু করলে রাজ্যের মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। এ বিষয়টি রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরীর নজরে আসতেই কাজ শুরু করে দেয় মৎস্য দফতর
দুয়ারে সরকার শিবিরের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের নাম নিবন্ধীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করবে রাজ্য সরকার। তার ভিত্তিতে প্রত্যেক মৎসজীবীকে একটি করে সচিত্র পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। বীমার সুবিধা পেতে দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে মৎস্যজীবীদের। আবেদনকারীর নমিনির নাম, সম্পর্ক, ঠিকানা ও বয়স দিতে হবে। সেই সঙ্গে লাগবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য। ইতিমধ্যে আবেদনপত্রের খসড়া খতিয়ে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
এর আগে দীর্ঘ পাঁচ মাস কর্মীদের বেতন না দিতে পারার জন্য খবরের শিরনামে এসেছিল রাজ্যের মৎস্য দফতর।মৎস্যমন্ত্রী কৃষিজাগরনের মাধ্যমে মৎস্য উন্নয়ন নিগমের কর্মীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছিলেন।তবে হাজার অর্থনৈতিক টানাটানির মধ্যেও সাধারণ মৎস্যজীবীদের কথা মাথায় রেখে মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরীর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
Share your comments