ব্রিকসেলস-এর আবিষ্কৃত মাছের এই খাদ্য মৎস্য চাষের জগতে এক সফল আবিষ্কার। মাছের কৃত্রিম খাবারের সাথে সাথে প্রাকৃতিক খাবারেরও প্রভূত পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এই খাবার পরিবেশ বান্ধব এবং মাছ ও চিংড়ির বৃদ্ধি ও জলের জন্যও উপযোগী। জলের ক্ষার/ অক্সিজেন/ কার্বন মাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অতিরিক্ত খাদ্য ব্যবহার করে মাছের অধিক উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ভ্রান্ত ধারণা অনেকেরই আছে। মাছ বা চিংড়িকে পরিমিত খাদ্য দিতে হবে এবং প্রতি সপ্তাহে মাছের বৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত খাদ্য মাছকে দিলে অবশিষ্ট খাদ্য জলে পড়ে জমে যায়, এর ফলে জল ও মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই ‘হিউমিক ফিড ও ফার্ট’- মূলত কেঁচোর মল থেকে ভার্মিকাস্ট উৎপন্ন করে প্রয়োগ করা হয়েছে।
চাষিদের মধ্যে অনেকে মাছের সাথে চিংড়ি-র চাষও করেন। ভারতের জি.ডি.পি-এর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চিংড়ি বা মাছের ৩-৪ শতাংশ অবদান পেয়েছে। মাছের রপ্তানি দিন দিন ক্রমবর্ধমান হচ্ছে। এই খাদ্যটি ব্যবহার করলে মাছের প্রতিরোধ ক্ষমতা, অনাক্রম্যতা এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মাছের সুস্থ থাকার লক্ষণ –
- মাছের দেহ ও আঁশ রুপোলী এবং চকচকে হবে,
- নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করবে,
- প্রতি সপ্তাহে তার বৃদ্ধি হবে।
মাছ মারা যাবার কারণ –
- জলের খারাপ মান,
- ক্ষার, কার্বন বা অক্সিজেনের পরিমাণের তারতম্য,
- হাইজিন সমস্যা,
- ট্রান্সপোর্টেশন স্ট্রেস,
- প্যারাসাইটস, পেস্টের প্রভৃতির আক্রমণ,
- মাছের খারাপ হ্যাচিং,
ইত্যাদির কারণে মাছের মৃত্যু হয়।
মাছ সুস্থ না অসুস্থ চেনার পদ্ধতি –
পশ্চিমবঙ্গে সর্বমোট প্রায় ১২০০-১৩০০ মাছের হ্যাচারি আছে। মাছ কেনার সময় এই হ্যাচারি থেকেই দেখে মাছ নেওয়া উচিত। একটা পাত্রে ১.২ – ১ লিটার জল নিয়ে তাতে লবণ দিয়ে তার মধ্যে মাছকে রেখে দিতে হবে। ২০ মিনিট – এর বেশি মাছ ঠিক থাকলে বা বেঁচে থাকলে বুঝতে হবে মাছটি সম্পূর্ণ সুস্থ। মাছের ডিম এনে বংশবৃদ্ধি করা যায়। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য করতে মাছের ডিম (Seed) ঠিক আছে কি না। এক্ষেত্রে সিড টেস্ট করতে হবে, সিড যদি উন্নতমানের হয় তাহলে সিড ট্রান্সপারেন্সি থাকবে।
মাছের ক্ষেত্রে সতর্কতা -
পুকুরে অনেক সময় গেঁড়ি, গুগলি, শামুক, ব্যাঙ্গাচি হয়, এরা মাছের খাদ্য খেয়ে নেয়, ফলে মাছের ক্ষতি হয়। ব্লিচিং পাউডার, ইউরিয়া প্রভৃতি ব্যবহার করে পুকুরের জল তৈরি করতে হবে, তাহলে শামুক, গুগলি প্রভৃতি পুকুরে হবে না। অনেকে মাছ চাষের ক্ষেত্রে মহুয়ার রস ব্যবহার করেন, তবে মাছের এবং জলের জন্য তা ক্ষতিকর।
পুকুরের দূষিত পরিবেশের জন্য মাছের মড়ক দেখা যায়। অনেক সময় মাছের খাদ্যের জন্য তার বৃদ্ধির হার কমে যায়। এছাড়া জলে জুপ্ল্যাঙ্কটন ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন- এর পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে এবং জুপ্ল্যাঙ্কটন, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন –এর তুলনায় বেশি রাখতে হবে।
কিছু অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট) মাছের অন্ত্রে বসবাস করে, এগুলি মাছের উপকার করে, তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অণুজীবের ভারসাম্য রক্ষিত হলে পুকুরে মাছ সুস্থ থাকবে। মাছের রোগ হলে সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, তবে রোগের পূর্বাবস্থায় ওষুধ দিলে তা মাছের ক্ষতি করে। অনেকের সঠিক জ্ঞানের অভাবে ভুল ওষুধ প্রয়োগ করেন, ফলে মাছের মৃত্যু ঘটে।
হিউমিক ফিড ও ফার্ট’- এর প্রয়োগ –
‘হিউমিক ফিড ও ফার্ট’ সাদা মাছের ক্ষেত্রে একর প্রতি ৬০০ কেজি এবং চিংড়ি মাছের ক্ষেত্রে ১০০০ বর্গমি. তে ২০০-২৫০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
কেমিক্যাল ও ‘হিউমিক ফিড ও ফার্ট’- ব্যাবহারের সুবিধা ও অসুবিধা –
- কেমিক্যাল কালচারে মাটির, জলের এবং মাছের ক্ষতি হয়। এতে জলের ক্ষারের তারতম্য হয়, অনেক সময় মাছ মারা যায়, ফলে চাষির অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
- ‘হিউমিক ফিড ফার্ট’- এর প্রয়োগ করলে জলের প্যারামিটার সঠিক অনুপাতে রক্ষিত হয়, অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট সমস্ত কিছুরই ভারসাম্য বজায় থাকে। মাছের গ্রোথ বৃদ্ধি পায়, স্বল্প খরচে অধিক মৎস্য উৎপাদন হয়, ফলে এতে চাষি লাভবান হয়।
তবে এটি ব্যবহার করলে প্রথম ১ - ১.৫ মাসে জলের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। জলে অ্যালগি আসে এবং ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কম হয়।
Share your comments