প্রতিষ্ঠিত ও নামি বড় চা বাগানগুলির অনেক চা বাগানে আজ জৈব চা চাষের প্রতি আগ্রহ আছে এবং কিছু চা বাগানের আজকে চা পুরোপুরি রাসায়নিক মুক্ত। পশ্চিবঙ্গের মোটামুটি ২৭৩ টির মতো বড় চা বাগান(Tea Estate) রয়েছে যার মধ্যে ৫০ টির মতো চা বাগান সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চা চাষ করে থাকে আবার ১৩টির মত চা বাগান কেমিক্যাল ও জৈব দুটি পদ্ধতিতেই চা চাষ আবাদ করে থাকে। বড় চা বাগান গুলিতে জৈব চা আগ্রহ চাষের ধীরে ধীরে আরো বাড়ছে। আশা করা যায় আগামী দশকে প্রায় ৮৫%চা বাগান পুরোপুরি ভাবে রাসায়নিক মুক্ত হয়ে যাবে। কারণ কিছু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত বাজারে কেমিক্যাল যুক্ত চা এখন অপাংক্তেয় হয়ে গেছে।
কিন্তু পাশাপাশি ক্ষুদ্র চা বাগান গুলি এবং ক্ষুদ্র চা চাষীর সংখ্যা উত্তরবঙ্গে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি হলেও এই চা বাগানগুলিতে জৈব চা চাষের উদ্যোগ খুবই যৎসামান্য । এর কারণ অনুসন্ধান করতে হলে ক্ষুদ্র চা চাষের উদ্যোগ এবং উদ্ভবের কারণগুলিকে একবার দেখতে হবে।মূলতঃ এই চা বাগান গুলি তৈয়ারী হয়েছে কিছু অদক্ষ মালিকদের দ্বারা, এখানে শ্রমিকের অদক্ষতা যেমনি আছে তেমনি চা কে বাজারজাত করার ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান না থাকায় এরা তৃতীয় পক্ষের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সর্বোপরি কম সময়ে অল্প জমিতে অধিক লাভের আশায় এরা জৈব চা চাষে সাহসী হতে পারেনি।
জৈব চা চাষে একটি প্রথাগত ধারণা মানুষের মনে সব সময়ই কাজ করে তা হলো এতে খরচ অনেক বেশি।কিন্তু আদতে তা নয়।
শুরুতে জৈব চা চাষে একটু খরচা বেশি কিন্তু ক্রমান্নযে জৈব পদ্ধতিতে চাষ আবাদ করলে খরচা কমে। তবে একটি বাস্তব সম্মত কারণ রয়েছে সেটি হল সঠিক পদ্ধতিতে জৈব চাষ করার পদ্ধতি অনেকের ক্ষেত্রেই অজানা এবং বাজারে যে সমস্ত জৈব সার ও কীটনাশক পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই হয়,সঠিক শংসাপত্র হীন,কিছু ক্ষেত্রে কেমিক্যাল মেশানো নুতুবা ক্রিয়াশীল নয়। ফলে চাষীদের কাছে এর বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে।তবে বাজারে সঠিক ও ভালো জৈব সার ও রোগ পোকা নিয়ন্ত্রক আছে সেটি চাষীর খুঁজে বের করতে হবে।নইলে আগামী দিনে তাদের চা পাতা কেনার কোনো লোক তারা আর খুঁজে পাবেন না এটি বাস্তব সত্য।
এক্ষেত্রে আশার আলো দেখাতে পারে "ক্ষুদ্র চা চাষী সমবায় ও সংগঠন গুলি"।উত্তরবঙ্গে এদের ছাতার তলে প্রায় ২৫ হাজারের মতো চা চাষীরা রয়েছেন। এরা কিছুটা Tea board এর দ্বারা প্রশিক্ষণ নিয়ে চা চাষ আবাদ করেন। পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ এদের পুরোপুরি না থাকলেও এরা সংগঠিত হয়েছেন তাই জৈব চা চাষে এদের উদ্যোগ থাকলে তা অতি সহজেই সাফল্য লাভ করবেন বড় চা বাগান গুলির মতোই।
অমর জ্যোতি রায়(amarjyoti@krishijagran.com)
Share your comments