একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে বাজার চলতি বেশিরভাগ প্রডাক্টেই এমন কিছু কেমিকাল এবং উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের সৌন্দর্যকে ভিতর থেকে বাড়াতে তো পরেই না, উল্টে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি করে দেয় এবং সবথেকে ভয়ের বিষয় হল বেশিরভাগই এই বিষয়টার দিকে সেভাবে নজর দেন না। ফলে নানাবিধ জটিল ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, কিছু ক্ষেত্রে তো ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।
তাই ত্বককে যদি সুন্দর এবং রোগমুক্ত রাখতে চান, তাহলে একবার এই প্রবন্ধে চোখ রাখতেই হবে। কারণ এই লেখায় প্রতিদিন ব্যবহার হয়, এমন বেশ কিছু কসমেটিক্সের সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যা নানাভাবে স্কিনের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।
১. ডিওডোরেন্ট: বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে ডিওডোরেন্ট তৈরি করতে যে যে উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা অনেকে ক্ষেত্রেই ত্বকের সংস্পর্শে আসা মাত্র ইরিটেশন সৃষ্টি করে, যে কারণে চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে। এই কারণেই তো বেশি মাত্রায় ডিওডোরেন্ট জাতীয় কসমেটিক্স ব্যবহার করতে মানা করেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
২. ব্লিচ ক্রিম: ত্বককে ফর্সা বানাতে অনেকেই ব্লিচ ক্রিম মুখে লাগিয়ে থাকেন। এমন কসমেটিক্স ব্যবহারের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু এমন ধরনের ক্রিম ত্বকের যে কী মাত্রায় ক্ষতি করে থাকে, সে খবর অনেকেই রাখেন না। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্লিচ ক্রিমে উপস্থিত হাইড্রোকুইনোনে নামক একটি উপাদান ত্বকের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র এমন মাত্রায় স্কিনের ক্ষতি করে যে একাধিক ত্বকের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যায়
৩. ট্যালকম পাউডার: বেশ কিছুদিন আগে এক বিদেশি বেবি পাউডার প্রস্থুতকারক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছিল মার্কিন কোর্টে। অভিযোগ উঠেছিল দীর্ঘদিন ধরে সেই বেবি পাউডারটি ব্যবহার করলে নাকি ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিষয়টা কতটা ভয়ানক একবার ভেবে দেখুন! তবে একমাত্র ওই ব্র্যান্ডটি ব্যবহার করলেই যে শরীরের ক্ষতি হতে পারে, এমন নয়। কারণ গবেষণা বলছে যে কোনও ধরনের পাউডার ব্যবহার করলেই হতে পারে নানা ধরনের রোগ। বিশেষত, অ্যালার্জি এবং ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্যও কমতে শুরু করে।
৪. কাজল: চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে কাজল ব্যবহার করেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে তো মনে হয় না। কিন্তু এই প্রসাধনিটি মোটেও চোখের জন্য ভাল নয়। কারণ একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে কাজল বা সুরমা নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কনজিভাইটিস, উভেইটিস, গ্লকোমা, ড্রাই আই এবং কনজাংটিভাল ডিসকালারেশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. লিপস্টিক: ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃ্দ্ধি করতে সিংহভাগ মেয়েই এই প্রসাধনিটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে এই কসমেটিক্সটি নিয়মিত লাগালে ঠোঁট আদ্রতা হারাতে শুরু করে। ফলে লিপসের সৌন্দর্য তো কমেই। সেই সঙ্গে ঠোঁটের মারাত্মক ক্ষতি .
৬. নেইল পলিশ: কাজল এবং লিপস্টিকের পর যে প্রসাধনিটির ব্যবহার সবথেকে বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে, সেটি হল নেইল পলিশ। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে, রং বেরঙের এই প্রসাধনিটি নখ এবং ত্বকের কতটা ক্ষতি করে থাকে! বিশেষত লাল এবং কালো রঙের নেইল পলিশ যদি প্রতিদিন লাগানো হয়, তাহলে তো নখের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে নানাবিধ কেমিকেলের প্রভাবে নখ হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। প্রসঙ্গত, নেইল পলিশে অ্যাসেটোন নামক একটি উপাদান থাকে। এই কেমিকালটি নখকে দুর্বল করে দেয়। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে সৌন্দর্যও কমাতে শুরু করে।
৭.হেয়ার কালার এবং হেয়ার ডাই: এই ধরনের প্রসাধনি থেকে একদিকে যেমন অ্যালার্জির মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি চুল পড়া বেড়ে যাওয়া, ত্বকের প্রদাহ, সারা শরীরে লালা লাল ছোপ, চুলকানি এবং শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। প্রসঙ্গত, অনেক হেয়ার ডাইতে পিফেনাইলেনেডিয়ামাইন নামক উপাদান থাকে, যা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তো বাড়ায়ই, সেই সঙ্গে রিপ্রোডাকটিভ টক্সিসিটি, নিউরোটক্সিসিটি, অ্যালার্জি, ইমিউন টক্সিসিটি এবং নানাবিধ ত্বকের রোগের পথ প্রশস্থ করে।
- Sushmita Kundu
Share your comments