প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী ঔষধ চর্চায় ভেষজ উদ্ভিদগুলি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বেশ কিছু উদ্ভিদ রয়েছে যা ঘরে রাখলে পোকামাকড়, ছত্রাক, রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ হয়। স্নেক প্ল্যান্ট, স্পাইডার, অ্যান্থুরিয়াম ইত্যাদি গাছ তো রাত্রেও আপনাকে অক্সিজেন সরবরাহ করে। আর এই গাছগুলির বিক্রয়মূল্যও বেশ ভালোই। অক্সিজেন বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে এর চাহিদাও কিন্তু তুঙ্গে।
আমাদের চারপাশে এমন বহু গাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যেগুলি ঔষধি গুনে পরিপূর্ণ৷ এদের মধ্যে কয়েকটি গাছ আপনি চাইলে বাড়ির মধ্যে ব্যালকনি, বারান্দা, ছাদে যে কোনও জায়গায় লাগাতে পারেন৷ আর প্রয়োজন মত তা ব্যবহার করতে পারেন আবার কিছু উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিক্রয়ও করতে পারেন। তেমনই কয়েকটি গাছের বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা তুলে ধরা হল এই প্রতিবেদনে৷
বাড়ির টবে সহজে চাষ ঔষধি উদ্ভিদ -
ধনেপাতা (Coriander Leaves) –
একগুচ্ছ গুনে সমৃদ্ধ ওকটি ঔষধি গাছ (Medicinal Herbs). খাবারে স্বাদ বাড়াতে, অথবা স্যালাডে, খাবার গার্নিশ করা থেকে ওষুধ, নানা কাজে ব্যবহৃত হয় এই পাতা৷ এর পাতা সবুজ আকৃতির হয়৷ ফুল সাদা রঙের হয়ে থাকে৷ এর বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativum. অনেকে বাড়িতেই চাষ (Farming at Home) করেন এই গাছ৷ কারণ এটি হতে বেশি জায়গা লাগে না৷ একটা ছোট টবেই আপনার রান্নার কাজের প্রয়োজনীয় ধনেপাতা আপনি ফলাতে পারবেন৷
ধনেপাতার প্রচুর গুন (Benefits of Coriander) রয়েছে৷ এতে রয়েছে ১১ রকমের এসেনশিয়াল অয়েল, প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, কে, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ক্লোরিন, ফাইবার, ক্লোরিন প্রভৃতি৷ দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই পাতাটি৷
পুদিনা (Spearmint) -
ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ৷ বিভিন্নভাবে এটি ব্যবহার করা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পানীয়তে ব্যবহার বেশি৷ রূপচর্চার ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়৷ এই পুদিনা পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় (Benefits of Spearmint). পুদিনা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity Power) বৃদ্ধিতে সাহায্য করে৷
বিভিন্ন গুণে সমৃদ্ধ সম্পন্ন হওয়ায় এর চাহিদাও প্রচুর৷ বাজারেও যেমন এটি সহজলভ্য, তেমন বাড়িতে খুব সহজেই পুদিনার চাষ (Spearmint Farming) করা যায়৷ টবে বা ছাদে এর চাষ করা যেতে পারে৷ হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে ঘরের ভিতরেও এর চাষ সম্ভব। বছরের যে কোনো সময়ে পুদিনার চাষ করতে পারেন, তবে সাধারণত বর্ষার আগে ও পরে চারা রোপন করার নিয়ম। এতে আরও ভালো ফলন পাওয়া যায়।
লেমনগ্রাস (Lemongrass) -
লেমনগ্রাস (Lemongrass) বা লেবু ঘাস খাদ্যে সুগন্ধকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চা, পানীয়তেও বহুল ব্যবহৃত হয় লেমনগ্রাস৷ এর গুনাগুনের (Benefits of Lemongrass) জন্য এবং এটি অর্থকরী হওয়ায় এর চাহিদা এতো বেশি৷ এটি আগে খুব বেশি পাওয়া না গেলেও এখন বাজারে এর দেখা মেলে৷ আপনি চাইলে খুব সহজে বাড়ির ছাদে (Lemongrass Farming), টবে লেবুঘাস বা লেমনগ্রাস চাষ করতে পারেন৷
উষ্ণমণ্ডলীয় কয়েকটি দেশে লেমনগ্রাসের চাষ হয়৷ ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে এর ব্যবহার বহুল পরিমাণে হয়ে থাকে৷ কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশে, অসমে এর চাষ হয়ে থাকে৷ এই লেমনগ্রাসে রয়েছে, ভিটামিন এ, বি ১, বি ২, বি ৩, বি ৫, বি ৬, ভিটামিন সি, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, লোহা, জিঙ্ক৷
আমাদের দেশে প্রায় সবধরণের মাটিতেই লেমনগ্রাসের চাষ হয়। মাঝারি সাইজের টব নিয়ে নিতে হবে এর জন্য৷ তবে মাটিতে যেন কোনওভাবেই জল না জমে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং টবের নীচে একটি ছিদ্র করে দিতে হবে অতিরিক্ত জল নির্গত হওয়ার জন্য৷
মার্চ-এপ্রিল মাস একেবারে সঠিক সময় হলেও, লেমনগ্রাস সারাবছরই চাষ করা যেতে পারে৷ বাজার থেকে শিকড়সহ লেমনগ্রাস কিনে একটা জল ভর্তি পাত্রে এর কাণ্ডগুলি রাখুন৷ দু তিনদিনের মধ্যেই নতুন শিকড় গজাতে শুরু করবে৷ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি টবে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবে৷
তুলসী (Tulsi) –
এই গাছ রাজ্যে তথা দেশে প্রায় ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়৷ এর ঔষধি গুন অতুলনীয়৷ ভারতে বিভিন্ন ধরণের তুলসীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ এই তুলসীতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, এবং ভিটামিন সি এর মতো মূল্যবান উপাদান। এই জাতের তুলসীর তেল, মশার প্রতিরোধক এবং ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও রাম তুলসী, বন তুলসী, কাপুর তুলসী প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের গাছও রয়েছে৷ এগুলির প্রত্যেকটিরও কিছু না কিছু ঔষধি গুন রয়েছে, যার জন্য এই গাছের এতো চাহিদা৷
সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে এর চারা রোপন করা হলেও, তুলসী সারা বছরই চাষ করা যেতে পারে৷ বাড়িতে খুব কম জায়গার মধ্যে গাছ লাগানো যেতে পারে৷ চারা রোপণের ৩ মাস পরে ফলন শুরু হয়। ফুল ফোটার সময়কালে ফসল সংগ্রহ করা হয়। বাড়ির ছাদে, বা টবে সহজেই এই গাছ লাগানো সম্ভব৷
আরও পড়ুন - মাছের শখ রয়েছে? তাহলে মহিলা/যুবকরা এই ব্যবসা করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
নিম চাষ পদ্ধতি:
নিম একটি অভূতপূর্ব ঔষধি গাছ। নিম বহুবর্ষজীবী মাঝারি ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষ। সাধারণত আামদের দেশে বর্ষার শুরুতে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা হয়। তবে এর আগে বা পরেও বীজ সংগ্রহ করা যায় | বেলে, দো-আঁশ মাটিতে নিমগাছ ভালো হয় | গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে | চারা লাগানোর আগে কাণ্ড মূল প্রয়োজনমতো ছাঁটাই করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায় |
আরও পড়ুন - ৫ টি সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা, যা থেকে উপার্জন হবে লক্ষাধিক