আমাদের শরীরে ফুসফুসের কার্যকারীতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের ধূমপানের বদঅভ্যাস ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রদূষণ-এর জন্য বহু মানুষের ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরই নয়, শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ফেঁপরে বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে। ধূম্রপান ও পারিপার্শ্বিক প্রদূষণ-এর কারণে ফুফফুসের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, কখনো কখনো তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। আমাদের মধ্যে অ্যাক্টিভ স্মোকাররা যেমন প্রত্যক্ষভাবে ধূমপানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমন পরোক্ষভাবে অধূমপায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে, তাঁরা কোনোরকম ধূমপানের কারণ ছাড়াই অসুস্থ হয়ে পড়ে, ফলে আবালবৃদ্ধবণিতা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার শিকার হয়। আমাদের এই ব্যস্ত জীবনকালে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির প্রতি আলাদা কোনো যত্ন নিতে পারি না, কারণ এটি আমাদের দেহের ভেতরে অবস্থান করে, তবুও এর যত্নের কথা আমাদের ভাবতে হবে। একটা কথা বলে রাখি ফুসফুসেরকে সুস্থ রাখতে গেলে আহামরি কোনো কাজ করবার দরকার নেই, দরকার শুধু কিছু পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় এবং সরল কয়েকটি ব্যায়াম, ধূম্রপায়ীদের ক্ষেত্রে যেটা সবথেকে বেশী জানা দরকার। সামান্য কিছু সহজলভ্য ফল, সবজি ও মশলা দিয়েই ফুসফুসে জমে থাকা নিকোটিনের টার পরিষ্কার করা সম্ভব। আসুন জেনে নিই কী করবেন?
১) ফলমূল- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন-লেবু, কমলালেবু, মুসুম্বি লেবু, প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ, কারণ এই ফলে থাকে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইবার যা আমাদের বিপাক ক্রিয়ার হার অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় এবং দেহে সৃষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতকে নিরাময়ে সাহায্য করে, তাছাড়া নিকোটিন একধরণের উপক্ষার, এর সাথে লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিডের সংস্পর্শ আসলেই, উপক্ষার প্রশমিত হয়ে যায় এবং ফুসফুসে তা জমে থাকতে পারে না।
২) সবজি ও মশলার তৈরি চা- যাদের ক্ষেত্রে রোজ দামী ফল খাওয়ার অসুবিধা আছে; তাঁরা সহজে লভ্য ও কমদামী “সবজি ও মশলা” দিয়ে একটি চায়ের মতো পানীয় তৈরি করে পান করতে পারেন, এই পানীয়টি তৈরিতে আপনার দরকার ৪০০ গ্রাম কুঁচানো পিঁয়াজ, ও ১ টি টুকরো আদা কুঁচান, আর দু-চামচ হলুদ বাটা, এই তিনটি উপাদানকে একত্র করে ১ লিটার ফুটানো জলে ফেলে মিনিট কয়েক ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে, তারপর সেই পানীয়টি দিনে দুবার পান করতে হবে। হলুদে থাকে কারকিউমিন নামক যৌগ যা আমাদের দেহের মধ্যে জমে থাকা ক্ষতিকারক টক্সিনগুলিকে দেহ থেকে নিষ্কাশিত করে। আদা বমনেচ্ছা থেকে রক্ষা করে, এবং পেঁয়াজ-এর মধ্যে থাকা সালফার আমাদের ফুসফুসের কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে, সুতরাং এই বিষয়টি আমাদের ফুসফুসের ক্ষেত্রে খুব উপকারি।
৩) ব্যায়াম- আমাদের কাছে শরীর সুস্থ রাখার একটি নিখরচার উপায় হল ব্যায়াম। ফুসফুসকে কর্মক্ষম রাখার জন্য আমাদের সহজ একটি ব্যায়াম করতে হবে, এই ব্যায়ামটির নাম ডিপ ব্রিদ বা গভীর শ্বাসক্রিয়া। এই ব্যায়ামটির উপায় হল প্রথমে টান টান হয়ে শুয়ে পড়তে হবে, এবং বাম হাত রাখতে হবে হৃদপিন্ডের উপড় ও ডান হাতটি রাখতে হবে পেটের উপড়। এরপর চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিতে হবে এবং আপনার মধ্যচ্ছদার সাথে সাথে হৃদপিন্ড উঠানামার বিষয়টি অনুভব করতে হবে। এই কাজটি দুটি ভাগে ৫০ টি করে মোট একশো বার করলে ফুসফুস স্বাভাবিক থাকে।
শরীর আপনার, একে সুস্থ রাখার দায়িত্বও আপনার। আমার এই সামান্য কথা মেনে চলে যদি আপনার সুস্থ শারীরিক অবস্থা বজায় থাকে তাহলে এই লেখা ও পরিশ্রম সার্থক হবে।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)
Share your comments