রোজকার ডায়েটে মাছের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ !?

ডায়েট, মাছের, আগাছানাশক, ভিটামিন প্রয়োগ, কুল চাষ, প্রধানমন্ত্রী যোজনা

KJ Staff
KJ Staff

বাঙালিকে মাছ চেনানোর ভুল কাজটা করবো না। আর সেকথা ভেবে এ প্রবন্ধ লেখাও হচ্ছে না। বরং এই লেখা তাঁদের পড়া উচিত, যারা মূলত বেছে বেছে মাছ খান। বেছে বেছে বলার অর্থ হল এ জন্মের কিছু বাঙালি যুবা রয়েছেন যারা সব মাছ খান না। তাঁদের কারও পছন্দ "অনলি" পমফ্রেট, তো কেউ চিংড়ি ছাড়া কিছু মুখে তুলতেই চায় না। তবে এমনও অনেকে আছেন যারা কাঁটা কম মাছ খেতে ভালবাসেন, তাই তাদের পাতে বেশি চোখে পরে হোটেল-রেস্টরেন্টের বিক্রি হওয়া "বোন লেস ফিশ"। মাছ নিয়ে এত কথা এই কারণে বলছি, কারণ সরকারি এবং বেসরকারি ডেটা অনুসারে কম বয়সি বাঙালিদের মধ্যে মাছ খাওয়ার হার ক্রমশ কমছে, বিশেষত মিষ্টি জলের মাছের চাহিদা কমেছে চোখে পরার মতো, যা বেজায় ভয়ের বিষয়! ভয়ের কেন? আসলে গত কয়েক বছরে আমাদের চারিপাশের পরিবেশে যে হারে পরিবর্তন আসছে, যে হারে বাড়ছে দূষণের মাত্রা। তাতে শরীর মারাত্মকভাবে ভেঙে পরছে। এমন পরিস্থিতেত শরীরকে বাঁচাতে যে যে খাবারগুলি সাহায্য করতে পারে, তার একেবারে প্রথমে রয়েছে মাছ। তাই তো বলি বন্ধু, মুখের স্বাদের খাতিরে নয়, বরং দীর্ঘ দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মাছ খাওয়াটা জরুরি। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে মাত্র ২-৩ দিন যদি মাছ খাওয়া যায়, তাহলেই নাকি কেল্লা ফতে! শুধু তাই নয়, আরও একাধিক রোগও দূরে থাকতে বাধ্য হয়, মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন...

১. এনার্জির ঘাটতি মেটে: বেশ কিছু গবেষণার পর একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে শরীরকে চালাতে প্রোটিনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর তাই তো মাছ খাওয়া মাস্ট! কারণ মাছে যে পরিমাণে প্রোটিন মজুত থাকে, তা শরীরে প্রবেশ করার পর এনার্জির ঘাটতি তো দূর করেই, সেই সঙ্গে পেশীর ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

২. ফুসফুস চাঙ্গা হয়ে ওঠে: একেবারে ঠিক শুনেছেন বন্ধু। বাস্তবিকই ফুসফুসকে বাঁচাতে মাছের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে মাছে উপস্থিত পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি, নানাবিধ ক্রনিক ডিজিজের হাতে থেকে ফুসফুসকে যেমন বাঁচিয়ে রাখে তেমনি সার্বিকভাবে লাং-এর কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩. আয়রনের চাহিদা মেটে: শরীরকে নানা রোগের হাত থেকে বাঁচাতে এবং লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন ঠিক রাখতে আয়রনের কোনও বিকল্প নেই। তাই তো শরীরে যাতে এই খনিজটির ঘাটতি কখনও না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর ঠিক এই কারণেই প্রতিদিন মাছ খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে এমনটা করলে শরীরের অন্দরে আয়রনের চাহিদা তো মেটেই, সেই সঙ্গে অ্যানিমিয়া অথবা ক্রনিক ফ্যাটিগ মতো সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: একেবারেই ঠিক শুনেছেন বন্ধু! বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে মাছে উপস্থিত ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। ফলে শরীরের ইতি-উতি জমে থাকা মেদে ঝরে যেতে সময় লাগে না।

৫. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: মাছের শরীরে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের দেহের অন্দরে যাওয়া মাত্র ত্বক এবং চুলের গোড়ায় পুষ্টির যোগান এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে তার প্রভাবে স্কিন টোনের যেমন উন্নতি ঘটতে শুরু করে, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ওমাগ থ্রি ফ্য়াটি অ্যাসিড সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যারা এমন রোগ ভুগছেন, তারা রোজের ডায়েট থেকে মাছকে বাদ দেওয়ার কতা কখনও ভাববেন না যেন!

৬. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: এজেন্সি ফর হেলথ কেয়ার রিসার্চের গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে মাছের শরীরে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যারা সারা দিন কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের রোজের ডায়েটে মাছকে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৭. ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা দূরে পালায়: দিনের পর দিন কি রাত জেগে কাটাতে হয়? তাহলে বন্ধু রোজের ডায়েটে মাছের অন্তর্ভুক্তি মাস্ট! হঠাৎ করে এমন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে কেন, তাই ভাবছেন নিশ্চয়? তাহলে জানিয়ে রাখি বন্ধু একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত মাছ খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মিটতে থাকে, যার প্রভাবে অনিদ্রার সমস্যা দূর হতে সময় লাগে না।

৮. স্ট্রেস এবং ডিপ্রেশনের মাত্রা হ্রাস পায়: বর্তমান সময়ে নানা কারণে মানসিক অবসাদে আক্রান্তের সংখ্যাটা যেন ক্রমাগত বাড়ছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই কম বয়সি। এমন পরিস্থিতিতে মাছ খাওয়া প্রয়োজন আরও বেড়েছে। কারণ স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদ কমাতে মাছের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এক্ষেত্রেও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯. ভিটামিন ডি এর ঘাটতি মেটে: হাড়ের গঠনে এই ভিটামিনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো শরীরে যাতে কোনওভাবেই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে সামুদ্রিক মাছেরা। কারণ এদের শরীরে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে মজুত থাকে ভিটামিন ডি, যা হাড়কে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি নানাবিধ হাড়ের রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।  

১০. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে মাত্র ১-২ দিন মাছ খেলেই আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনদের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, তেমনি স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে অনুষ্টিত রেডিওলজিকাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকার বার্ষিক সভায় এই বিষয একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে যারা নিয়মিত মাছ খেতে থাকেন তাদের ব্রেণের একটি বিশেষ অংশের ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তির দিক থেকে তারা অনেকটাই পিছনে ফেলে দেয় মাছ না খাওয়া মানুষদের।

- Sushmita Kundu

Published On: 31 October 2018, 06:10 PM English Summary: Importance of fish in diet

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters