যার একবার হয়েছে সেই জানে এর কষ্ট। তাই তো সবাই বেঁচে বেঁচে থাকে উকুনের থেকে। কিন্তু তবু কি বেঁচে থাকা যায়? না যায় না! যে কোনও সময়, যে কেউ খপ্পরে পড়তে পারে এই রোগের। তাই তো উকুনের কারণে চুলের বারোটা বেজে যাক এমনটা যদি না চান, তাহলে এই প্রবন্ধে চোখ রাখতে ভুলবেন না যেন! আসলে ভয়টা অন্য জায়গায়। বেশ কিছু স্টাডির পর এই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই যে উকুন বেজায় ছোঁয়াচে। মানে পরিবারের এক জনের হয়েছে মানে তা অল্প সময়েই কিন্তু ছড়িয়ে পরতে পারে পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যে। আর এমনটা হলে সারা মাথা চুলকাতে চুলকাতে জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠতে যে সময় লাগে না, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই! উকুনকে চিকিৎসা বিজ্ঞান "পেডিকুলাস হিউমেনাস ক্যাপিটিস" নামে চিনে থাকে। এই রোগ আসলে এক ধরনের প্যারাসাইটসের কারণে হয়ে থাকে। এই প্রাণীটির ডিম যখন কোনও কারণে চুলের অন্দরে জায়গা করে নেয়। তখন ধীরে ধীরে সেই প্যারাসাইট সারা মাথায় বাসা বানিয়ে ফেলে। তারপর সাম্রাজ্য বিস্তার করতে করতে ছড়িয়ে পরে আরও অনেকের মাথায়। কিন্তু প্রশ্ন হল উকুনের প্রকোপ থেকে নিস্তার পাওয়া যায় কীভাবে? এই ধরনের ত্বকের রোগ থেকে বাঁচতে আজকের দিনে বেশ কিছু কার্যকরী চিকিৎসা আছে বৈকি। কিন্তু এই প্রবন্ধে সেই সব আধুনিক চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হবে না। বরং আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে এমন কিছু ঘরোয়া চিকিৎসার উপর, যা নিমেষে উকুনের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, উকুনের ঘরোয়া চিকিৎসা করতে সাধারণত যে যে উপাদানগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেগুলি হল -
১. টি ট্রি অয়েল: এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান নিমেষে উকুনকে মেরে ফেলে। সেই সঙ্গে উকুনের ডিমকেও ধ্বংস করে। ফলে পুনরায় এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। এক্ষেত্রে রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে পরিমাণ মতো টি-ট্রি অয়েল নিয়ে স্কাল্পে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করতে হবে। তারপর একটা টাওয়াল বালিশের উপর রেখে শুয়ে পরতে হবে। পরদিন ঘুম থেকে উঠে ভাল করে চুলটা আঁচড়ে নিলেই দেখবেন কেল্লাফতে!
২. মাউথ ওয়াশ: একেবারে ঠিক শুনেছেন বন্ধু! বাস্তবিকই উকুনের প্রকোপ কমাতে মাউথওয়াশ দারুনভাবে কাজে আসে। আসলে এই তরলটির অন্দরে উপস্থিত ইউক্যালিপটাস অয়েল এবং থায়ামল, অল্প সময়ে উকুনদের মেরে ফেলে। ফলে সমস্যা কমতে সময় লাগে না। এখন প্রশ্ন হল এই রোগের চিকিৎসায় কীভাবে কাজে লাগাতে হবে মাউথ ওয়াশকে। এক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে মাউথ ওয়াশ নিয়ে ভাল করে স্কাল্পে লাগিয়ে একটা টাওয়াল দিয়ে চুলটা বেঁধে নিতে হবে। এরপর ২ ঘন্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফলতে হবে চুলটা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে এক বার করে এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই দেখবেন আর কখনও উকুন ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
৩. অলিভ অয়েল: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যদি অল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল নিয়ে চুলে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করা যায়, তাহলে উকুনের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। কারণ এই তেলটির অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান নিমেষে উকুনদের মেরে ফেলে। ফলে সমস্যা কমতে সময় লাগে না।
৪. নারকেল তেল: অলিভ অয়েলের মতো নারকেল তেলও চুলকে পিচ্ছিল করে তোলে। ফলে চুলের ফাঁকে ফাঁকে জায়গা করে নেওয়া উকুনেরা ঝরতে শুরু করে। সেই সঙ্গে উকুনের ডিমও ঝরে যায়। ফলে এমন ধরনের ত্বকের রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিয়ে তা গরম করে ধীরে ধীরে স্কাল্পে লাগাতে হবে। তারপর ২ ঘন্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফলতে হবে চুলটা। এমনটা প্রতিদিন করলে দেখবেন উকুনেরা মরতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে পুনরায় এমন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যাবে কমে।
৫. নিম তেল: ডাক্তাররা অবাক! এই আশ্চর্য্য পণ্য দিয়ে তিনি 4সপ্তাহে 23কেজি কমিয়েছেন ডাক্তাররা অবাক! এই আশ্চর্য্য পণ্য দিয়ে তিনি 4সপ্তাহে 23কেজি কমিয়েছেন ডাক্তাররা অবাক! এই আশ্চর্য্য পণ্য দিয়ে তিনি 4সপ্তাহে 23কেজি কমিয়েছেন
৫. নিম তেল: এতে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ নিমেষে উকুনকে মেরে ফেলে। সেই সঙ্গে ডিমকেও ধ্বংস করে। সেই সঙ্গে স্কাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো নানাবিধ ত্বকের রোগের চিকিৎসায় এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নিম তালকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কয়েক ফোঁটা নিম তেলের সঙ্গে পরিমাণ মতো শ্যাম্পু মিশিয়ে বারে বারে চুল ধুতে হবে। সেই সঙ্গে চুল ধোয়ার পর প্রতিদিন চুল আঁচড়াতে হবে। এমনটা করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে।
সবশেষে একটা কথাই বলতে চাই বন্ধু, এই প্রবন্ধে আলোচিত ঘরোয়া উপায়গুলিকে কাজে লাগালে যে শুধু উকুনের প্রকোপ কমে, তা নয়, সেই সঙ্গে চুল এবং স্কাল্পের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। তাই তো বলি যদি অপূর্ব সুন্দর চুলের অধিকারী যদি হতে চান, তাহলে এই প্রকৃতিক উপাদানগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিয়মিত চুলের পরচর্যা করতে ভুলবেন না যেন!
- Sushmita Kundu(sushmita@krishijagran.com)
Share your comments