সাধারণত প্রায়ই আমরা একটা কথা শুনে থাকি, জল আমাদের সুস্বাস্থ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জলই জীবন। কিন্তু কেন? আমাদের শরীরের ওজনের ৬০ শতাংশ অংশ জুড়ে রয়েছে জল। মানব দেহের বিভিন্ন অংশে জল বর্তমান। ব্রেনে-৭৫ শতাংশ, রক্তে-৮৩ শতাংশ, হার্টে-৭৯ শতাংশ, অস্থিতে-২২ শতাংশ, পেশিতে-৭৫ শতাংশ এবং কিডনিতে-৮৩ শতাংশ। শরীরের জলের যোগান হয়ে থাকে প্রধানত পানাহারের মাধ্যমে। কিন্তু খাদ্যের মাধ্যমেও কিছু পরিমাণ জল শরীরের মধ্যে সরবরাহ হয়ে থাকে। যার পরিমাণ প্রায় ২০-৩০ শতাংশ।
প্রতিদিন জল পানের পরিমাণ সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম দেড় থেকে দু’লিটার জল সঠিকভাবে পান করা উচিত। বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৬-৮ গ্লাস অর্থাৎ ২-২.৫ লিটার জল পান করলে ভালো হয়। কিন্তু অতি পরিশ্রম ও গরম পরিবেশের মধ্যে থাকলে, শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘামের মাধ্যমে জল নিঃসরণ হয়। সেক্ষেত্রে একটু বেশি জল খাওয়া দরকার, এছাড়া জল
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে, শরীরের সঠিক হাইড্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক কার্যকলাপ ও উষ্ণ পরিবেশে আমাদের শরীর ঘামের মাধ্যমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। শারীরিক কার্যকলাপের উৎসাহ বৃদ্ধি করে।
    ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে জল অপর্যাপ্ত জল পানের ফলে আমাদের শরীর ডিহাইড্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে, নানারকম স্কিন প্রবলেম, চুলের সমস্যা দেখা দেয়, এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই পর্যাপ্ত জল পান করে এগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে। কিডনি সতেজ রাখে জল কিডনি আমাদের শরীরের জলীয় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। মূলত প্রস্রাবের মাধ্যমে। ব্রেনে থাকা পিউটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ভেসপ্রেসিন হরমোন কিডনির উপর কাজ করে, এই প্রস্রাবের পরিমাণ নির্ধারণ করে। আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করি, তাহলে আমাদের শরীরে থাকা দূষিত পদার্থগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়ে যায় ও শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে, শরীর কোনও কারণে ডিহাইড্রেশন হলে কিডনি স্টোন ও পলিসিস্টিক কিডনি রোগগুলো দূরে রাখা যায়।
    চোখের ক্ষেত্রে জলের ভূমিকা মুখ ও নাকের সঙ্গে সঙ্গে জল চোখকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় চোখে শুকনোভাব চলে আসে। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে, চোখের ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি বা চোখের জল নিঃসরণের মাধ্যমে এই ড্রাইনেস কমে যায়। এছাড়াও অন্যান্য কিছু উপকারিতা যেমন- ১) ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণ করা। ২) শরীরে মিনারেলসের পরিমাণ ঠিক রাখে। ৩) অ্যালকোহল নেওয়ার পর হ্যাংওভার কমাতে সাহায্য করে। ৪) বেশি পরিমাণ জল পান করার ফলে খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে যায় ফলে, শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ৫) মুখ, চোখ, নাক আর্দ্র রাখে ও দাঁত আর মুখ সুস্থ ও পরিষ্কার থাকে।
    আবার জল যদি সঠিক ভাবে পরিশোধিত না হয়, সেক্ষেত্রে জলের মধ্যে দিয়ে নানা রকমের রোগ বহন হতে পারে যেমন- টাইফয়েড, এন্টেরিক ফিভার, হেপাটাইটিস-এ, কলেরা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। এছাড়াও জলের মধ্যে কিছু ক্ষতিকারক মিনারেল থাকতে পারে যেমন- আর্সেনিক, লেড, হেভি মেটাল, ফ্লুরাইড যার জন্য ফ্লুরোসিসের মতো রোগ দেখা দিতে পারে। তাই পরিশোধিত জলপান করাও খুব প্রয়োজন। সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
- Sushmita Kundu
                
                    
                    
                                        
                        
                        
Share your comments