সুপ্রাচীন কাল থেকেই আমরা জানি যে কোন জাতির আধুনিক সভ্যতার আশ্রয় স্থল হলো নদী। আমাদের দেশ ও রাজ্যর প্রথম ও প্রধান শহর ও বন্দর গুলোও আজও কোনো না কোনো নদীর কিনারে উত্তরবঙ্গেও এর ব্যতিক্রম নয়।আধুনিক শিলিগুড়ি ও মালদা শহর মহানন্দা নদীর ধারে,জলপাইগুড়ি তিস্তা নদীর ধারে,কোচবেহার তোর্সা ও আলিপুরদুয়ার কালজানি নদীর ধারে।উত্তরবঙ্গে ছোট বড় মিলিয়ে 13 টি নদী রয়েছে।যার মধ্যে তিস্তা,তোর্সা,জলঢাকা, মহানন্দা,রায়ডাক, সংকোষ, মূর্তি, ধরলা, তালমা, মেচি, ফুলহার, ডুডুয়া, ডাহুক অন্যতম।
এই নদী গুলির বর্তমান অবস্থা ঠিক কেমন এটা জানতে হলে উত্তরবঙ্গের মানুষএর জীবনযাত্রার ইতিহাস,সাংস্কৃতিক পটভূমি, ও অথনৈতিক পরিকাঠামোর দিকে নজর দিতে হবে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থনৈতিক পরিকাঠামো যা অনেকাংশে এই নদী গুলির উপর নির্ভর।এইসব নদী গুলোর ধরে গড়ে ওঠা বসতির উর্বর জমি গুলি থেকে বিভিন্ন শাক সবজি ও অনন্যা ফসল এবং ছোট বড় চা শিল্পের সেচ ব্যবস্থার এখনো প্রধান মেরুদন্ড।।কিন্তু কালের নিয়মে বিশ্ব উষ্ণায়ন এর প্রভাবে ও বিদ্যুৎ এর প্রয়োজনে তিস্তার, জলঢাকা,রায়ডাক, মহানন্দা কিংবা মানসাই নদীর জল প্রয়োজনের তুলনায় কমতে কমতে বেশিরভাগ সময় নদীগুলোতে বালুচর ছাড়া অন্য কোনো দেখা যায় না।যেইসব মানুষ যারা নদীর উপর কেবল নির্ভরশীল ছিলো(মৎস ধরা, পশুপালন ও কৃষি) তারা আজ বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।তারা আজ শুধুই শহরের শ্রমিক।
উত্তরবঙ্গের ট্রেন গুলি যেগুলো দিল্লি, মুম্বাই, মাদ্রাস,চেন্নাই থেকে যায় আসে তা একবার নজর দিলেই বোঝা যায় ব্যাপারটা।আমাদের দেশে নদী কে পূজা করা হয় মায়ের রূপে।গানের ভাষায়"ও মা পতিত পাবনি গাঙে",,,কিন্তু আমাদের এই সব শহর ও সভ্যতা তাকে দিচ্ছে যত রকমের আবর্জনা(প্লাস্টিক, কলকারখানার ফেলে দেওয়া জিনিস)।ফলে নদী গুলি ধীরে ধীরে তার নিজস্বতা হারিয়ে একদিন হয়তো হারিয়েই যাবে।আজ উত্তরবঙ্গের নদীগুলোতে আর আগের মতো বিভিন্ন স্বাদের মাছ, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি পাওয়া যায় না।নদীর জলগুলো ধীরে ধীরে ও পশু ও প্রাণীর পানের অনুপযুক্ত হয়ে যাচ্ছে।এর একটি কারণ হলো পাহাড় কিংবা সমতলে নদীর ধারে অনেক জায়গায় কৃষি ক্ষেত্র ও চা বাগানে মাত্রারিক্ত কীটনাশক বিষ এর ব্যবহার এবং এর বিশাল একটা প্রভাব নদীর এইসব জলজ প্রাণীর উপর পড়ছে।এই নদী গুলিকে কৃষির সেচ এর কাজে সরকারি ভাবে অনেক জায়গায় বেবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে কতটা সাফল্য পেয়েছে সেটা প্রশ্ন বোধক চিহ্নের মধ্যে রয়েছে?!শুধুমাত্র হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের কোষাগার ফাঁকা করেছেন কিছু শিক্ষিত বেক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা।আশা করি এই নদীর গুলিকে রক্ষা করতে দেশ ও রাজ্য নুতুন ভাবে ভাবনা শুরু করবে যে ভাবনা গুলো কেবল মাত্রা নদীকে রক্ষা করবে না, নদীর সাথে যেসকল প্রাণিকুল রয়েছে সেগুলোকেও রক্ষা করবে।।
- অমরজ্যোতি রায়
Share your comments