শরীর নামক ইঞ্জিনটাকে চালাতে যে যে উপাদানগুলির প্রতিদিন প্রয়োজন পরে তার অধিকাংশই মজুত রয়েছে রাঙা আলুতে। যেমন ধরুন-ফাইবার, ভিটামিন সি, এ, ই, কে, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং আরও কত কি! আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই সবকটি উপাদানই নানাভাবে শরীরের গঠনে এবং বিবিধ রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন ধরুন -
১. দেহের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা কমায়: নানা কারণে অনেক সময়েই আমাদের দেহের অন্দরে ইনফ্লেমেশনের মাত্রা বেড়ে যায়। সে সময় যদি প্রদাহ কমান সম্ভব না হয়, তাহলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি তো হয়ই, সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তো এ বিষয়ে সাবধান থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্ন হল সাবধান থাকবেন কীভাবে? এক্ষেত্রে প্রতিদিনের ডায়েটে জায়গা করে দিতে হবে রাঙা আলুকে, তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে! আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে উপস্থিত একাধিক অ্যান্টি-ইনফেলেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে প্রদাহের মাত্রা কমতে সময় লাগে না। ফলে শরীরের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
২. ভিটামিন বি৬-এ চাহিদা মেটায়: এই ভিটামিনটি শরীরে ফরস্থিত একাধিক ক্ষতিকর কেমিকেলের প্রভাবকে কমিয়ে দেয়। ফলে একাধিক ডিজেনারেটিভ ডিজিজ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্য়েরও উন্নতি ঘটায়। এমনটা হওয়ার কারণে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং একাধিক হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৩. মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে: রাঙা আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। এই খনিজটি আর্টারি এবং হার্টের পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্ট্রেস কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত একাটি কেস স্টাডি অনুসারে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় গত এক দশকে স্ট্রেস সম্পর্কিত রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পয়েছে। তাই আপনার শরীরকে ছোঁয়ার আগে স্ট্রেসকে আটকে দিন, না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
৪. ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখে: আই সি এম আর-এর প্রকাশ করা রিপোর্ট আনুসারে আগামী ৩ বছরের মধ্যে আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৭ লাখ মানুষ নতুন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হবেন। আর এই সংখ্যাটা বছর বছরে বাড়তেই থাকবে। এমন অবস্থায় সাবধান না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ! তাই তো বাজারের থলিতে রাঙা আলুকে স্থায়ী সদস্যপদ দেওয়াটা মনে হয় মাস্ট! কারণ এই সবজিটিতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড এবং ভিটামিন এ ক্যান্সার রোগকে আটকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই উপাদানগুলি দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
৫. অ্যাস্থেমার প্রকোপ কমায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে কয়েক দিন রাঙা আলু খাওয়া শুরু করলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক মতো হতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাস্থেমার প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তাই যারা এমন ধরনের রোগে ভুগছেন তারা মিষ্টি আলুকে সঙ্গী বানাতে ভুলবেন না যেন! ১০০ কেজি থেকে ৬৪ কোজি, মাত্র ৩০ দিনে ১০০ কেজি থেকে ৬৪ কোজি, মাত্র ৩০ দিনে ডায়েট বা জিম না করে ওজন কমানোর সঠিক রাস্তা! ৪ সপ্তাহে ঝরবে ওজন- আরও...
৬. ওজন বৃদ্ধি পায়: আপনি কি বেজায় রোগা? তাহলে রোজের ডেয়েটে মিষ্টি আলুকে রাখতে ভুলবেন না যেন! কারণ নিয়মিত এই সবজিটি খেলে শরীরে কমপ্লেক্স স্টার্চ, ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বৃদ্ধি পেতে সময় সাগে না।
৭. ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে: স্বাদে মিষ্টি হলেও রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এই সবজিটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে একেবারে নিচের দিকে রয়েছে রাঙা আলু। তাই এই সবজিটি খাওয়া মাত্র শরীরের অন্দরে সুগারের মাত্রা তো বাড়েই না, উল্টে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
৮. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে: মানব মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নার্ভ সেলগুলি নিজেদের মধ্যে যত সুন্দরভাবে সিগনাল আদান প্রদান করবে, তত ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে বাড়বে বুদ্ধি, মনোযোগ এবং মনে রাখার ক্ষমতাও।
৯. ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর করে: দাঁত এবং হাড়কে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি হজম ক্ষমতার উন্নতিতে এবং একাধিক সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে এই ভিটামিনটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে।
১০. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: প্রচুর মাত্রায় ফাইবার থাকার কারণে নিয়মিত এই সবজিটি খেলে পাচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। সেই সঙ্গে কনস্টিপেশনের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে। তাই হে খাদ্য়রসিক বাঙালি, গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় যদি জর্জরিত থাকেন,তাহলে এই সবজিটির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে সময় নেবেন না যেন!
- Sushmita Kundu
Share your comments